ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শহরের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে ‘সবুজে সুন্দর বগুড়া’ অভিযান

পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে গ্রীন বগুড়া কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৫ মার্চ ২০১৬

পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে গ্রীন বগুড়া কর্মসূচী

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ উত্তরের প্রাণকেন্দ্র ছোট্ট শহর বগুড়া এক সময় ছিল পরিচ্ছন্ন এক নগরী। সময়ের আবর্তে ও নগরমুখী প্রবণতাসহ বাণিজ্যিক কারণে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহরের সেই আবহ হারিয়েছে অনেক আগেই। সেই সঙ্গে ছোট্ট শহরের আয়তন বেড়ে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ পৌর এলাকা এখন বগুড়া। যানজট, ফুটপাথের দোকানিদের দৌরাত্ম্য আর পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় প্রাচীন এই শহরের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে ‘সবুজে সুন্দর বগুড়া’ অভিযান। যার নাম দেয়া হয়েছে ক্লিন বগুড়া গ্রীন বগুড়া। বগুড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ও তত্ত্ব¡াবধানে পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভাসহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সহযোগিতা-অংশগ্রহণে প্রথম পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতার পর এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান শুরু হবে আগামী ৬ মার্চ থেকে। এতে সরকারী দফতরের কর্মকতা-কর্মচারী, স্কাউট ও গার্লস গাইডের সদস্য, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ এনজিও কর্মীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বর্তমান প্রায় ৬৯ বর্গকিলোমিটারের বগুড়া পৌর এলাকার আয়তন এক সময় ছিল প্রায় ১৪ বর্গকিলোমিটার। আয়তন বাড়ার সঙ্গে জনবসতির ঘনত্বও বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে সে অনুযায়ী বাড়েনি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। আবর্জনার স্তূপ এখন উন্মুক্ত ভাগাড়। সাতমাথা থেকে প্রধান বাণিজ্যিক সড়ক যানজটে প্রায় সময়ই স্থবির থাকে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে জলেশ্বরতলা, শেরপুর রোড, পার্ক রোড চকযাদু সড়ক ও রাজাবাজারসহ শহরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়কে। এর সঙ্গে রয়েছে অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে হকার এবং ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানের দৌরাত্ম্য। এতে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথাসহ আশপাশের সড়ক দিয়ে পথচলায় মুশকিল। সন্ধ্যার পর ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান ও হকারদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক পরিবেশ ও নগরজীবন যাত্রায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। এসব দুর্ভোগ নিরসন ও বগুড়াকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে তুলে ধরতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। এর পুরো ভাগে রয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন। এই উদ্যোগের সমর্থনে পৌরসভা পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ৩টি মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মডেল হিসেবে শহরের কেন্দ্রস্থলকে বেছে নেয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি আশপাশ এলাকায় লালদাগ দিয়ে চিহ্ন এঁকে পরিচ্ছন্ন এলাকা হিসেবে গ্রীন জোন ঘোষণা করে এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়েছে। এই মডেল এলাকায় ফুটপাথের দোকান উচ্ছেদ, যানজট নিরসনে বিশেষ তৎপরতায় সাতমাথা এলাকা এখন যানজটমুক্ত অবস্থায় পৌঁছাতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে শহরে চলছে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিক্সা চলাচল বন্ধের অভিযান। দ্বিতীয় পর্যায়ে সকলের অংশগ্রহণে শুরু হবে পরিচ্ছন্ন অভিযান। এতে শহরের রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলার অপসারণযোগ্য বাক্স রাখা হবে। এ ব্যবস্থায় বক্সে রাখা পলিথিনের মোড়ক আবর্জনা পূর্ণ হলো সরিয়ে ফেলা হবে। আর ধুলাবালি মুক্ত রাখতে পৌরসভার সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পানি ছিটানো ও রাস্তা ধোয়ার ব্যবস্থা থাকছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে জলেশ্বরীতলা এলাক হয়ে ২নং রেলগেট পর্যন্ত এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পর্যায়ক্রমে অভিযানের আওতা গোটা শহরব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে শহরকে ক্লিন বগুড়া গ্রীন বগুড়া এলাকা হিসাবে প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ খোরশেদ আলম। জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিচ্ছন্ন অভিযানে রাস্তার পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ শহরকে যানজটমুক্ত করতে বড় পরিসরে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে। অভিযানের পাশাপাশি এর অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
×