ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্নপত্র ফাঁস ॥ পরীক্ষার্থী কমেছে

রেলের সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৬ মার্চ ২০১৬

রেলের সহকারী স্টেশন  মাস্টার নিয়োগ  পরীক্ষায় অনিয়ম

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে শুক্রবার সহকারী স্টেশন মাস্টারের ২৭০ শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে। পরিকল্পিত আসন বিন্যাসে এ পরীক্ষায় ৬৬ হাজার ৫৬৭ প্রার্থী অংশ নেয়ার কথা থাকলেও শতকরা ৫০ ভাগ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তবে সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে রেল কর্মকর্তাদের ধারণা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সিনিয়র ওয়েল ফেয়ার দফতর, চীফ পার্সোনেল অফিসারের দফতর, চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের দফতর ও জেনারেল ম্যানেজারের (পূর্ব) দফতরের কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলে দাবি করেছেন কয়েক পরীক্ষার্থী। প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে জানতে রেলের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) আমজাদ হোসেনের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে আমার জানা নেই, এছাড়া এ পরীক্ষার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এদিকে পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে চীফ পার্সোনেল অফিসার দফতরে। কম্পিউটার সুপারভাইজার জনৈক আব্বাসের কম্পিউটারেই এই প্রশ্নপত্র কম্পোজ করা হয়েছে। কম্পোজকৃত এ প্রশ্নপত্রটি পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপকের কনফারেন্স রুমে ফটোকপি করেছে জনৈক সমীর। যিনি সিনিয়র ওয়েল ফেয়ার দফতরের প্রধান সহকারী খন্দকার ইসমাইল প্রকাশ মামুনের পিয়ন। অপরদিকে এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের অফিস সহকারী শ্রমিক লীগের সিরাজপন্থী জনৈক সুমন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিনিয়র ওয়েল ফেয়ার অফিসার দফতরের প্রধান সহকারী ও চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার দফতরের অফিস সহকারীর ইন্ধনে চীফ পার্সোনেল অফিসার দফতরের কম্পিউটার সুপারভাইজার এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে কয়েক পরীক্ষার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে দর কষাকষিতে বনিবনা না হওয়ায় এ ধরনের তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে ধারণা করছেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলের কয়েক কর্মকর্তা। তবে সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগের অনুমোদনকারী থেকে শুরু করে কমিটির কয়েক সদস্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে আরেকটি সূত্রে জানা গেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ কমিটির অনুমোদনকারী থেকে শুরু করে কমিটির কয়েক সদস্য বরিশাল জেলার হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বরিশাল জেলার প্রার্থীদের মধ্যে এ প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গত এক সপ্তাহ ধরে গোপনে হাতে লেখা প্রশ্নপত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে। গত সোমবার চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহীর ২০ কেন্দ্রের জন্য প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীতে এসব প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাবার তথ্য রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও চট্টগ্রামের সিআরবি থেকে প্রশ্নপত্র সাদা কাগজে লিখে ও মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কয়েক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ। পরীক্ষার্থীদের আরও কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, সহকারী স্টেশন মাস্টার পদের নিয়োগ কমিটির ৫ জনের মধ্যে ৫ জনই একই জেলার হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও পূর্বাঞ্চলীয় জিএম মকবুল আহমদ নিয়োগ কমিটির অনুমোদনকারী। তিনিও ওই জেলার। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে কেনাবেচা পর্যন্ত উক্ত কয়েক দফতরের কর্মচারীরাই লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও প্রতিটি বেঞ্চে ৫ জনের পরিবর্তে তিনজন বসিয়ে কক্ষ সংখ্যা কামানো হয়েছে। ফলে পরীক্ষার হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, যা ছিল নিয়োগ কমিটির পরিকল্পিত। রেলের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) আমজাদ হোসেন আরও জানান, এ প্রশ্নপত্র তৈরি ও ফাঁস প্রসঙ্গে জিএমই ভাল বলতে পারেন। কারণ তিনি নিয়োগ পরীক্ষার অনুমোদনকারী। এ প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক মকবুল আহমদ বলেন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ৩৬টি কেন্দ্রে এ পদের বিপরীতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী প্রবেশপত্র পাঠানোসহ পরীক্ষা গ্রহণে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় ৬০টি প্রশ্ন ছিল। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিএম (পূর্ব) বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের কোন সুযোগ নেই। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। হতেই পারে না। প্রতিবেদককে তিনি আরও বলেন, এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য কোন তথ্য জানার থাকলে আমার কাছ থেকে নিতে পারেন। শুক্রবার চট্টগ্রামের ১৬টি কেন্দ্রে এবং রাজশাহীর ২০টি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×