ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৫ মার্চ ২০১৬

বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা

বসন্তের আগমনে শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির জড়তা কেটে যায়, চারদিকে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। কোকিলের কণ্ঠে কুহু রব ফিরে আসে। বসন্ত শুরু হলেই নাকি সাপের শীতনিদ্রা ভাঙ্গে। বসন্তের হাওয়া লেগে গেলে ঘুমন্ত গাছে কুঁড়ি ফোটে ও নতুন পাতা দেখা দেয়। চারদিকে চলে সবুজের সমারোহ। কৃষ্ণচূড়ায় যেন ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যায়। আহা ফোটে ফুল ছোটে অলি- তোলে কতই গুঞ্জন। আর সবার মনে মনে কত না গানের কলি জেগে ওঠে। বসন্ত মানে রং। প্রেমিক প্রেমিকার মনে লাগায় যৌবনের রং। ভালবাসা জাগায় উভয়ের হৃদয়ে। বসন্ত মানে মাঠে মাঠে সুগন্ধি মৃত্তিকা ছেয়ে জেগে ওঠে সবুজ পল্লব ও রং বেরঙের ফুল। ভালবাসা আর চির যৌবনের সঙ্গে তুলনা করা হয় এই বসন্তকালকে। বসন্তে উদযাপিত হয় শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা। বসন্ত যে যৌবন এ কথা বোঝা যায় পংকজ কুমার মল্লিকের গাওয়া- ‘চৈত্র দিনের ঝরা পাতার পথে দিনগুলো মোর কোথায় গেলো’ কিংবা সত্য চৌধুরীর গাওয়া- ‘তোমার সে ডাকে ঝরা ফুল শাখে ফাগুন আসিবে ফিরে/মনে হবে কার প্রেম জেগে রয়... যেথা গান থেমে যায়...’ গানের কথাগুলো শুনলে। বসন্তে প্রিয়তমা’র মনে উঁকি দেয়- ‘তুমি বিনা এ ফাগুন বিফলে যায় কিংবা ‘আমি তোমারে ভুলি নাই ভুলি নাই প্রিয়া... মনে পড়ে সেই বন জ্যোস্নায় দেখা হয়েছিল তোমায় আমায় ...’। বসন্ত, যৌবন আর ভালবাসা যেন এক হয়ে আছে। এই ভালবাসা মুক্ত বিহঙ্গের মতো এই বিশ্বের চরাচরে, মানুষের হৃদয়ে, প্রকৃতির পরতে পরতে এর অবাধ বিচরণ। ভালবাসা আমাদেরকে শিখায় যুদ্ধ- বিগ্রহ, খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস আর প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আর এটাও এক ধরনের ভালবাসা বা প্রেম। বসন্ত মানেই ভালবাসা আর এই ভালবাসা আমাদেরকে দেখায় সুখী সুন্দর শান্তিপূর্ণ এক স্বপ্ন। বসন্তকালকে নিয়ে গান ও কবিতায় ভরে দিয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঋতুরাজ বসন্ত এলে তাই মনে পড়বেই- ‘নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল, বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল’; ‘বসন্ত তার গান লিখে যায় ধূলির পরে কী আদরে/ তাই সে ধুলা ওঠে হেসে বারে বারে নবীন বেশে’; ‘সেই তো বসন্ত ফিরে এলো, হৃদয়ের বসন্ত ফুরায় হায়রে’; ‘ফাল্গুন হাওয়ায় রঙে রঙে পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে/গোলাপ জবা পারুল পলাশ পারিজাতের বুকের পরে’; ‘ফাল্গুনের পূর্ণিমা এলো কার লিপি হাতে’; ‘বসন্তে আজ ধরার চিত্ত হলো উতলা, বুকের পরে দোলে দোলে দোলে রে তার পরান পুতলা’; ‘বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা/ বইল প্রাণে দক্ষিণ - হাওয়া আগুন জ্বালা’; ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে- ডালে ডালে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় রে’; ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে’; ‘রোদন ভরা এ বসন্ত সখী কখনও আসেনি বুঝি আগে’ - ইত্যাদি। ফাল্গুন এলেই শুরু হয় বসন্তকাল আর এই ফাল্গুনকে নিয়েই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর গানের দুটি চরণ হলো- ‘ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে-’। বসন্তের দিনে কোন এক কবরস্থানে নয়তো শ্মশান ঘাটে ঢুকে পড়লে মনে পড়বেই লোকান্তরিত প্রিয় মানুষের মুখখানি। এ জন্য শোকে বিহবল হয় পড়বেন কখনোবা। কৃষ্ণচূড়া তলে কোন কবর কিংবা সমাধি দেখে হয়তো ভাববেন, এ কি কোন ব্যর্থ প্রেমিকের সমাধি? আহা কত ফুল ছড়িয়ে রয়েছে সমাধিতে। নিজ হাতে ফুল ছিটিয়ে দিতে গিয়ে মনে পড়বে-‘সমাধিতে মোর ফুল ছড়াতে কে গো এলে, সমাধিতে মোর ... কতবার গিয়ে তব দ্বারে হায় ... মনে করো ভিখারি আমারে, ভিক্ষা নাহি দিলে তুমি ফিরায়েছো যারে...’ গানের এই কথাগুলো। তখন তো স্মৃতিতে জাগবে এই গানের অমর শিল্পী গৌরীকেদার ভট্টাচার্যের কথা। চট্টগ্রামের সন্তান এই গৌরীকেদার ভট্টাচার্য ১৯৪০ সালে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবিতে বাউল সাজেন। শেষ জীবনে তিনি তো যোগী হয়ে মন্দিরে মন্দিরে গান গাইতেন - তখনও তাঁর মনে ছিল বসন্ত। তিনি তো চির বসন্তের কণ্ঠশিল্পী। ফাল্গুন-চৈত্র নিয়ে এই বসন্তকাল তো প্রেমিক-প্রেমিকার মন দেয়া-নেয়ার ঋতু ক্ষণ, তাইতো ওদের মনে উঁকি দেয়- “আজ একটি গানের বীণা বাজবে বাজবে দুটি প্রাণে/মোর অনেক দিনের আশা আমি বলবো গানে গানে/ফাগুন হাওয়ার মতো আমি বলবো তোমার কানে কানে...” চির বসন্তের গানের এই চরণগুলো। বসন্তকালে ‘কুহু কুহু’ স্বরে ডাকে কোকিল। তখন তো নব পরিণীতা বধূ’র মন হয় উতলা। মন আনচান করে, করবেই না কেন, স্বামী বাসর রাতের পরের দিনই চলে গেছে দূর পরবাসে বহু দূরে সৌদি আরব নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোন দেশে। তখন তো নববধূটি গুনগুন করে গায়- ‘বনের কোকিল আর ডাকিস না তোর কুহু কুহু ডাক শুনিয়া পরান আমার রয় না ঘরে’ নয়তো ‘ও কোকিল ডাইকো না ডাইকো না ঐ কদম্ব ডালে শীত বসন্ত সুখের কালে।’ ফাল্গুন-চৈত্র নিয়েই বসন্তকাল এই ষড় ঋতুর বাংলাদেশে। যৌবনকে বসন্তের সঙ্গে তুলনা করে ‘গরমিল’ ছবির জন্য গীতিকার প্রণব রায় লিখলেন : ‘আমারও ভুবন হতে বসন্ত চলে যায় হারানো দিনের লাগি প্রেম তবু রহে জাগি।’ আর এই গানে কণ্ঠ দিয়ে নায়ক-গায়ক রবীন মজুমদার অমর হয়ে রইলেন। লিয়াকত হোসেন খোকন রূপনগর, ঢাকা নন-এমপিও শিক্ষক ভাগ্য বিড়ম্বিত জীবন শিক্ষক শিক্ষার কারিগর। জাতির মেরদ- যে শিক্ষকরা তিলে তিলে গড়ছেন-এমপিওভুক্তি না থাকায় আজ তারা অসহনীয় দুর্ভোগে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জাতির জন্য লজ্জার বিষয় এটি অথচ মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। কেন নিচ্ছেন না সে প্রশ্ন আজ প্রতিটা নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর, সঙ্গে সচেতন মহলেরও! এমপিওভুক্তির আশায় এই ভাগ্য বিড়ম্বিত শিক্ষকরা এক থেকে দেড় যুগ বিনা বেতনে শ্রম বিলিয়েও পাচ্ছেন না তাদের অধিকার, শ্রমের-ঘামের মূল্য। আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধানে শ্রমের মজুরি প্রদানের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। তাই কাউকে গতর খাটিয়ে মজুরি না দেয়া অনৈতিক, অপরাধও। ইসলামে শ্রমের মূল্য দিয়ে বলা হয়েছে-শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করার। অথচ এই আধুনিক বিশ্বের উন্নত সভ্যতায়ও বাংলাদেশে সর্বোচ্চ শিক্ষিত শ্রমিক শ্রেণীর শ্রমের কোনই মূল্য নেই। দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলনেও নেই কোন ফল, সার্থকতা দূরে থাক আশ্বাসটুকুও জোটেনি এই ভাগ্যাহত নন-এমপিও শিক্ষকদের। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সোয়া লাখ শিক্ষক যাদের শ্রম-ঘামে শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি হয়েছে তার কি কোন বিনিময় নেই? সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্বীকৃত শিক্ষক-কর্মচারীরা শত কষ্টের মাঝেও তাদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও সরকার নিয়ন্ত্রিত কারিক্যুলামে পাঠদান অব্যাহত রেখে শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে নিরলস শ্রম বিলিয়ে যাচ্ছেন আশায়-আশায় হয়ত একদিন স্বপ্ন পূরণ হবে তাদের এমপিওভুক্তির মাধ্যমে। এসব শিক্ষকের