ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্ন পূরণে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৬ মার্চ ২০১৬

স্বপ্ন পূরণে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ শুরুতেই দুঃসংবাদ। ইনজুরিতে পড়ে গেছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অনুশীলন করতে গিয়ে চোট পেয়েছেন। আজ ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে খেলা তাই সংশয়ে পড়ে গেল সাকিব! আর দেশ সেরা এ অলরাউন্ডারকে ছাড়া এমন একটি ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। ভারত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলো। ফাইনালে জিতে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ দলে শুরুতেই দুঃসংবাদ যুক্ত হয়ে গেল। যা বাংলাদেশকে ম্যাচে নামার আগেই পিছিয়ে দিল। অবশেষে এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এরপরই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এশিয়া কাপ টি২০র ফাইনাল ম্যাচ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রাত সাড়ে সাতটায় শুরু হবে ম্যাচ। কিন্তু সেই ফাইনাল ম্যাচ যেন হয়ে গেল ফ্যাকাশে! মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সাকিবহীন বাংলাদেশ দল কল্পনা করা যায়! তবুও আশা থাকে। স্বপ্ন বেঁচে থাকে। সেই স্বপ্ন নিয়েই আজ নামবে বাংলাদেশ। যেখানে শেষ পর্যন্ত শত অসুবিধার পরও হয়তো সাকিব খেলে ফেলতে পারেন এবং বাংলাদেশও ম্যাচ জিতে যেতে পারে। ক্রিকেটে কোন কিছুই যে অসম্ভব নয়! তবে সমস্যা একটি জায়গাতেই, সাকিব খেললেও কি তার শতভাগটা দিতে পারবেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ভারতকে ফেবারিট বলে দিয়েছেন। ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি আগেই বলেছেন, ‘ফাইনালে কেউ ফেবারিট নয়। দুই দলেরই জয়ের সম্ভাবনা ৫০-৫০।’ কিন্তু সাকিব যদি না থাকে, তাহলে ম্যাচে নামার আগেইতো দুর্বল হয়ে পড়বে বাংলাদেশ। যে দুর্বলতা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদেরও ঘিরে ধরতে পারে। তাতে করে মানসিকভাবে যে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ, সেটিতেও প্রভাব পড়বে। আর সেই প্রভাবে হারও হতে পারে। ভারত এমনিতেই টি২০তে শক্তিশালী দল। র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। আর বাংলাদেশ হচ্ছে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বর দল। র‌্যাঙ্কিং দিয়ে কোনকিছুই এখন আর বিবেচনা হচ্ছে না। বাংলাদেশ যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে পেছনে ফেলে ফাইনালে খেলছে। র‌্যাঙ্কিং কোন হিসেবের মধ্যে না পড়লেও ক্রিকেট যে শক্তির খেলাও। আর সেই শক্তিতে যে ভারত নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে। মাশরাফি যা বলেছেন, তাতে তার কথায় দাঁড়ায়, ‘এখনও শেখার অনেক বাকি।’ সেই শেখার আরেকটি ম্যাচ আজ বাংলাদেশের হয়ে যেতে পারে। শেখার জন্য খেলা মানেই হচ্ছে হার। আর জয়ের জন্য খেলা মানেই হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরশ বুলিয়ে দেয়া। বাংলাদেশ কি পারবে আজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে? আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মানে ম্যাচও জয় ধরা দিতে পারে। মাশরাফি ফাইনাল ম্যাচকে অন্য ম্যাচগুলোর মতোই মনে করছেন। বলেছেন, ‘এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ। অবশ্যই এটা ফাইনাল, ফ্লেভার আলাদা হবেই। তবে আমরা অন্য সব ম্যাচের মতোই দেখছি। নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই। গত ৩ ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলতে চাই।’ সঙ্গে ভারতের শক্তি যে ব্যাটিং তাও যোগ করেছেন, ‘দেখুন, ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কোন প্রশ্নই নেই। ওদের টপ ৬ ব্যাটসম্যানই বিশ্বমানের, বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি২০তে। টেস্টেও অনেকেই আছেন। কোন সন্দেহ নেই যে সুনির্দিষ্ট কোন জায়গায় আটকানোর সুযোগ নেই। প্রথম ওভার থেকে ২০ ওভার পর্যন্ত ভাল বোলিং করতে হবে। ওরা অবশ্যই চার্জ করবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব মিনিমাইজ করা যায়। সুতরাং সুনির্দিষ্ট কোন জায়গায় তাকিয়ে নেই। তবে এই ধরনের ম্যাচে প্রথম ৬ ওভার বা শেষে ড্যামেজগুলো হয়। সেদিকে ফোকাস বেশি থাকবে।’ ভারত সবদিক দিয়েই এগিয়ে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং। তবে বাংলাদেশও এগিয়ে। ব্যাটিং ভাল। বোলিংটাও দুর্দান্ত। ফিল্ডিংয়ে সমস্যা আছে। তবে এ তিন বিভাগ ছাড়াও আরও অনেক জায়গা আছে, যেখানে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশই। সেই জায়গাগুলো কি মাশরাফি নিজেই তা জানাচ্ছেন, ‘আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি দর্শক। সবসময়ই ছিল, এখনও আছে। দর্শক না থাকলে আমরা এতটা অনুপ্রাণিত হতাম না। আমাদের ক্রিকেট ওই পর্যন্ত আসার পেছনে জনসাধারণের অনেক অবদান। অনেক ত্যাগও আছে। এটা আমাদের জন্য ভাল একটি সুযোগও। আমরা যদি ভাল খেলতে পারি, ভাল কিছু করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সবাই খুশি হবে। আমাদের জন্য তাই দারুণ সুযোগ।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে সবার আবেগ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আমজনতা। সেই আবেগের ম্যাচও আজ। জিতলেই প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলবে বাংলাদেশ। সেই আবেগের প্রতিদান আজ মিলবে? মাশরাফি বলেছেন, ‘আবেগ থাকা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, তারা সব সময়ই এরকম সুযোগ পায় না। তারপর আবার দেশের মাটিতে খেলা। আর রবিশাস্ত্রী যেটা বলেছেন, উনাদের জন্য হয়তো আর দশটা ম্যাচের মতো নেয়া সহজ। কারণ এই ধরনের টুর্নামেন্টে অনেকবারই তারা ফাইনাল খেলেছে, বিগ হাইপ ম্যাচ খেলেছে। তাদের জন্য যতটা সহজ, আমাদের জন্য আর দশটা ম্যাচের মতো নেয়া অতটা সহজ নয়। তারপরও চেষ্টা করছি যতটা নরমাল থেকে ক্রিকেট খেলা যায়।’ ভারতকে আসলেই হারানোর বাস্তব সম্ভাবনা কতটুকু? এ প্রশ্নও উঠছে। মাশরাফি শক্তির জায়গাগুলো দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, সম্ভব, ‘শক্তির জায়গাগুলো বলতে, আমাদের বেশ ক’জন তরুণ ক্রিকেটার আছে। তারা যে শধু সম্ভাবনাময়, তাই নয়। সেই সম্ভাবনাকে তারা কাজে লাগাতে পারছে। এটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ভারত-বাংলাদেশের ফাইনাল ম্যাচে কিন্তু ভারত পরিস্কার ফেবারিট। এটা সবাই জানে। এখানে আলাদা করে চিন্তা করার সুযোগ নেই। আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি। টি২০তে এখনও আমরা সে রকম ক্রিকেটার গড়ে তুলতে পারিনি যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। গত দুটি ম্যাচ আমরা দল হিসেবে খেলে জিতেছি। এই মুহূর্তে আমাদের দলীয় একতা দারুণ। সেটাকেই রাখতে চাই। আর অবশ্যই খুব ভাল সুযোগ, দর্শক, মাঠ, ড্রেসিং রুম, সব আমাদের পক্ষে।’ সব পক্ষে আছে। আর তাই জেতার স্বপ্নও আছে। কিন্তু এ শিরোপা জেতার স্বপ্নে সঙ্গী হয়ে গেল শেষ মুহূর্তে সাকিবের চোট পাওয়ার দুঃসংবাদও।
×