ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলচ্চিত্রের নোবেল

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৬ মার্চ ২০১৬

চলচ্চিত্রের নোবেল

গণযোগাযোগের শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। মানুষের কাছে যার কদর অত্যধিক। দর্শকদের প্রাণিত করার এই মাধ্যমটি বিশ্বজুড়েই গুরুত্ববহ। যে ভাষাতেই নির্মিত হোক, এর বিষয়গত বার্তাটি দ্রুত পৌঁছে যায় দর্শকের মনোভূমিতে। চলচ্চিত্র কোন একক বিষয় নয়। অনেকের সমন্বয়ে নির্মিত হয় একটি চলচ্চিত্র। গণযোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে এ মাধ্যমটি সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়েছে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সঙ্গে সঙ্গেই। সেই মাধ্যমের সবচেয়ে সেরা পুরস্কার হচ্ছে অস্কার। মর্যাদার দিক থেকে নোবেল পুরস্কারের চেয়ে কম নয়। এমনকি এই পুরস্কারের প্রতি সাধারণ চলচ্চিত্রমোদীর আগ্রহের কমতি নেই। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কার। চালু হয়েছিল ৮৭ বছর আগে ১৯২৯ সালের ১৬ মে। শুধু চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের শিক্ষা-সাহিত্যের ইতিহাসে অস্কার পুরস্কার সবচেয়ে আলোচিত, সম্মানজনক অবশ্যই। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রাচীনতম, জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী এই পুরস্কার দিয়ে থাকে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স এ্যান্ড সাইন্স এএমপিএএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ১৯৩৫ সাল থেকে প্রিন্স ওয়াটার হাউস এই পুরস্কারের জন্য ভোটগ্রহণ করে আসছে। এএমপিএএস নামের প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯২৭ সালে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞানের সমন্বয়ে চলচ্চিত্র নামের যে মাধ্যম গড়ে উঠেছে তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তন করার, যাতে সংশ্লিষ্টরা নির্মাণ কাজে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে। এর ফলেই জন্ম হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্রের এই পুরস্কার। ১৯২৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট নাগাদ যেসব চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল তার মধ্য থেকেই এই পুরস্কার বিতরণ শুরু হয়। হলিউডের রুজভেল্ট হোটেলে ১৯২৯ সালে প্রথম অস্কার প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারের নামটি আসলে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড অব মেরিট। আর পদকটির নাম অস্কার। একালে পুরস্কার ও পদক দুটোই অস্কার নামে পরিচিত। ১৯৩৯ সাল থেকে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড অব মেরিটকে অস্কার নামে ডাকা শুরু হয়ে যায়। সাড়ে তেরো ইঞ্চি লম্বা আকারের ট্রফির ওজন সাড়ে আট পাউন্ড। এতে একজন নাইট ফিল্ম রিলের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন এবং তার হাতে ক্রুসেডের তরবারি। ব্রোঞ্জের এই পদকটি ২৪ ক্যারেটের সোনায় মোড়ানো। গত আট দশকের বেশি সময় ধরে এই পুরস্কার বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমী ও কর্মীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। অস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলো সেরা চলচ্চিত্র। প্রথম বছর সেরা চলচ্চিত্রের জন্য মনোনয়ন পায় তিনটি ছবি। বর্তমানে ১০টি করে চলচ্চিত্র মনোনয়ন পেয়ে আসছে। প্রতিবছর ২৪টি বিভাগে অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। মজার বিষয় যে, একাডেমি এ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি স্টুডেন্ট একাডেমি এ্যাওয়ার্ডও দেয়া হচ্ছে। গত বছর পর্যন্ত পুরস্কার পেয়েছেন ২ হাজার ৯৪৭ জন। অনেকে আছেন যারা একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েও শেষ পর্যন্ত পুরস্কার জিততে পারেননি। প্রতিটি বিভাগে তুমুল প্রতিযোগিতার পর শোনা যায় কাক্সিক্ষত বিজয়ীর নাম। বাংলাদেশও চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। কালেভদ্রে কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেও অস্কার পাওয়া হয়নি। সত্যজিত রায় প্রথম ভারতীয় বাঙালী এবং বাংলাদেশের নাফিজ বিন জাফর অস্কার পান। তবে নানা ঘটনা, নতুন ইতিহাস, তর্ক-বিতর্ক ও হাসি-কান্নায় ঘেরা ছিল এবারের অস্কার আয়োজন। ৮৮তম এই প্রতিযোগিতায় সেরা ছবি টম ম্যাককার্থির জার্নালিজম ড্রামা ‘স্পটলাইট’। সেরা পরিচালক রিভেন্যান্ট ছবির জন্য আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু। সেরা অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও এবং অভিনেত্রী ব্রি লারসন। অস্কারপ্রাপ্ত ছবি এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্রপ্রেমীদের যে আকর্ষণ রয়েছে বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এখানকার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে সাড়া জাগিয়েছে অস্কারের বিষয়টি। আমাদের প্রত্যাশা, এদেশের নির্মিত ছবিও একদিন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে এবং বিজয়ী হয়ে দেশের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
×