আন্দোলন-সংগ্রাম জীবিকার জন্য, তারপরও সরকারের নেই কোন দৃষ্টি। কি দোষ এসব হতভাগ্য শিক্ষকদের? এমন প্রশ্ন আজ নন-এমপিও শিক্ষকদের পরিবারের দুর্ভোগে পড়া সদস্যদের। অন্তত মৌলিক অধিকারের দু’একটি পূরণের আশ্বাসে এসব ভাগ্যাহতদের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করবেন এমন আশা নিয়ে তারা একাধিকবার রাজধানীসহ সারাদেশে দাবি তুলে ধরেছেন, রাজপথে রাত কাটিয়েছেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়েছেন তারপরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি, কারও কর্ণকুহরে পৌঁছেনি এসব শিক্ষকের আর্তচিৎকার। এভাবে কতদিন দায়ভার এড়িয়ে যাবে সরকারÑ আজও তা অজানা ভুক্তভোগীদের। নন-এমপিওভুক্তরা মজুরিবিহীন সময় পার করছেন চরম হতাশায়, কিন্তু বয়স তো বসে থাকছে না। যদি জীবন থেকে ১৫/২০ বছর বিনা বেতনে চলে যায় তবে কি হবে এই জীবনে? স্ত্রী-সন্তান অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে চরম দৈন্যতায়। বিষয়টি জরুরীভাবে সরকারের নজরে আসা দরকার বলে দাবি নন-এমপিওভুক্তদের। সফিউল্লাহ আনসারী ংযড়ভরঁষষধযধহংধৎর@মসধরষ.পড়স অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ ক্ষতি করতে পারে ভিটামিন অর্থ খাদ্য প্রাণ। খাদ্যের সহায়ক। কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্য না খেয়ে শুধু ভিটামিন খেলে কোন কাজ হয় না। পুষ্টিকর খাদ্য মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফলমূল এগুলো খাওয়ার জন্য সকলের ইচ্ছা থাকে। কিন্তু এই সকল খাদ্য দারিদ্র্যের কারণে অধিকাংশ লোকের কেনার ক্ষমতা থাকে না। তবে কম দামের সবুজ শাক-সবজিতেও ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ সবুজ শাক-সবজি খেলে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব মিটে যায়। শিশুদের উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ালে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে, এমনকি শিশু মারাও যেতে পারে। উল্লেখ্য অতিমাত্রায় খেলে যে বিষক্রিয়া হয় এবং মৃত্যুও হতে পরে এই তথ্য সর্বপ্রথম উত্তর মেরু অঞ্চলের অনুসন্ধানকারীরা শ্বেত ভল্লুকের লিভার খেয়ে অসুস্থ হওয়ায় এবং কিছু লোক মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারে। শ্বেত ভল্লুকের লিভারে অতিমাত্রায় (১২ মিলিগ্রাম-প্রতিগ্রামে) ভিটামিন ‘এ’ আছে। উত্তর মেরু অঞ্চলে এস্কিমোদের সেøজ (বরফের ওপরের টানার গাড়ি) টানার কুকুররা শ্বেত ভল্লুকের মাংস খায়, কিন্তু লিভার খায় না। কারণ ওখানে অতিমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে রাতকানা (ঘরমযঃ ইষরহফহবংং), কর্নিয়ায় ক্ষত (কবৎড়ঃড়সধষধপরধ), চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া (ঢবৎড়ঢ়যঃযধষসরধ), এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতি। যে এলাকায় অনেকের রাতকানা রোগ আছে, বুঝতে হবে সে এলাকায় জনগণের মধ্যে অপুষ্টি এবং ভিটামিন এ খাওয়ানো যেতে পরে। আমাদের দেশে অপুষ্টি আছে কিন্তু মারাত্মক রাতকানা (ইষরহবংং) হওয়ার মতো ভিটামিনের অভাব আছে এরকম কোন বড় এলাকা আছে বলে মনে হয় না। কারণ সবুজ এবং রঙ্গিন সবজির মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণ সব সময় খেতে না পারলেও সবজি থেকেও কিছু ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। আমার মতে, পুষ্টিকর খাদ্য না খাইয়ে শিশুদের প্রতি ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানোর ফলে পুষ্টির ক্ষেত্রে শিশুদের কোন উপকার হচ্ছে না। বরং এই টাকা দিয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের সরকার বিনামূল্যে সুষম শিশুখাদ্য বিতরণ করতে পারে। ডাঃ এএফএম আমিনুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম
×