ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এই দীর্ঘসূত্রতা-

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৬ মার্চ ২০১৬

এই দীর্ঘসূত্রতা-

জীবনের অতি মূল্যবান সময় জেলখানার অন্ধকারেই কেটেছে তার। গ্রেফতার হয়েছিলেন নিজ মেয়েকে হত্যার অভিযোগে। নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, খালাসও পেয়েছেন; কিন্তু মেলেনি মুক্তি। অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার পরও ১৩ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে কৃষক জোবেদ আলীকে। জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে শিশুকন্যা লিলিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন বাবা জোবেদ আলী। পুলিশ এই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার পর ২০০৩ সালে উচ্চ আদালত থেকে তাকে খালাসের রায় দেয়া হয়। রায়ের পর নিম্ন আদালতে আদেশের কপি পৌঁছালেও ১৩ বছরে তা কার্যকর না হওয়ায় এবং আদেশের কপি কারাগারে না পৌঁছায় এই দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছে জোবেদ আলীকে। বুধবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা জজ শুনানি শেষে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। বিনা বিচারে এই দীর্ঘ কারাভোগের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। আদালতের কপি কারাগারে ১৩ বছরেও কেন পৌঁছল না তা বিস্মিত হওয়ার মতো। বিষয়টি যাদের দেখার দায়িত্ব তারা কেন অবহেলা করল তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা মনে করি এটা নিছক কোন ভুল তা ভাবার অবকাশ নেই। ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা। ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেই চিহ্নিত হবে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জোবেদ আলী গ্রেফতার হয়েছেন। আইনী প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ তদন্তের পর তার বিচারও হয়েছে। বিচারের রায় হয়েছে, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, রায়ে খালাসও পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে ১৩ বছর কী দোষে কারাগারে থাকতে হলো তাকে? কেন বিচার হলো? বিচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধী উপযুক্ত সাজা পাবে, নিরাপরাধ ব্যক্তি ন্যায়বিচার পাবে। জোবেদ আলীর ঘটনার মতো এমন দুর্ভাগ্যের কাহিনী মাঝে-মধ্যেই সংবাদপত্রে ছাপা হয়, টেলিভিশনের পর্দায় সচিত্র দেখানো হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের খবর দেখে তৎপর হলেও তাতে অনেক ক্ষেত্রেই ফল মেলে না। তবে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা জজের মতো সংবেদনশীল ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি জোবেদ আলীদের মানবাধিকার রক্ষায় যে ভূমিকা রেখেছেন তা দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা লাঘবে সহায়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। আদালতসমূহে মামলার তথ্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করায় মামলা সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ এখন সহজতর হয়েছে। মামলা সম্পর্কিত তথ্য জানাতে এসএমএস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ ও সেবা প্রদানে সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে মামলার সর্বশেষ তথ্য সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিনকার কার্যতালিকা, মামলার মূল তথ্য, মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং রায় ও আদেশ প্রতিদিন আপলোড করা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইট সার্চ করলেই এসব তথ্য পাওয়া যায়। এমনি বাস্তবতায় জোবেদ আলীর করুণ কাহিনী ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত হতে পারে না। সবাই চায় এই ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলায় যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হোক। জোবেদ আলীর দীর্ঘ সময়ের যে ক্ষতি হয়ে গেল তা পূরণ করবে কে? এমন আইনী দীর্ঘসূত্রতার অবসান হবে কবে?
×