ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিসিটিভির আওতায় আসছে গোটা রাজধানী, বসছে মোবাইল ট্রেকার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ মার্চ ২০১৬

সিসিটিভির আওতায় আসছে গোটা রাজধানী, বসছে মোবাইল ট্রেকার

তপন বিশ্বাস ॥ রাজধানীকে তিলোত্তমা শহর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা হবে এই শহরের। সহনীয় থাকবে যানজট পরিস্থিতিও। এ লক্ষ্যে পুরো রাজধানী শহরকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় আনা হবে। বিভিন্ন স্থানে মোট ৩৩টি মোবাইল ট্রেকারও বসানো হচ্ছে। ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে রাজধানী শহরকে। যত্রতত্র পুলিশ চোখে পড়বে না। বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক সিটির আদলে ঢাকা শহরকে গড়ে তোলা হবে। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত সব নাগরিককে ‘ডাটাবেজের’ আওতায় আনার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের অপরাধ দিন দিন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এই অপরাধ মোকাবেলায় আমাদেরও প্রযুক্তি নির্ভর হতে হচ্ছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অপরাধ শনাক্ত (ডিটেক্ট) করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরো রাজধানী শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সার্ভে করা হচ্ছে। রাজপথের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গলি রাস্তাও এর আওতায় আনা হবে। এতে কোথাও কোন অপরাধ হলে এই ক্যামেরায় তা ধরা পড়বে। কোথাও অপরাধ হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেখানে হাজির হয়ে যাবে। একাধিক দিক থেকে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হাজির হয়ে অপরাধীকে গ্রেফতার করবে। এ লক্ষ্যে এলাকা ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম থাকবে। কন্ট্রোল রুমে বসে রাজধানীর পুলিশিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এখনকার মতো রাস্তা-ঘাটে কোন পুলিশ ডিউটি করবে না। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রস্তুত হয়ে পিক-আপে বসে থাকবে। কন্ট্রোল রুমের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে যাবে। এতে এক দিকে রাস্তায় ডিউটি করে পুলিশকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হবে না, তেমনি আগের চেয়ে নিরাপত্তা বেশি দিতে পারবে এই বাহিনী। সূত্র জানায়, এলাকা ভিত্তিক কন্ট্রোল রুম নিয়ন্ত্রণ করবে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাতে দায়িত্বে অবহেলা না থাকে সে লক্ষ্যে নিরাপত্তার চেন সিস্টেম থাকবে। শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নয়, কোথাও আগু লাগলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যাবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। রাস্তায় কোথাও যানজট তৈরি হলে সেখানে পুলিশ হাজির হয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করবে। এছাড়া রাস্তায় পুলিশ না থাকলেও কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলে তার কাছে জরিমানার ম্যাসেজ পাঠানো হবে। জরিমানা পরিশোধ না করলে নির্ধারিত সময়ের পর গাড়ি আটক করা হবে। রাজধানীর রাস্তায় চলাচলকারী সকল গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। এতে কোন গাড়ির অবস্থান রাস্তায় কোথায় তাও দেখা যাবে সিসিটিভির মাধ্যমে। কোন গাড়ি আটক করতে হলে গাড়ির অবস্থা জানা খুবই সহজ হয়ে যাবে। সিগন্যাল লাইটই নিয়ন্ত্রণ করবে সিগন্যাল ব্যবস্থা। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে এই সিগন্যাল ব্যবস্থা চালানো হবে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুরো ঢাকা শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে সার্ভে চলছে। তিনি বলেন, আগে সার্ভে না করে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইটের মাধ্যমে সিগন্যাল ব্যবস্থা চালাতে গিয়ে জ্যাম বেড়ে গিয়েছিল। তাই কোন কিছু শুরু করার আগে পর্যবেক্ষণ দরকার। সে কাজ চলছে। তিনি বলেন, অন্যান্য আধুনিক শহরের মতো আমরা ঢাকা শহরকে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, এখন যাচাই-বাছাই চলছে। খুব শীঘ্রর এর কার্যক্রম শুরু করা হবে। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে সমাজের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বেশি মাত্রায় ট্রাফিক আইন অমান্য করছেন। এটি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। এ নিয়ে তারা রীতিমতো বিব্রত। এই তালিকায় মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিকসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। তাদের দাবি, আইন মানাতে হলে সকলকেই মানতে হবে। সূত্র জানায়, সিসিটিভির পাশাপাশি রাজধানীতে মোট ৩৩টি পয়েন্টে মোবাইল ট্রেকার স্থাপন করা হবে। এই ট্রেকার সকল মোবাইলে কল রেকর্ড করবে এবং তাদের কথোপকথন বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। এতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা জঙ্গী তৎপরতা সংক্রান্ত কোন কথা বললে সে নম্বর চিহ্নিত করতে সিগন্যাল দেবে ওই ট্রেকার। সঙ্গে সঙ্গে কোন কোন নম্বর এই কথোপকথনে জড়িত তা চিহ্নিত হয়ে যাবে। আর কি কথা হয়েছে তাও রেকর্ড দেখে পাওয়া যাবে। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত সব নাগরিককে ‘ডাটাবেজের’ আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। বাড়ির মালিক, ভবন মালিক, ভাড়াটিয়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান মালিক ছাড়াও ছিন্নমূল নাগরিকের তথ্যও থাকবে পুলিশের কাছে। যদি কেউ ঢাকা শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যান, সে তথ্যও সংরক্ষণ করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। রাজধানীতে বসবাসরত নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জঙ্গী তৎপরতা রোধে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ ‘ ডেডলাইন’ নির্ধারণ করে দিয়ে পুলিশকে এ সময়ের মধ্যে তথ্য দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রায় এক মাস আগে থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের কাছে নির্ধারিত ফরম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ ফরম না পেয়ে থাকেন, সংশ্লিষ্ট থানা কিংবা এলাকায় কর্মরত বিট পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে তা সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে। সূত্র জানায়, এটি কার্যকর হলে পুলিশের প্রতি দেশের জনগণের আস্থা বাড়বে। বিনা প্রয়োজনে পুলিশের দারস্থ হতে হবে না। পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
×