ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপা জিততে পারে বাংলাদেশই

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ মার্চ ২০১৬

শিরোপা জিততে পারে বাংলাদেশই

মিথুন আশরাফ ॥ এশিয়া কাপ তখনও শুরু হয়নি। কয়েক দিন বাকি। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলে দেন- ‘ফাইনালে উঠতে পারি, চ্যাম্পিয়নও হতে পারি।’ তখন তার কথাটি বিশ্বাস করার মতো লোক ছিল না। অথচ বাংলাদেশ এখন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলছে। এখন এটাও বিশ্বাস করতে হচ্ছে সবাইকে- ভারতকে হারিয়ে শিরোপাও জিতে যেতে পারে বাংলাদেশ! ‘আমরা বিশ্বাস করি, একটা দল যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আমরা যদি আমাদের মতো খেলি, তাহলে আমরা যে কোন দলকেই হারাতে পারি; যা আমরা প্রমাণ করেছি। ভারতকে সর্বশেষ সিরিজে আমরা হারিয়েছি। যদিও সেটা অন্য ফরমেট (ওয়ানডে) ছিল। তারপরও আমরা যদি ভুল কম করি, তাহলে আমাদের ভাল সম্ভাবনা আছে’- কথাগুলো শুক্রবার অনুশীলন শেষে বলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। তবে এটা দলের প্রত্যেকেরই কথা। তামিমের এ কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতকে হারাতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসী সুর যে তামিমের কণ্ঠে! যে সুর দলের সব ক্রিকেটারের মনেই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই পুরো টুর্নামেন্টে ভারত নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে দেখিয়েছে। শুধু এশিয়া কাপে কেন, টি২০তেই ভারত সেরা দল। তবে বাংলাদেশ যেভাবে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে, তাতে শুধু ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংই নয়, সঙ্গে আবেগ আর শক্ত মানসিকতাও যোগ হচ্ছে। তাতে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশই। আবেগ আর মানসিকতার শক্ত ভিত যে ভারতের নেই! কিভাবে? বাংলাদেশ ক্রিকেট পাগল জাতি। প্রতিটি মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সমর্থন জোগায়। সেটি ঘরে বসেও; স্টেডিয়ামে এসেও। সেই সমর্থন পুরোদমে বাংলাদেশের পক্ষে থাকায় স্টেডিয়ামে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ গর্জন ওঠে। সেই গর্জনে প্রতিপক্ষ খানিক হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাতে আবেগে পেছনেই থাকে প্রতিপক্ষ দল। ভারতের বিপক্ষে রবিবার ফাইনাল খেলাটি যেহেতু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে, সেখানেও নিশ্চয়ই সেই গর্জন উঠবে। ব্যাটিং বা বোলিং হোক, শুরুতেই যদি বাংলাদেশ ভাল খেলা প্রদর্শন করা শুরু করে, তাতে দর্শকদের গর্জনও যুক্ত হয়- তাহলে ভারত ক্রিকেটারদেরও সমস্যা হওয়ার কথা! এবার আসা যাক মানসিকতায়। পুরো টুর্নামেন্টে একটু একটু করে যেভাবে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ, তাতে এখন মানসিকভাবে অনেক এগিয়ে রয়েছে মাশরাফি বাহিনী। প্রথম ম্যাচটিতে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ, তা ঠিক। কিন্তু সেই ম্যাচেও জয়ের সম্ভাবনাই তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। যদি রোহিত শর্মার ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ না হতেন সাকিব, তাহলে ম্যাচই হয়ত বাংলাদেশ জিতে নিত! ভাল বোলিং করেও তা হয়নি। তার মানে বাংলাদেশের বোলিং শক্তিশালী। তবে পরের ম্যাচ থেকে আর হারেইনি বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে শুরুতে একটু বিপদ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু যেভাবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাতে বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভও যে শক্তিশালী, তার প্রমাণ মিলে গেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেতো সাব্বির রহমানের ব্যাটিংশৈলী দেখার সঙ্গে আল আমিন, সাকিব, তাসকিনদের বোলিং শিল্পও চোখে পড়েছে। পাকিস্তানকে যেভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ, তার প্রশংসা ক্রিকেট বিশ্বে এখনও চলছে। বিপদে পড়া সত্যেও কিভাবে একটি দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং জিতেও জেতে পারে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে সেটিই ধরা পড়েছে। এ ম্যাচেতো আবার ওপেনিংও শক্তিমত্তা দেখিয়ে দেয়। যে পজিশনটি নিয়ে টুর্নামেন্টজুড়েই ভয় ছিল, সে পজিশনেও শেষমুহূর্তে এসে দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বোলিংটা দুর্দান্ত করার সঙ্গে ব্যাটিংটাও সেদিন আকাশ ছুঁয়েছিল। ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নামা একজন ব্যাটসম্যানও (মাশরাফি) যখন একটি দলকে জিতিয়ে দিতে পারেন, সেই দলের ব্যাটিং শক্তি কতটা মানসিকভাবে শক্ত, তাও দেখা মিলেছে। ব্যাটিং-বোলিং বাংলাদেশের যে শক্ত, তা বোঝা গেছে। ফিল্ডিংটা নিয়ে একটু সমস্যা আছে এখনও, যা আবেগ আর মানসিকতার তোড়ে হারিয়ে যেতে বাধ্য! বাংলাদেশ যে টি২০তেও বদলে যাওয়া দলে পরিণত হয়েছে, তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে। দলটি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এমনই চাঙ্গা হয়েছে, যে কোন দলই এখন কাঁপতে বাধ্য। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ভারত ফেবারিট। তবে ফাইনালে এসে বাংলাদেশকে নিয়েও যে কেউ বাজি ধরতে পারে। দলটি যে মানসিক শক্তিতে ভারতকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। গত বছর ওয়ানডেতে যখন বাংলাদেশ বদলে যাওয়া দলে পরিণত হলো তখন যে প্রতিপক্ষই সামনে এসেছে- তারাই হেরেছে। ভারতও ছাড় পায়নি। এবার এশিয়া কাপ মনে হচ্ছে টি২০তেও বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে। যে বদলের হাওয়া ভারতের বিপক্ষে আবারও লাগতে পারে। আর সেই হাওয়া লাগলেই কাত হতে বাধ্য ভারত। একটি স্থানে দুর্বলতা আছে। বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাতি পেয়ে যাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান নেই। তবে তাসকিন, আল আমিন ও মাশরাফি মিলে যেভাবে পেস আক্রমণ সামাল দিচ্ছেন, তাতে সমস্যা হওয়ার কথা না। এর সঙ্গে স্পিনে সাকিব ও আরাফাত সানি আছেন। যদি প্রয়োজন পড়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ঝলক দেখাতে প্রস্তুত। যখনই ভারতের বিপক্ষে খেলা হয় বোলিংয়ে মাশরাফি ও ব্যাটিংয়ে তামিম যেন আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। এবারও যদি তাই হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনাই বেশি আছে। ব্যাটিংয়ে তামিমের সঙ্গে সৌম্য সরকার আছেন। শুরুতেই যে কোন একজন ভারত বোলারকে তুলোধুনো করতে পারলেই ‘মোমেন্টাম’ শুরু হয়ে যাবে। এরপর আছেন সাব্বির। যিনি এখন রীতিমতো প্রতিপক্ষের আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন। মুশফিকুর রহীম ঠিক টুর্নামেন্টে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। কে জানে, ফাইনালে ত্রাস ছড়ানোর জন্যই হয়ত নিজের কাছেই সব লুকিয়ে রেখেছেন। সাকিবও ইদানীং নিজেকে তুলে ধরতে পারছেন না। এমনও হতে পারে, সাকিবই হয়ে যেতে পারেন ফাইনালের নায়ক! পুরো টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়ে ফাইনালে এসে সব আলো হয়ত নিজের করে নিতে পারেন সাকিব। সে যোগ্যতা তার ভালই আছে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিয়মিতই দলকে ভরসা দিচ্ছেন। সেই ভরসা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও আছে। এরপর মিঠুন ও মাশরাফি আছেন। যে দুইজন ত্বড়িতগতিতে কিছু রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে সক্ষম। যেটি বাংলাদেশকে জেতাতেও কাজে লাগে। পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ আমিরের মতো বোলারকে টানা দুই বাউন্ডারি মেরে সে কাজটিই করেছিলেন মাশরাফি। তাতে বাংলাদেশ ফাইনালেই উঠে গেছে। পুরো জাতিকেই আবেগে ভাসিয়েছেন মাশরাফিরা। আর ক্রিকেটারদের মানসিকতা আরও শক্ত হয়ে উঠেছে। যে আবেগ আর মানসিকতা নেই ভারতের। কারণ খেলাটি হচ্ছে মিরপুরে। আর আবেগে ভাসার মতো দর্শকও পাবে না ভারত। মানসিকতা যতই শক্ত থাকুক ভারতের, টানা চার ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস এতই বেশি হয়ে গেছে, যেটির ভাটা ফাইনালে দেখা যেতে পারে। হতে পারে ফাইনালের দিনটিই ভারতের জন্য খারাপ দিন হয়ে উপস্থিত হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশেরই জয়ের সম্ভাবনা থাকছে। আর জিতলেই শিরোপা জয়ী হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
×