ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের ভূমিকা নিয়ে সেমিনার

দায়বদ্ধ ও স্বচ্ছ বেসরকারী শিল্প খাত প্রতিষ্ঠার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৬ মার্চ ২০১৬

দায়বদ্ধ ও স্বচ্ছ বেসরকারী শিল্প  খাত প্রতিষ্ঠার তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দায়বদ্ধ ও গণমুখী খাত হিসেবে স্বচ্ছ বেসরকারী শিল্প ও বাণিজ্যক খাতে প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে সাত চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্যাংক ঋণখেলাপি সমস্যর সমাধান, উন্নততর কর্পোরেট ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন, কর্মচারীদের ন্যায্য ও কর্ম সম্পাদনভিত্তিক মজুরি ও বেতন প্রদান, ভোক্তা অধিকার ও দেউলিয়া আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসায়ে নিয়মনিষ্ঠা আনয়ন, ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়ন করে যোগসাজশমূলক আচরণ প্রতিরোধ এবং চেম্বার ও সমিতিগুলোর মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রণ,স্বচ্ছতা ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা। শনিবার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও জাইকার চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ মিকিও হেতেদা। বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন এ্যান্ড রেফারেন্স বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব এনএম জিয়াউল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহকারী সচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদেউস খান এবং এনবিআর-এর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন। এমএ মান্নান বলেন, সততা ও নৈতিকতা উৎকর্ষিত হয়ে শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন, সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বেশ ভাল প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করছি। এখন নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আচরণগত উৎকর্ষতা বা শুদ্ধাচার বিশিষ্ট জাতি গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ২১ শতকে বেসকারী খাত বাদ দিয়ে সরকার একার পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়, এটা অস্বীকার করা যাবে না। সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে সুশাসন বা শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠান করতে হবে। আর এজন্য সরকারী- বেসরকারী পর্যায়কে এক সাথে কাজ করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা দুর্নীতির মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তাই এ বিষয়ে এখনই নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আইনের ভারে রাষ্ট্র ন্যুব্জ। যখনই কোন সমস্যা দেখা দেয় তখনই আমরা আইন তৈরি করি। আইনের ভারে আমরা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছি। আইনগুলো সংস্কার প্রয়োজন, অপ্রয়োজনীয় আইনগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। তাহলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। দেশে শুধু অর্থনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে না, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যবসায়ীদের হাতে। এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত হই। আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৮০-৯০ ভাগ সহযোগিতা আশা করি। নজিবুর রহমান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দুর্নীতি, হয়রানি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে জিরো টলারেন্স। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিল্প কারখানা কমপ্লায়েন্স করলে এনবিআর সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়ার জন্য সরকার কাজ করছে। এ সময় শুদ্ধাচার সিস্টেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মন্ত্রিপরিষদ তৈরি করলেও আমরা সবাই মিলে পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাস্তবায়নে কাজ করব। তাহলেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, আসুন এক সঙ্গে বসে দুর্নীতিবাজ আমলা-ব্যবসায়ী চিহ্নিত করি। আপনারা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চিহ্নিত করবেন, আমরা আমলা চিহ্নিত করব। এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে মাতলুব বলেন, কোন কর্মকর্তা বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য পেলে ব্যবস্থা হিসেবে বান্দরবান বদলি করা হয়। এটা কোন শাস্তি হলো না। আসুন এক সঙ্গে বসে দুর্নীতিবাজ আমলা ও ব্যবসায়ী চিহ্নিত করি। আপনারা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চিহ্নিত করবেন, আমরা আমলা চিহ্নিত করব। তারপর কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে চোরাকারবারীদের মদদ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ভারত গরু রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা গরু শুল্ক স্টেশন থেকে রাষ্ট্রীয় ছাপ নিয়ে দেশের বাজারে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
×