ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতকে হারাতেই মাঠে নামছে মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ মার্চ ২০১৬

ভারতকে হারাতেই মাঠে নামছে মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ চারবছর আগের এশিয়া কাপের ফাইনালের কথাটি মনে আছে? জয়ের এত কাছে গিয়েও মাত্র ২ রানে হারের কষ্ট এখনও জ্বালা দেয়। সাকিব-মুশফিকরা সে কি কেঁদেছেন! সেই চিরন্তন ছবি এখনও সবার মনে দাগ কেটে আছে। আবারও ঘুরে ফিরে সেই দিন এসেছে। মাঝখানে একটি এশিয়া কাপ বাদ দিয়ে আবারও বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলছে। প্রশ্ন তাই উঠছে, এবার কি সুখের কান্না মিলবে? মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ ফাইনাল ম্যাচে ভারতকে হারাতে পারলেই মিলে যাবে সেই কান্না। যে কান্নায় শুধু ১১ ক্রিকেটারই নন, স্টেডিয়ামে আগত দর্শকরাই নন; কাঁদবে পুরো জাতি! দু’চোখ বেয়ে শুধু সুখের জলই বের হবে! ২০১২ সালের ফাইনালে হারার ক্ষতও মিলিয়ে যাবে। মাঠে লড়াই করবেন ১১ ক্রিকেটার। কিন্তু পুরো জাতিই যেন সেই লড়াইয়ে একসূত্রে গেঁথে থাকবেন। কখন সেই শুভক্ষণ আসবে, সেই অপেক্ষাতেই থাকবেন। যে অপেক্ষার শুরু হয়ে যাবে রাত সাড়ে সাতটায়। সবার চোখ আজ থাকবে মিরপুরে। সবার মনও পড়ে থাকবে। যে যেখানেই থাকুক, ম্যাচ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই যেন বাংলাদেশের জয়ের জন্যই দোয়া চাইতে থাকবেন। স্টেডিয়ামে যারা আসবেন, তারা ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ আওয়াজ তুলে সমর্থন দিয়ে যাবেন। আর স্টেডিয়ামের বাইরে যারা থাকবেন, তারা অপেক্ষায় থাকবেন কখন ম্যাচটি শেষ হবে। আর আনন্দ করতে পারবেন। যারা থাকবেন টেলিভিশনের সামনে, তাদের হৃদস্পন্দন ধুকধুক করতে থাকবে। সবার চাওয়া একীভূত হয়ে যাবে, কখন মিলবে সুসংবাদ! পারবেন মাশরাফিরা প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে জিতে ইতিহাস গড়তে? পারবেন সবাইকে আনন্দে ভাসাতে? উৎসবে রঙিন করে তুলতে? ম্যাচটিতে নিশ্চিতভাবেই ফেবারিট ভারত। তা বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি আছেন। টি২০তে একেকজন ‘সুপার স্টার’। একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। বোলিংয়ে আছেন অশীষ নেহরা, জাসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডে, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা। বল হাতে যারা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং শিবির মুহূর্তেই টালমাটাল করে দিতে পারেন। এ দলটি আবার টি২০’র সেরা দল। দলটির বিপক্ষে ১০ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ কি জিততে পারবে? সম্ভব? যদি দিনটি হয়ে যায় বাংলাদেশের। টি২০ মুহূর্তের খেলা। শুরু হতেই চোখ বুঝলে শেষ! এ মুহূর্তেই যে দল ভাল করে, জিতে তারাই। দিনটি বাংলাদেশেরও হয়ে যেতে পারে। তবে এ জন্য ব্যাট হাতে শুরুতেই তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারকে ভারতের বোলিংয়ের সামনে মূর্তি হয়ে থাকতে হবে। সঙ্গে শুরুতেই এমন কিছু শট খেলতে হবে, যেন ভারত বোলাররা ঘাবড়ে যায়। এরপর কিছু বল এমনিতেই আসবে। যেগুলোকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানো যাবে। তাতে করে ‘মোমেন্টাম’ তৈরি হয়ে যাবে। যে কাজটি এর আগেও কয়েকবার করেছেন তামিম। তাতে করে জয়ও মিলে গেছে। ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেই যেমন তামিমের ঝড়ো ইনিংসে ভারতকে শুধু হারায়নি বাংলাদেশ সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর সেবাগ, শচিন টেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, ধোনিদের বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ই করে দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে যে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচেও তামিমের ৭০ রানের ঝড়ো ইনিংস ছিল। এমনকি গত বছর যে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজে জিতেছে বাংলাদেশ, প্রথম ম্যাচে তামিমের ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, তামিম যদি শুরুটা করে দেন তাহলে সেই ধারাবাহিকতা সাব্বির রহমান রুম্মন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মর্তুজারা বজায় রেখে আবারও জয় বের করে আনতে পারবেন। তার মানে শুধু শুরুটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আর বোলিংয়ে বরাবরই মাশরাফির হাত দিয়ে ভারত ব্যাটসম্যানদের জন্য যেন ‘গোলা’ই ছুড়ে। যা দিয়ে তছনছ হয়ে যেতেও দেখা গেছে ভারতকে। এবার মাশরাফির সঙ্গে দ্রুতগতিতে বল ছুড়ে ভারত ব্যাটসম্যানদের ভোগানোর জন্য আছেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের দ্রুতগতিতে ছোড়া বলগুলো যখন ভারত ব্যাটসম্যানরা রুখতে থাকবেন, এমন সময় ফর্মে থাকা আল-আমিন হোসেন টপাটপ উইকেট নিয়ে নিতে পারলেই হয়। ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনাও জেগে যাবে। এবার এশিয়া কাপ হচ্ছে টি২০ ফরমেটে। প্রথমবারের মতো এ ফরমেটে টুর্নামেন্টটি হচ্ছে। এর আগে পাঁচবার এশিয়া কাপের ওয়ানডে ফরমেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। সেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই টুর্নামেন্টের মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই হারে। তবে রোহিত শর্মার ক্যাচটি সাকিব লুফে নিতে পারলে ভারত সেই ম্যাচে হারতেও পারত। এখন তাহলে ভারত যেখানে টানা চার ম্যাচ জিতে লীগ পর্বে অপরাজিত থেকে ফাইনালে খেলছে, সেখানে বাংলাদেশ থাকত। তা হয়নি। লীগ পর্বে কি হয়েছে, তা ভেবেও এখন আর লাভ নেই। এটি ফাইনাল ম্যাচ। যে ম্যাচে বাংলাদেশ এর আগে মাত্র ২ বার খেলতে পেরেছে। একবার ২০০৯ সালে তিনজাতি সিরিজে, আরেকবার ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে। ১৯৮৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনবারই জিততে পারেনি। আর ভারত ১৯৭৪ সাল থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে এখন পর্যন্ত ৬০ বার ফাইনালে খেলেছে। জিতেছে আবার ২৬টি ফাইনালে। এ অঙ্কই বলে দিচ্ছে, দুই দলের মধ্যে ফাইনালের দল ভারত। চাপ নেয়ার ক্ষমতা তাই ভারতের ভালই জানা আছে। উত্তেজনার এমন ম্যাচে বাংলাদেশ সেখানে ‘নগণ্য’ দলই। এরপরও আশা থাকে। স্বপ্ন থাকে। যদি জয় মিলে যায়। আবেগ, মানসিক শক্তি, দর্শক, ক্রিকেটারদের মধ্যে একতা, সবার দোয়া; সবকিছুই যে আজ বাংলাদেশের পক্ষে আছে। জয় মিললেও মিলে যেতে পারে। তা ভারত যত শক্তিশালী, যত অভিজ্ঞ, যতই ফাইনালে খেলার দল হোক না কেন। জিততে তো দিনটি ভাল হলেই হয়। সঙ্গে লাগে ভাগ্যও। যে ভাগ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে সবসময় থাকে। সেই ভাগ্যের জোরেই না হয় আজ সবকিছুকে ছাপিয়ে জিতে যাক বাংলাদেশ। তাহলেই ২০১২ সালের ফাইনালে হারের কষ্ট দূর হয়ে সুখের কান্নার জোয়ার বয়ে যাবে। যে কান্নায় ভাসতে আজ নেইকো মানা! তখন ষোলো কোটির কণ্ঠে বাজবে একই সুর, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়।’ মিলবে এবার সুখের কান্না?
×