ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যালারি কায়ায় হামিদুজ্জামান খানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ মার্চ ২০১৬

গ্যালারি কায়ায় হামিদুজ্জামান খানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অদম্য মানসিকতায় কারও কারও কাছে বয়স যেন হেরে যায়। সত্তরেও ধারণ করেন তারুণ্য। তেমনই এক শিল্পী হামিদ্দুজ্জামান খান। মননের সজীবতা ও শ্রমের নিষ্ঠায় বয়সকে হার মানিয়ে নিরন্তর হেঁটে শিল্পের পথে। কঠিন ধাতব পদার্থ পাথরের বুক চিরে গড়ে তুলছেন নিত্যনতুন শিল্পকর্ম। আগামী ১৬ মার্চ খ্যাতিমান এই ভাস্করের সত্তর বছর পূর্ণ হবে। আর তাঁর সত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শুরু হলো ‘স্টোনস-২’ শীর্ষক প্রদর্শনী। ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। হামিদুজ্জামান খানের হাতের স্পর্শে পাথরের খ-ে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়। প্রকাশিত হয় অসীম প্রাণের ব্যঞ্জনায়। অবয়বের গুণে জড় বস্তুটি প্রাণসঞ্চারী হয়ে নজর কাড়ে শিল্পানুরাগীর। গ্যালারি কায়ায় স্থান পাওয়া কাজগুলোতে জড় পাথর যেন মন খুলে কথা বলে উঠছে। নিজের শিল্প সৃজনের উৎস প্রসঙ্গে হামিদুজ্জামান খান বলেন, আমি না ঘুরলে ছবি আঁকতে পারি না। যেখানেই যাই মানুষ দেখি। তাদের জীবনযাপন, চলাফেরা, বাজার, বাড়িঘর সব কিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি। এসব কিছুই মনের মধ্যে একটা ছাপ ফেলে। সেসবই উঠে আসে আমার ভাস্কর্য ও ক্যানভাসে। শিল্পের প্রায় সব শাখাতেই এই শিল্পীর সমান গতিবিধি। ভাস্কর্য নির্মাণের ক্ষেত্রে আগে মেটাল কাস্টিং, মেটাল শিট, মেটাল পাইপে কাজ করেছেন। এখন কাজ করছেন পাথর বা স্টোন নিয়ে। ছবির ক্ষেত্রেও তাই। জলরঙ, এক্রেলিকেও সমান আগ্রহ তার। তবে ছবির ক্ষেত্রে কালো রং তার প্রিয়। বলেন, সব রং মিলেই তো কাল হয়। তরুণ শিল্পীদের কাছে তিনি পথপ্রদর্শক। শিল্পীকে কীভাবে ছবির উপাদান খুঁজতে হয়, কীভাবে গড়ে তুলতে হয় নিজস্ব শিল্প আঙ্গিকÑতরুণ শিল্পীরা নিষ্ঠার সঙ্গে এটা শেখেন তাঁদের এই শিক্ষকের কাছ থেকে। তিনি নিজেও প্ইেন্টিং ছেড়ে ভাস্কর্যেও প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন শিক্ষক শিল্পী আব্দুর রাজ্জাকের অনুপ্রেরণায়। এছাড়া ইউরোপ ঘুরেও তিনি ভাস্কর্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ভাস্করের পাশাপাশি চিত্রশিল্পী হিসেবেও শিল্পরসিকদের কাছে সমাদৃত হামিদুজ্জামান খান। বিশেষ করে জলরঙে চিত্রিত শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। এই প্রদর্শনীতেও রয়েছে জলরঙের কাজ। এছাড়াও রয়েছে কিছু ড্রইং। সাদা ও কালো রংয়ের আশ্রয়ে চিত্রিত হয়েছে ড্রইংগুলো। চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন নারীর মুখাবয়ব কিংবা নিরেট মুখম-ল। খোদাইকৃত পাথরের ভাস্কর্যে রূপ নিয়েছে খোলা চুলের নারীর রূপময়তা অথবা শুধুই নারীর মুখশ্রী। আরেকটি শিল্পকর্মে পাথরের বুক চিড়ে বেরিয়ে এসেছে মানবের মুখাবয়ব। উদ্ভাসিত হয়েছে শিং, পাখিসহ প্রাণিজগতের নানা অনুষঙ্গ। কোথাও বা উঠে এসেছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। যেমন সাদা মার্বেলে সৃজন করেছেন স্থাপনা শিল্পকর্ম ‘বসার আসন’। চারদিকে শুকনো পাতা। তার মাঝে বসানো হয়েছে আসনটি। একদিকে প্রকৃতির রূপ, অন্যদিকে ভাস্কর্যের সৌন্দর্যÑদুই ফুটে উঠেছে তার এই শিল্পকর্মে। ক্যানভাসেও যেন হামিদুজ্জামানের কাজে ভাস্কর্যেরই দ্যোতনা। