ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৬ উইকেটে হার শ্রীলঙ্কার

পাকিস্তানের ভেল্কি শেষ ম্যাচে

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ৫ মার্চ ২০১৬

পাকিস্তানের ভেল্কি শেষ ম্যাচে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সব হারিয়ে পাওয়ার কোন সুখ নেই। উল্টো আছে কষ্ট। পাকিস্তান যেন সেই সুখই পেল। তাতে জড়িয়ে থাকল কষ্ট! এমন সময়ে এসে পাকিস্তান ক্রিকেটাররা জ্বলে উঠল, যখন ফাইনালে ওঠার আর কোন সুযোগই থাকল না। তবে শ্রীলঙ্কাকে নিয়মরক্ষার ম্যাচে ৬ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের সেরা তিন দলের একটি হলো পাকিস্তান। প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। শ্রীলঙ্কাতো পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই হারের রাজ্যে যেন হাবুডুবু খেল। পাঁচ দলের টুর্নামেন্টে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাকি দলগুলো যে জিতবে, তা আগেই জানা ছিল। তা সবাই জিতলও। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ভাণ্ডারে শুধু আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয়টিই ধরা দিল। হার হলো বাকি তিন দলের বিপক্ষেই। তাতে করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কাছে হেরে টুর্নামেন্টের চতুর্থ দল হলো শ্রীলঙ্কা। আরব আমিরাতের পঞ্চম দল হওয়া আগেই নিশ্চিত ছিল। ম্যাচে টস জিতে পাকিস্তান। আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি টস জিতে বললেন, ‘গত ম্যাচগুলোতে কী হয়েছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। এখন আমরা ভাবছি কিভাবে এ ম্যাচটি (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) জেতা যায়। তাতে করে আরেকটি জয় নিয়ে দেশে যেতে পারব। তাছাড়া সামনে টি২০ বিশ্বকাপ আছে। সেই বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ।’ সেই জয় মিললও। টুর্নামেন্টে হারের বৃত্তেই বন্দী থাকল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তিলকারত্নে দিলশান (৭৫*) ও দিনেশ চান্দিমালের (৫৮) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান করল। জবাবে উমর আকমলের ৪৮, সরফরাজের ৩৮ ও শারজিলের ৩১ রানে ১৯.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করে জয় পেল পাকিস্তান। যে উইকেট তাতে শ্রীলঙ্কার আরও বেশি রান করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করতে পারল না। পাকিস্তান দেখিয়ে দিল আরও রান করা যেত। ২৩ রানেই হাফিজকে (১৪) হারিয়ে একটু বিপাকে পড়ে পাকিস্তান। কিন্তু এরপর শারজিলের (২৪ বলে ৩১ রান) ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ে দ্রুতই ৫৮ রানে চলে যায় পাকিস্তান। এমন সময়ে শারজিলকে আউট করা গেলেও লাভ হয়নি। সরফরাজ আহমেদ ও উমর আকমল মিলে দলকে ১০০ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান। ৯৪ রানে সরফরাজ (৩৮) আউট হন। এরপর আর কোন উইকেটই শিকার করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। উমর আকমল (৪৮) জিততে ১ রান বাকি থাকার সময়ে আউট না হলে শোয়েব মালিকের (১৩*) সঙ্গে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতেন। টুর্নামেন্টের শুরুটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে হার দিয়ে হলেও শেষটায় জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে অবসর নেয়ার পর শ্রীলঙ্কা দলে তিলকারত্নে দিলশানই ‘সুপার স্টার’ খ্যাতি নিয়ে আছেন। সেই ‘সুপার স্টার’ শুধু এবার এশিয়া কাপেই নয়, গত ৭ ম্যাচ ধরেই ব্যর্থ ছিলেন। অবশেষে টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে এসে জ্বলে উঠলেন। সেই জ্বলে ওঠার মধ্যেও থাকল ভাগ্যের সহায়তা। ৭ রানে দিলশানকে আউট করে দিতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু ইরফান ফাইন লেগে দিলশানের ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ হলেন। এরপর যে দিলশান বাউন্ডারি মারা শুরু করেন, মোহাম্মদ নাওয়াজের করা ষষ্ঠ ওভারে এক ছক্কা ও তিন চার হাঁকিয়ে ১৮ রান নিয়ে নেন। শেষ বেলায় এসে এমন জ্বলে উঠেন দিলশান, প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টে স্কুপ মেরে বাউন্ডারি হাঁকান। যেটিকে ‘দিলস্কুপ’ বলা হয়, সেটি যেন ভুলেই গিয়েছিলেন দিলশান। শেষ ম্যাচে এসে তা দেখালেন। দিনেশ চান্দিমাল ৫৮ রান করে আউট হওয়ার পর দিলশান শুধু উড়তেই থাকলেন। ৬৪ রানে আবারও ইরফানের হাত ফসকে দিলশান নতুন জীবন পেলেন। শেষপর্যন্ত ৫৬ বলে অপরাজিত ৭৫ রান করলেন দিলশান। তার এ ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাও এবার এশিয়া কাপে প্রথমবার ১৫০ রান করতে পারল। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে আর কোন ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারলেন না। শুধু চান্দিমাল আর দিলশান ছাড়া। এ দুইজন মিলে যে শ্রীলঙ্কার হয়ে ওপেনিং জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১০ রানের জুটি গড়লেন, সেটিই শ্রীলঙ্কাকে অনেকদূর এগিয়ে দিল। শেষে এসে এমন দুর্দান্ত দল হয়ে উঠল, ইনজুরিতে পড়া এ্যাঞ্জলো ম্যাথুসকে ছাড়াই ভাল ব্যাটিং করল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গাকে ছাড়া বোলিং যেন লঙ্কানদের বোথাই হয়েই থাকল। তাতে করে হারও হলো নিয়তি। শেষবেলায় ভেল্কি দেখাল পাকিস্তান।
×