ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ণমালা সত্ত্বেও রাখাইন ভাষা মুখে মুখে

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৫ মার্চ ২০১৬

বর্ণমালা সত্ত্বেও রাখাইন ভাষা মুখে মুখে

নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও শত প্রতিকূলতার মাঝেও স্বমহিমায় টিকে আছে পটুয়াখালীর আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা। কেবলমাত্র ব্যক্তি এবং পারিবারিকভাবে তারা সযতেœ লালন করছে নিজেদের ভাষা। মুখে মুখেই টিকিয়ে রেখেছে মাতৃভাষা। পটুয়াখালী এবং বরগুনার উপকূলে রাখাইন সমাজ দীর্ঘ আড়াই শ’ বছর ধরে বসবাস করছে। ১৭৮৪ সালের অক্টোবর মাসে আরাকান (বর্তমান মিয়ানমার) থেকে বিতাড়িত হয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে দেড় শ’ রাখাইন পরিবার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। সে সময়ে রাঙ্গাবালী ছিল শুধুই দ্বীপ। পরবর্তীতে রাখাইনরা পটুয়াখালী ও বরগুনার কয়েকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, রাখাইনদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত আরেক আদিবাসী মারমাদের ভাষার সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে। যদিও মারমা এবং রাখাইনরা পৃথক দুটি জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। মারমারা কখনই নিজেদের রাখাইন বলতে রাজি নয়। রাখাইনরাও নিজেদের মারমা বলে না। এরপরেও রাখাইন এবং মারমাদের লেখার বর্ণ প্রায় একই রকমের। কেবলমাত্র ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কিছু অমিল লক্ষ্য করা যায়। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে পটুয়াখালীর রাখাইন ভাষায় দুটি উপ-ভাষার প্রচলন রয়েছে, যা আঞ্চলিক ভাবে ‘র‌্যামরা’ এবং ‘মারৌও’ হিসেবে পরিচিত। রাখাইনদের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, লৌকিকতা, আচার-আচরণ, প্রথাসহ সবকিছুতেই রয়েছে সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার, যা তাঁরা হাজার বছর ধরে বহন করে আসছে। অন্যান্য প্রথার পাশাপাশি রাখাইনরা তাদের মাতৃভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্যও যুগ যুগ ধরে নানাভাবে সংরক্ষণের চেষ্টা করে আসছে। এক সময়ে এ অঞ্চলে প্রায় প্রত্যেকটি পাড়ায় বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করা হয়। বৌদ্ধ মন্দিরকে বলা হয় ‘কিয়াং’। প্রত্যেকটি কিয়াংয়ে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নিয়োগ দেয়া হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রতিদিন সকাল-বিকাল রাখাইন শিশুদের নিয়ে টোল ঘরে পাঠশালা খুলে বসতেন। এখানে রাখাইন শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষা এবং ধর্ম শিক্ষা দেয়া হতো। প্রতিটি রাখাইন শিশুর জন্য ধর্ম ও মাতৃভাষা চর্চা ছিল বাধ্যতামূলক। এভাবেই রাখাইনরা তাঁদের মাতৃভাষার ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। কিন্তু গত কয়েক দশকে বৌদ্ধ মন্দির বা কিয়াংয়ের সংখ্যা কমে এসেছে। বর্তমানে বরগুনা-পটুয়াখালীতে মাত্র ৫/৬টি বড় আকারের কিয়াং রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সে সঙ্গে মাতৃভাষার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চাও বন্ধ হয়ে গেছে। -শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×