ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইজিসিসিতে গানের ঝর্ণাধারায় মিতালী

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ৬ মার্চ ২০১৬

আইজিসিসিতে গানের  ঝর্ণাধারায় মিতালী

গৌতম পাণ্ডে॥ সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য সন্ধ্যাটি ছিল মনোরম। ভারতীয় শিল্পী মিতালী ব্যানার্জীর যেমন সুরেলা কণ্ঠ তেমনি ছিল গান নির্বাচন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত সবার গানই গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করলেন তিনি। শিল্পী নিজের লেখা ও সুরের গানও অবলীলায় গেয়ে শুনান। প্রতিটি গানের সুর ও মর্মবাণী যেন শ্রোতাদের মর্মে গিয়ে পৌঁছিয়ে ছিল। গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তন পূণ শ্রোতা নীরবে শুনছেন আর হাততালি দিয়ে বাহবা দিচ্ছেন শিল্পীকে। গানের ফাঁকে শিল্পী নিজের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণ করতেও ভোলেননি। শুক্রবার শিল্পী মিতালী ব্যানার্জীর একক এ সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করে ঢাকার ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দর বেশে এসেছ, তোমায় করিগো নমস্কার গানটি দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ইমন রাগে একতালের ওপর এ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে যেন আসর বন্দনা করে নিলেন শিল্পী। প্রথম গানটিতেই সবাই নড়ে-চড়ে বসলেন। অনেককে বলতে শোনা গেল আজ হয়ত মনের মতো কিছু গান শোনা যাবে। মিতালী মূলত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত। কিন্তু নজরুল সঙ্গীত ছাড়াও তার অনায়াসে বিচরণ রয়েছে অন্যান্য বাংলা গানে। নজরুল সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী প্রয়াত বিমান মুখোপাধ্যায়ের কাছে। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন প-িত সমরেশ চৌধুরীর কাছে। তিনি নজরুল ও ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে ‘সঙ্গীত বিশারদ’ উপাধি লাভ করেছেন ভারতের এলাহবাদের প্রাগ সঙ্গীত সমিতি থেকে। এছাড়া রবীন্দ্রসঙ্গীতে ‘সঙ্গীত ভূষণ’ উপাধি পেয়েছেন চন্ডীগড়ের প্রাচীন কলাকেন্দ্র থেকে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পরিবেশনাটি ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’। নজরুলের ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’ গানটি পরিবেশনার পর আবার ফিরে এলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে। পরিবেশন করলেন ‘এমনি করে যায় যদি দিন যাক না’। অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে গাইলেন শ্যামা সঙ্গীত ‘শ্যামা নামের লাগল আগুন আমার দেহ ধুপকাঠিতে’। শিল্পী মিতালী শুধুমাত্র একজন কণ্ঠশিল্পী নন, একজন সফল গীতিকার ও সুরকার। তার প্রকাশিত একক এ্যালবাম ‘পাই যেন মা ঠাঁই’ কোন এক সময়ে খুবই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছিল কলকাতায়। তিনি সে এ্যালবাম থেকে নিজের লেখা ও সুরে ‘তাঁরা কেন করেন তারা তারা’ গানটি গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওপার বাংলার প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী রবিন মুখোপাধ্যায়। শিল্পী মিতালীর অনুরোধে তিনি ‘আমরা যেন বাংলাদেশী’ ও নজরুলের ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’ আবৃত্তি করেন। এরপর মিতালী গেয়ে শোনান নিজের লেখা ও সুরে শিশুগীতি ‘হুতুম পেঁচা নাকটা বোঁচা চোখ গোল গোল করে’। শিল্পী ফিরে আসেন আধুনিক গানে। তিনি পরপর শিল্পী জটিলেশ্বরের ‘আমার স্বপন কিনতে পারে এমন আমির কই’ ও ‘বঁধু আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে’ পরিবেশন করেন। শ্রোতাদের অনুরোধে ‘মোহন বাঁশি বাজে’ ও ‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার’ গানের অংশবিশেষ অতুল প্রসাদের ‘ক্ষমিও হে শিব’, রবীন্দ্রনাথের ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’ এর পর শিল্পী মিতালীর স্বামী বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর অনুরোধে গেয়ে শোনান ‘সারেগামা শুধু গান গেয়ে যা’ গানটি। শিল্পীর সব শেষ পরিবেশনা ছিল রবীন্দ্রনাথের গান ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে আয়’।
×