ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিন্দু পানি রক্ষাই যার কাজ

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৪ মার্চ ২০১৬

বিন্দু পানি রক্ষাই যার কাজ

৪০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছালেন ভারতের ব্যস্ত নগরী মুম্বাইয়ের মিরা রোডের একটি বিশাল এ্যাপার্টমেন্টে। দালানটিতে থাকা ৫৬টি ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটিতে পর্যায়ক্রমে যান তিনি। প্রত্যেক ফ্ল্যাটে গিয়েই তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার বাসার পানির কলগুলো ঠিক আছে তো?’। কেউ যখন তাকে জানান যে, তাদের বাসার পানির কল ঠিক আাছে তখন তিনি ওই ফ্ল্যাট মালিকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে চলে যান অন্য ফ্ল্যাটে। আর যাদের পানির কলে সমস্যা থাকে, তাদের কলটি নিজ উদ্যোগেই সেরে দেন তিনি। এভাবেই প্রতি রবিবার এই ৮০ বছর বয়সী মানুষটি শহরের বিভিন্ন দালান থেকে দালানে যান পানির কল ঠিক করার জন্য। কে এই বৃদ্ধ? মুম্বাইয়ের পানির কল সারাই করা বৃদ্ধের নাম আবিদ সুরতি। ভারতের বিখ্যাত কার্টুনিস্ট, শিল্পী এবং আশিটি বইয়ের লেখক আবিদ সুরতি আজ অনেক বছর ধরেই পানির অপচয় রোধে নিজে উদ্যোগী হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। গুণী এই মানুষটি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পরিবারগুলোর কল ঠিক করে দিয়ে আসেন। এমনও হয়, যদি কোন পরিবারের পানির কল খারাপ থাকে তিনি নিজের পয়সায় সেখানে কল লাগিয়ে দিয়ে আসেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে পানির কল সারাইয়ের বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলেন আবিদ সুরতি। সেই আলাপের এক স্থানে তিনি জানান, ‘আমি যখনই আমার কোন বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যেতাম কানে আসত বিন্দু বিন্দু পানি পড়ার শব্দ। আমি তাদের কলটি ঠিক করে নিতে বলতাম।’ অবশ্য আমাদের এই শিল্পী পানির কল ঠিক করার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার কারণ কিন্তু অনেক গভীর। এই মুম্বাই শহরেরই একেবারে প্রান্তিকে শৈশব কেটেছে আবিদ সুরতির। তার মা এক বালতি পানির জন্য ভোর চারটার সময় উঠে মূল সড়কে যেতেন। সেই শৈশব থেকেই তিনি দেখেছেন পানির জন্য কতটা কষ্ট করতে হয় মানুষকে। আজও সেই স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। ‘এক ফোটা পানির জন্য মানুষকে আমি মারামারি করতে দেখেছি। আজ যখন কোথাও এক ফোটা পানিও অপচয় হতে দেখি তখন আমার শৈশবের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায়। আমার মাথায় পানি অপচয়ের দৃশ্য আসলেই খুব অস্থির লাগে। এটা ভাবতেই পারি না যে কেউ স্রেফ বেখেয়ালবশত এক হাজার লিটার পানি স্রেফ নর্দমায় ফেলে দিচ্ছে।’ পানির সমস্যা নিরসন ও মানুষকে সচেতন করতে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ড্রপ ডেড ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বে-সরকারি সংস্থা। সংস্থায় তিনিই একমাত্র কর্মী আর সেøাগানও একটি। আর সেই সেøাগানটি হলো, ‘প্রতি ফোটা পানি বাঁচাও অথবা অকাল মৃত্যুবরণ কর’। কাজের সুবিধার জন্য তিনি একজন মানুষকে ভাড়া করেন, যার কাজ হলো ত্রুটিযুক্ত পানির কলগুলোকে ঠিক করা। যেদিন আবিদ ফাউন্ডেশন খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন ঠিক তার পরের দিনই তিনি খবর পেলেন যে, তিনি একটি পুরস্কার পেয়েছেন এবং সেই পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ এক লাখ রুপি। আর মজার বিষয় হলো, সেই অর্থ দিয়েই তিনি শুরু করেন তার কাজ। শুরুর দিকে স্বেচ্ছাসেবক ও নারী কর্মীটিকে প্রতিদিন পাঁচ শ’ টাকা দিতেন তিনি। কিন্তু একটা সময় ওই স্বেচ্ছাসেবীরা তার কাছ থেকে টাকা নিতে চাইত না। বাংলা মেইল
×