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ‘সামিট’ শিরোনামে বিশাল চিত্রকর্ম। সাদা আর কালো রঙের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন হিমালয়কন্যা খ্যাত নেপালকে। শিল্পীর ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ আজিজ খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের প্রেস এন্ড ইনফরমেশন অফিসার ন্যান্সি টি ভ্যানহর্ন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি কায়ার পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী। মুহম্মদ আজিজ খান বলেন, বাংলাদেশে মননশীল ও সহনশীল মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন। শিল্পচর্চা ও শিল্পের প্রতি আগ্রহ সেই মানসিকতা সৃষ্টি করে। তাছাড়া শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতাও খুব জরুরী। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে শিল্পীকে সম্মান জানানোর সবচেয়ে ভাল উপায় তার ছবি কেনা। ন্যান্সি টি ভ্যানহন বলেন, বাংলাদেশের শিল্পকর্ম খুব আকর্ষণীয়। আমি এখানে খুব অল্প কিছুদিন এসেছি। কিন্তু এদেশের শিল্পীদের কাজ বেশ টানে। শিল্পী হামিদুজ্জামান প্রায় সব শিল্প মাধ্যমেই বেশ সাবলীল। গৌতম চক্রবর্তী বলেন, শিল্পী হামিদুজ্জামান খান একজন নিরলস পরিশ্রমী শিল্পী। পাথর এদেশের সহজলভ্য উপকরণ নয়। তাই শিল্পচর্চায় তার ব্যবহার নেই বললেই চলে। অথচ ঐতিহাসিকভাবে পাথর ভাস্কর্যের একটা প্রধান মাধ্যম। সেই পাথর নিয়ে কাজ শুরু করলেন। পরপর দুটি প্রদর্শনীতে আমরা তার সেই পরিশ্রমের কাজগুলো দেখতে পাচ্ছি। প্রদর্শনীতে ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মসহ ৫৩টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শিল্পী সাথীর জীবন বাঁচাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ॥ চিত্রপটে রঙিন স্বপ্ন আঁকেন চিত্রশিল্পী মাসুদা আহমেদ সাথী। রং ও রেখার আশ্রয়ে কখনও বলে যান জীবনের গল্প আবার কখনও ক্যানভাস ধাবিত হয় প্রকৃতির পথে। তাঁর সেই শিল্পিত জীবনের পথচলায় যেন আঘাত হেনেছে ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার। রুদ্ধ করে দিতে চায় শিল্পীর সৃষ্টিশীলতা। তাই বলে জীবনযুদ্ধে হারতে রাজি নন এই নবীন চিত্রকর। আর সেই সংগ্রামে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন দেশের অর্ধশতাধিক নবীন-প্রবীণ শিল্পী। বাড়িয়ে দিয়েছেন সহমর্মিতার হাত। শিল্পের শক্তি দিয়েই এই নবীন প্রাণকে বাঁচাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। ঢাকার ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে ছন্দিত বর্ণের নিভৃত কথন শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীর