ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৭ বছরের রেকর্ড ভাঙলো বার্সিলোনা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৫ মার্চ ২০১৬

২৭ বছরের রেকর্ড ভাঙলো বার্সিলোনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবধারিতই ছিল বিষয়টা। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ার কারণেই এমন ভাবনা! অবশেষে তাই হয়েছে। অনুমিতভাবেই স্প্যানিশ ফুটবলে টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে বার্সিলোনা। বৃহস্পতিবার রাতে স্প্যানিশ লা লিগার ম্যাচে নয়জনের রায়ো ভায়োকানোকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে অনন্য এই ইতিহাস গড়েছে কাতালানরা। এর পুরো কৃতিত্বই প্রাণভোমরা লিওনেল মেসির। পুরো ম্যাচটাই হয়েছে মেসিময়। অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করে বার্সাকে রেকর্ডের রাত উপহার দিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সেই ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল লিও বেনহেক্কারের রিয়াল মাদ্রিদ। ২৭ বছর পর সেই রেকর্ডটা ভেঙ্গেছে গ্যালাক্টিকোদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনা। লা লিগার আরও ১১ পর্ব বাকি। তবে এখনই বার্সিলোনার সামনে শিরোপার হাতছানি। বর্তমানে ২৭ রাউন্ড শেষে বার্সার সংগ্রহ সর্বোচ্চ ৬৯ পয়েন্ট। ৬১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা জয়ের আশা শেষই বলা যায়। রেকর্ড ৩২ বারের চ্যাম্পিয়নদের পয়েন্ট ৫৭। বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যেই আজ রাতে ফের মাঠে নামছে জিনেদিন জিদানের দল। ঘরের সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের প্রতিপক্ষ সেল্টা ডি ভিগো। পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে থাকলেও টানা সাতটি লীগ ম্যাচে অপরাজিত থাকার আত্মবিশ্বাস নিয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি হয় ভায়েকানো। তবে ঘরের মাঠে মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারের ‘ত্রিফলা’ আক্রমণের সামনে একদমই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি তারা। পাঁচ গোল তো খেয়েছেই, সঙ্গে দুটো লালকার্ডের লজ্জাতেও পড়তে হয়েছে স্বাগতিকদের। ম্যাচের ২২ ও ২৩ মিনিটে ইভান রাকিটিচ ও মেসির গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বার্সাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিরতির মিনিট তিনেক আগে রাকিটিচকে মারাত্মক ফাউল করে সরাসরি লালকার্ড দেখে গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ীদের কাজ আরও সহজ করে দেন ভায়োকানোর দিয়াগো লরেন্টে। বিরতির পরও বার্সার আক্রমণাত্মক ফুটবলের জবাব দিতে পারেনি ভায়োকানো। ৫৩ মিনিটে মেসি নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোল করার চার মিনিট পর ব্যবধান কমায় স্বাগতিকরা। কিন্তু লুইস এনরিকের শিষ্যদের দমানো যায়নি। ব্যবধান ৩-১ হওয়ার পর নেইমারের ফ্রিকিক ক্রসবারে লেগে ফিরে এসে হতাশ করে বার্সাভক্তদের। তবে ফ্রিকিকের সময় সার্জিও বসকুয়েটসকে বক্সের মধ্যে ফেলে দিয়ে লালকার্ড দেখার পাশাপাশি বার্সাকে পেনাল্টিও উপহার দেন ম্যানুয়েল ইটুরা। হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেসি অবশ্য পেনাল্টি নেননি, সুযোগটা দেন লুইস সুয়ারেজকে। তবে লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াইয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি উরুগুয়ের তারকা স্ট্রাইকার। তার শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন ভায়েকানোর গোলরক্ষক হুয়ান কার্লোস। ফলে রোনাল্ডোর ২৩ গোলের চেয়ে তাই দুই গোলেই এগিয়ে আছেন সুয়ারেজ। বার্সিলোনা এ মৌসুমে নবম পেনাল্টি মিসের তিন মিনিট পরই অবশ্য হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মেসি। ৭২ মিনিটে লক্ষ্যভেদ করেন ফিফা সেরা ফুটবলার। আর্জেন্টাইন তারকার এটা ক্যারিয়ারের ৩৫তম হ্যাটট্রিক। ৮৬ মিনিটে ম্যাচের শেষ আর বার্সার জার্সি গায়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গোল করেন তুর্কি মিডফিল্ডার আরডা টুরান। টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার ইতিহাস গড়লেও ইউরোপিয়ান ফুটবলের পরিসংখ্যানে কেবলই শীর্ষ পাঁচে নাম লিখিয়েছে বার্সিলোনা। আর মাত্র দুই ম্যাচে জয় কিংবা হার এড়ালেই এসি মিলানের রেকর্ডও টপকে যাবে লা লিগার চ্যাম্পিয়নরা। সবচেয়ে বেশি টানা ৬২টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের দখলে। ১৯১৭ সালে তারা অবিশ্বাস্য এ কীর্তি গড়ে। এরপরই আছে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস। ২০১২ সালে জুভিরা ৪৩ ম্যাচে অপরাজেয় থাকার মাইলফলক স্পর্শ করে ইতালিয়ান ফুটবলে রেকর্ড গড়ে। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন ইংলিশ পরাশক্তি নটিংহ্যাম ফরেস্ট টানা ৪০টি ম্যাচে অপরাজিত থাকে। বর্তমানে তারা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির টুর্নামেন্ট ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে। তালিকায় চার নম্বরে অবস্থান করছে এসি মিলান। ইতালিয়ান জায়ান্টরা ১৯৯১ সালে টানা ৩৬টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার নজির স্থাপন করে। কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবলের বর্তমান রেকর্ডটি জুভেন্টাসের দখলে। এদিকে বার্সিলোনার স্প্যানিশ রেকর্ডের ম্যাচে গোল না পেলেও একটি মাইলফলক স্পর্শ করেন নেইমার। হ্যাটট্রিক হিরো মেসির প্রথম গোলটি আসে ব্রাজিলিয়ান অধিনায়কের পাস থেকে। এতেই স্বদেশী কিংবদন্তি রোনাল্ডিনহোর পাশে নাম লেখান ২৪ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৮টি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে ১০ গোল করিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন। এর আগে বার্সার হয়ে ২০০৫-০৬ মৌসুমে এ কীর্তি গড়েন রোনি।
×