ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও অপরাধ!

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৫ মার্চ ২০১৬

এখনও অপরাধ!

নারী ও পুরুষ দুই মিলে মানব প্রজাতি। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব ভাবা যায় না। তবু নারী হওয়ার কারণে একজন মানবসন্তানকে বিচিত্র বিড়ম্বনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এমনকি কন্যা সন্তানের জন্মদানের জন্য জননীকেও হেয় হতে হয়। দুঃখের বিষয় এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশেও ঘটে থাকে। তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত দীপালি ও তপতী। সম্প্রতি জনকণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে, যা পড়লে বিস্ময়ের পাশাপাশি ক্রোধেরও উদ্রেক ঘটে। দীপালি ও তপতী দুই জা, দু’জনারই তিন কন্যা সন্তান। দীপালি টাঙ্গাইলের মেয়ে আর তপতী বগুড়ার। স্বামী দুই ভাই চন্দ্র ও বাবলু কর্মকার। উভয় স্বামী তাদের নিজ নিজ স্ত্রীকে ফেলে ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। স্ত্রীদ্বয়ের অপরাধ হচ্ছে কন্যা সন্তান প্রসব! এখনও সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতার মানসিকতা স্বরূপ স্ত্রীর গর্ভে ছেলে সন্তান আশা করা হয়। প্রথম সন্তানটি মেয়ে হলে বহু পরিবারেই আনন্দে ভাটা পড়ে। পরে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সন্তানও মেয়ে হলে সন্তানদের জননীর জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়। কেন সে ছেলে সন্তানের জন্ম দিতে ‘ব্যর্থ হলো’- এই অপবাদ তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। গ্রামবাংলায় এই কারণে এখনও বহু নারীর ঘর ভেঙে যায়। অবাক হতে হয় একথা ভেবে যে, ছেলে সন্তান না হলে নারীকে যে পুরুষটি অবহেলা করে, সেই পুরুষের জন্মও যে একজন নারীরই গর্ভেÑ এটা কিভাবে বিস্মৃত হয় পুরুষটি! সন্তান তো সন্তানই! একজন নারী কতটা কষ্ট সহ্য করে একজন সন্তান জন্ম দেয়ার পরেও যখন কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে বিদ্রƒপতার শিকার হয়, তখন এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু থাকে না। সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে হবে এ ব্যাপারে দায়ী আসলে স্বামী-স্ত্রীরÑ ক্রোমোজম। বর্তমান সরকার নারীর অধিকার সুরক্ষায় কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। মনে হয় সময় এসেছে এমন একটি আইন তৈরির, যাতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়ার ‘অপরাধে’ নারীকে আর নিগৃহীত হতে না হয়। সেইসঙ্গে সন্তানের জন্মদান সংক্রান্ত বিজ্ঞানসম্মত তথ্যগুলো সহজ ভাষায় প্রতিটি নব দম্পতির কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
×