ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোজার আগে বাজার সিন্ডিকেট রোধে নয়া উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ মার্চ ২০১৬

রোজার আগে বাজার সিন্ডিকেট রোধে নয়া উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ প্রাইস ফিক্সিং রোধে এবার রমজানের আগে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে। অবসরপ্রাপ্ত সচিব মর্যাদার কাউকে এ পদে নিয়োগ দিতে বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। বাছাইপ্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী মে মাসের মধ্যে চূড়ান্তভাবে এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে। চেয়ারম্যান নিয়োগের মধ্য দিয়ে দেশে প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপকৌশলের কারণে দীর্ঘ তিন বছরেও আইনটি কার্যকর হতে পারেনি। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও সরকারের এ উদ্যোগটি ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। জানা গেছে, এবারের রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ভোগ্যপণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে ট্যারিফ কমিশন। এছাড়া সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ওই সময় কী ধরনের পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করবে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও এলসি খোলার বিষয়টিও নজরে নেয়া হচ্ছে। আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর আমদানি যাতে ঠিক থাকে সে বিষয়েও ব্যবসায়ীদের তাগিদ দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রতিযোগিতা আইন কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইতোমধ্যে প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করতে হলে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে। তাই এ পদে কাউকে নিয়োগ দিতে বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। রমজানের আগেই চেয়ারম্যান পদে যোগ্যসম্পন্ন কাউকে নিয়োগ দেবে সরকার। তিনি বলেন, রমজান আসছে। ওই সময় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। আশা করছি, রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিকই থাকবে। জানা গেছে, প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যবিধি, নিয়ম এবং বিধি-বিধান প্রতিপালনে লোকবল নিয়োগ ও নতুন অফিস স্থাপনসহ পুরো বিষয়টি তিন বছর ধরে আটকে আছে লাল ফিতায়। অথচ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা সম্ভব হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে অভিমত রয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষায় গত বছরের ১৮ জুন ‘প্রতিযোগিতা বিল-২০১২’ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছিল। ওই আইনে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগিতা আইন সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ। এখন আইনটি বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্যের দরদাম পর্যবেক্ষণে এফবিসিসিআইতে একটি দ্রব্যমূল্য মনিটরিং টিম রয়েছে। বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে এ টিমটি বাজারে গিয়েও ব্যবসায়ীদের সঠিক দরদাম নির্ধারণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। কেউ কারসাজির আশ্রয় নিলে সাবধানও করা হয়। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারী উদ্যোগের বিকল্প কিছু নেই। শুধু তাই নয়, ভোক্তা স্বার্থে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে হবে। আশা করছি, দ্রুত প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়ন শুরু হবে। এদিকে ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট চক্র পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণে সবর্দা কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিশেষ করে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির জন্যও তারা দায়ী। কিন্তু এতকিছুর পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনী কোন হাতিয়ার সরকারের কাছে ছিল না। সে কারণেই গত ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন করা হয়। এ আইনের ওপর ভিত্তি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে একটা স্বাধীন প্রতিযোগিতা কমিশনও গঠন করা হবে। এ কমিশনের কাজ হবে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং একচেটিয়া ব্যবসা রুখে দিয়ে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করা। কমিশন বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গা, মূল্যের ওঠানামার ওপর নজর রাখা, অতিরিক্ত মুনাফার শিকার থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করা, বাজার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করা এবং সর্বোপরি ভোগ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করার কাজগুলোও করবে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি পণ্য অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পণ্যগুলো হচ্ছে- পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পামতেল, চিনি ও খাদ্য লবণ। এ ১৭টি পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও নিবন্ধন বাতিল এবং পণ্য বাজেয়াফত করার ঘোষণা রয়েছে। এসব পণ্য বিপণনের সকল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ এবং বিধি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসবের কিছুই মানছে না। সময়, সুযোগ ও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে হরহামেশা বাড়ানো হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজের পর এবার অব্যাহতভাবে রসুনের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
×