ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন

সংঘর্ষ, গুলি, ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৬ মার্চ ২০১৬

সংঘর্ষ, গুলি, ভাংচুর

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইউপি নির্বাচন নিয়ে জেলায় প্রার্থী-বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাসংঘর্ষ, বিক্ষোভ, মামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের খবর : দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় প্রার্থীদের প্রার্থিতা যাছাইবাছাই করা হয়েছে। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে শনিবার ৮ ইউনিয়নের প্রার্থীদের প্রার্থিতা যাছাইবাছাই করা হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী ও বিএনপির এক প্রার্থীর সর্মথকদের বাধা দেয়া নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকাল থেকে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদের প্রার্থীদের যাচাইবাছাই শুরু হয়ে তা চলে একটানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাইয়ের সময় মরিচা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জোয়াদুর রহমান জজ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী মাহাবুল ইসলামের প্রস্তাবকারীদের কাছ থেকে কাগজপত্র কেড়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মাহাবুল ইসলাম জানান, আমার ভাই প্রস্তাবকারী দাউদ হোসেন যাচাইবাছাইয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা চত্বরে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে মারধর করলে সে পালিয়ে প্রাণে বাঁচে। নওগাঁ আত্রাই উপজেলায় দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে আওয়ামী লীগে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। শুক্রবার রাতে বিশা ইউনিয়নে এক প্রার্থীর শো-ডাউনে হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে । ঘটনায় থানা পুলিশ ওই ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে মাদক মামলায় জড়িয়ে শনিবার আদালতে সোপর্দ করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য দলীয় একক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সেই আলোকে শুক্রবার রাতে ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মোল্লার পক্ষে শোডাউন করা হয়। শোডাউন শেষে বৈঠাখালি এলাকায় রাত অনুমান পৌনে ১০ টার দিকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রার্থী ও তার কর্মী-সর্মথকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিল। এ সময় অপর এক প্রার্থীর পক্ষে আত্রাই উপজেলা সদর থেকে কিছু লোকজন মোটরসাইকেলযোগে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এর কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেল আরোহীদের একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সোহেল রানাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। অল্পের জন্য সোহেল রানা প্রাণে বেঁচে যায়। গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যায়। হামলাকারীরা গুলি চালিয়েই সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তবে এলাকার লোকজন তাদের কয়েকজনকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। কলাপাড়া ফিশারির পেছনে বাদুরতলীর মৃধাবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় বিএনপি মনোনীত টিয়াখালী ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী আক্কাস উদ্দিনসহ তার চার সমর্থক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার বেলা একটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অন্য আহতরা হলেন জামাল গাজী, নিয়াজ গাজী ও সোহেল গাজী। এর মধ্যে পুলিশের সহায়তায় সোহেলকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার জন্য আক্কাস গাজী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ মশিউর রহমান শিমুসহ তার সমর্থকদের দায়ী করেছেন। উঠোন বৈঠকে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে এ হামলার শিকার হন বলে আক্কাস উদ্দিন জানান। চরফ্যাশন, ভোলা ইউপি নির্বাচন নিয়ে হাজারীগঞ্জে ও মাদ্রাজে শনিবার দুপুরে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন খলিল, রশিদ মাঝি, বাবুল, হোসেন, মোসফা সিকদার, মোঃ নুরনবী, সাইফুল। আহতদের চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, হাজারীগঞ্জ ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী শাহে আলম ও কামালের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন এবং চরমাদ্রাজে আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাম্মেল জমাদার ও ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার প্রার্থী আ. আজিজের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। গলাচিপা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হানিফ মিয়া রাঙ্গাবালী থানায় তাকে হত্যা চেষ্টা, প্রাণনাশের হুমকি, মারধর, ছিনতাই, ঘর ভাংচুর ও মালামাল লুটের অভিযোগে মামলা করেছেন। হানিফ মিয়া নিজেই বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাজমুল হুদাসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ২০৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা প্রসঙ্গে হানিফ মিয়া অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পরস্পর যোগসাজশে বিশাল ক্যাডার বাহিনীর সহায়তায় চরবেস্টিন ও নলুয়া বাজারে দু’দফা তার ওপর প্রাণনাশের জন্য হামলা চালায় ও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে জখম করে এবং ৪৫ দোকানে লুটপাট ও ভাংচুর চালায়। বাউফল বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতায় নির্বাচনী সহিংসতা বেড়েই চলছে। ফলে দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে জনপদ। নির্বাচনী সহিংসতায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হলেও নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটাররা ইতোমধ্যেই তাদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাউফলের ১১ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫৫ প্রার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন নৌকা, ১১ জন ধানের শীষ, ৭ জন ইসলামী আন্দোলন, একজন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাকিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বাউফলের বগা, নওমালা, চন্দ্রদ্বীপ, কেশবপুর, কালিশুরী, কাছিপাড়া, ধুলিয়া এবং সূর্যমনি ইউনিয়নে নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনপরবর্তী ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এসকল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে নিজ দলেরই বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই বাউফলের ধুলিয়া, কাছিপাড়া এবং নওমালা ইউনিয়নে নির্বাচনী মাঠ দখল নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতা রোধ এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাউফল থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম দুর্গাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মনোনয়ন বঞ্চিত অপর তিন আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। শনিবার দুপুরে দুর্গাপুর বাজারে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মঙ্গা। উপস্থিত ছিলেন উলিপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল ইসলাম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আজিজ সরকার, দফতর সম্পাদক দুলাল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক খলিলুর রহমান, যুবলীগ সভাপতি মশিউর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি শামীম আহসানসহ অন্যান্য নেতা।
×