শিল্পকর্মের বিক্রয়লব্ধ অর্থ ব্যয় করা হবে মাসুদা আহমেদ সাথীর চিকিৎসার্থে। শুক্রবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন খ্যাতিমান দুই শিল্পী মনিরুল ইসলাম ও সৈয়দ আবুল বারক্্ আলভী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাসুদা আহমেদ সাথী। আকাশে ভাসছে মেঘের রেখা। আর জমিনে দৃশ্যমান বালুতটের তীরঘেঁষা জলরাশি। সেই তীরে এসে ভিড়েছে একটি তরী। ওই নদীতীর ধরে এগিয়ে চলেছে দুই প্রান্তিকজন। জলরঙে এভাবেই নদীমাতৃক বাংলাদেশকে মেলে ধরে শিল্পী জামাল উদ্দীন আহমেদ। পাশের ছবিতেই দেখা যায়, গহীন জঙ্গলের মাঝে একরাশ স্বস্তি নিয়ে ঘুমিয়ে আছে এক নারী। হামিদুজ্জামান খানের ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়েছে মুখাবয়ব। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে এমন বহুমাত্রিক চিকর্মের সম্ভার। জলরং, তেলরং, মিশ্র মাধ্যম, এ্যাক্রেলিক ও ছাপচিত্রের সমন্বয় ঘটেছে এই শিল্প আয়োজনে। মূর্ত ও বিমূর্ত আঙ্গিকে বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে মানুষ, প্রকৃতি ও জীবনের গল্পকথা। মাসুদা আহমেদ সাথীর আঁকা কয়েকটি ছবিতে উদ্ভাসিত হয়েছে নিসর্গের নান্দনিকতা। গ্যালারি কসমসে আসিফ বাহাউদ্দীনের চিত্রপ্রদর্শনী ॥ রঙের উপর রং চাপিয়ে ক্যানভাস সাজান চিত্রশিল্পী আসিফ বাহাউদ্দীন সিকদার। বর্ণময় ছবিতে আধা-বিমূর্ত রীতিতে মেলে ধরেন বিষয়কে। চিত্রপটের আঙ্গিক ধরে ছুটে পরাবাস্তবতার পথে। দেখা জগতের সঙ্গে কল্পনার রঙে মিলিয়ে নেন অদেখা ভুবনকে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই শিল্পীর তেমন কিছু ছবি নিয়ে নিউ ডিওএইচএসের গ্যালারি কসমে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘রিয়েলি ডোন্ট মাইন এ লিটল বিট অব লোনসাম। জাদুঘরে চীনা নববর্ষ ও বাংলা বসন্ত ॥ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে ছিল চীনা চান্দ্র নববর্ষ ও বাংলা বসন্ত উদযাপনের আয়োজন। বাংলাদেশ-চীন সাংস্কৃতিক একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান। সাবেক সেনাপ্রধান ও আয়োজক সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের ডেপুটি চীফ (মিশন) ইয়াং শি ছাও। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বেপারী। ড. আকবর আলী খান বলেন, আমাদের বসন্ত আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার মাস, শোকের মাস। ফলে আমাদের বসন্ত সব সময়ই ‘রোদনভরা বসন্ত’। আমাদের বসন্ত যেমন শীতের পরে আসে, চীনের নববর্ষও শীতের পরে আসে। এই দুটিকে মিলিয়ে এই আয়োজন আমাদের নতুন সূর্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চীনের সাথে আমাদের হাজার বছরের সম্পর্ক। আমরা শুধু যে চীনের কাছ থেকে গ্রহণ করেছি এমন নয়। চীনকেও আমরা দিয়েছি। আমাদের অতীশ দীপঙ্কর চীনে গিয়ে ধর্ম ও জ্ঞান প্রচার করে এসেছেন। একুশে পদকজয়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ বক্তৃতার এক ফাঁকে খালি গলায় শোনান কাজী নজরুলের বসন্তের গান ‘এলো এই বনান্তে, পাগল বসন্ত’।
×