ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শিশুকন্যা শিলিগুড়ি সেফহোমে পুলিশ হেফাজতে

দীপালি ও তপতির স্বামী শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ভারতে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ মার্চ ২০১৬

দীপালি ও তপতির স্বামী শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ভারতে গ্রেফতার

সমুদ্র হক ॥ অবশেষে ভারতের দার্জিলিং জেলার গ্রামে আটক হলো বাংলাদেশের রাজ্য চন্দ্র কর্মকার, বাবলু কর্মকার। যারা বাংলাদেশে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে ফাঁকি দিয়ে তিন কন্যাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। ফোনে বলেছিল, ওই তিন কন্যাকে বিক্রি করে পুনরায় বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন ২৯ ফেব্রুয়ারি সোমবারের দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হলে ভারতীয় দূতাবাসের দৃষ্টিতে পড়ে। ভারতে জরুরী মেসেজ পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ উল্লিখিত দুই ব্যক্তিসহ তাদের পরিবারের আরও কয়েক সদস্যকে গ্রেফতার করে তিন শিশুকে পুলিশের হেফাজতে নেয়। এই ঘটনার অনুসন্ধানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে এসেছে। শনিবার দুপুরে তাদের সকলকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে চালান করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত বাকি সদস্যরা হলো রাজ্য কর্মকার ও বাবলু কর্মকারের বাবা কালিপদ কর্মকার, মা কাঞ্ছি রানী কর্মকার, ভাই কৃষ্ণ কর্মকার ও তার স্ত্রী নূপুর কর্মকার। তিন শিশুকে বর্তমানে দার্জিলিং সেফ হোমে রাখা হয়েছে। এর আগে বগুড়ায় গ্রাম ধাওয়াকোলার দীপালি রানী কর্মকার ও তার জা তপতি রানী কর্মকার সাংবাদিকদের জানায়Ñ তাদের স্বামী যথাক্রমে রাজ্য চন্দ্র কর্মকার ও বাবলু কর্মকার এবং শ্বশুর-শাশুড়ি নির্যাতন করত। তাদের অপরাধ: দীপালির দুই কন্যা রিংকি কর্মকার (৮) ও টুসু কর্মকার (৪) এবং তপতির কন্যা পিংকি কর্মকারের (৫) প্রসব হওয়া। কেন কন্যাসন্তান জন্মাল এই অপরাধের সঙ্গে যোগ হয় কত বেশি যৌতুক ও উপঢৌকন নেয়া যায়। এ জন্য হরহামেশাই নির্যাতন চলত দীপালি ও তপতির ওপর। দীপালি ও তপতিকে ভারতে যাওয়ার কথা বললে তারা রাজি না হওয়াও ছিল আরেক অপরাধ। বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা। অনেক আগেই রাজ্য চন্দ্ররা নিজেদের বাড়ি বেঁচে দিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকা শুরু করে। গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি পাশের গ্রামে অষ্টপ্রহরে যাওয়ার কথা বলে তিন কন্যাকে নিয়ে প্রথমে শ্বশুর-শাশুড়ি পরে তাদের স্বামী কৌশলে ঘর থেকে বের হয়। তারপর ভারতে গিয়ে ফোনে জানায় কন্যাত্রয়কে বেঁচে দিয়ে তারা বিয়ে করবে সেই ব্যবস্থা পাকা হয়েছে। বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানার পর পুলিশের অভিযান চলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া থানা এলাকার এক বাড়িতে হানা দিয়ে প্রথমে গ্রেফতার করে রাজ্য চন্দ্র কর্মকার ও তার বাবা কালিপদ কর্মকারকে। তিন কন্যাকেও সেখানে পাওয়া যায়। পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয় শিশুদের। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বাকিদেরও সন্ধান মেলে। গভীর রাতে কিছুটা দূরে এক বাড়িতে পাওয়া যায় বাকিদের। গ্রেফতারকৃতরা হিলি সীমান্ত দিয়ে ওপারে পৌঁছার পর ট্রেনযোগে দার্জিলিং যায়। সেখানে তারা শিলিগুড়ি মহকুমার রানাপানি ঘোষপাড়ায় পরিচিতজনের বাড়িতে ওঠে। রাজ্য চন্দ্র, বাবলু ও তাদের বাবার সঙ্গে স্থলবন্দরের এ দেশীয় দালাল ও ওপারেও ভারতীয় দালালদের সঙ্গে সখ্য আছে। উভয় দেশের সীমান্ত অপরাধীদের সঙ্গেও দেনা-পাওনার সম্পর্ক আছে। সূত্র জানায়, এই মাধ্যমটির বড় একটি র‌্যাকেট নারী ও শিশু পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। রাজ্য চন্দ্রের ছোট ভাই রতন কর্মকার কিছুদিন আগে ভারতে গিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এর পরই রাজ্য কর্মকার ও বাবলু কর্মকার তাদের বাবা-মা অপরাধ নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়ে। দীপালি ও তপতিকেও তারা ভারতে পাঠাতে চেয়েছিল এই অপরাধ নেটওয়ার্কে যোগ দিতে। দীপালি ও তপতি রাজি না হলে তাদের ওপর খ—গ নেমে আসে। নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সবশেষে দু’জনের স্বামী সন্তানদের নিয়ে ভারতে চলে যায়। সঙ্গে যায় শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই ও ভাইবৌ। তারা পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে ভারতে গেছে। ফাঁসিদেওয়া থানা সূত্র জানায়, সকলের পাসপোর্টে ছ’মাসের করে ভিসা এন্ট্রি করা আছে। তবে এই ভিসা আসল কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর কারণ রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু এতটাই চতুর যে প্রথমে ওরা নিজেদর প্রমাণ করে ধোয়া তুলসিপাতা। পরে সবই বেরিয়ে আসে। দীপালি কর্মকার বর্তমানে বাবারবাড়ি টাঙ্গাইলের সখিপুরে ও তপতি তার বাবারবাড়ি চান্দাইকোনায়। দীপালির বড় ভাই কৃষ্ণ কুমার জানালেন, তার বোনের ও বোনের জায়ের উদ্ধার করা তিন কন্যাকে সেফহোম থেকে দেশে আনার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ফোনে জানিয়েছেন।
×