ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোস্টারে শান্তির বার্তা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৪ মার্চ ২০১৬

পোস্টারে শান্তির বার্তা

সাধারণ মানুষ সবসময় শান্তির পক্ষে। যুদ্ধের বিপক্ষে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই শান্তি প্রিয়। আর তাই পৃথিবীর কোন একপ্রান্তে যুদ্ধ হলে ঠিক বিপরীত প্রান্তেও চলে যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান কর্মসূচী। কত সে প্রতিবাদের ভাষা, কত মাধ্যম। কখনও সেই রাগ-ক্ষোভের বহির্প্রকাশে জ্বলে পুষপুত্তলিকা, কখনও বা সেই রাগ-ক্ষোভের ভাষা ফুটে ওঠে পোস্টারে। এই পোস্টার-পুষপুত্তলিকার শুরু কবে হয়েছিল ঠিক জানা যায়নি, তবে ’৭০-এর দশকে আমেরিকায় মানবতার পক্ষে এ ধরনের অবস্থান কর্মসূচী জনপ্রিয়তা পায়। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। চলছিল ভিয়েতমান যুদ্ধ। আমেরিকার ওহিও অঙ্গরাজ্যের কেন্ট সেস্ট ইউনিভার্সিটির নাম না জানা চার তরুণ ছাত্র প্রতিবাদ করেছিল প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে ইউনিভার্সিটির দেয়ালে পোস্টার সেটে। অর্থাৎ যুদ্ধ বন্ধ করা হোক। এর পরের ইতিহাস আরও নির্মম। পোস্টার সাঁটার মাত্র ১৩ সেকেন্ডের মাথায় সেই চার ছাত্রকে গুলি করে মারা হয়। সঙ্গে থাকা আরও আটজন গুরুতর আহত হয়। এরপর থেকে আমেরিকাসহ সারা পৃথিবীতে ‘পোস্টার’ প্রতিবাদ জানানোর অন্যতম মাধ্যম। গত তিন ফেব্রুয়ারি ’৭০-এর দশকে শুরু হওয়া ‘পোস্টার প্রতিবাদ’ এর এক প্রদর্শনী হয়ে গেল লন্ডনে। প্রদর্শনীর নাম দেয়া হয়েছিল ‘আমেরিকা ইন রিভোল্ট দ্য আর্ট অব পোস্টার’। এই প্রদর্শনীতে স্থান পায় বাছাই করা ৫০টি পোস্টার। যার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছিলেন ছাত্ররা। এই প্রদর্শনীর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন বেরি মিলস। আসুন জেনে নেই আলোচিত কয়েকটি পোস্টারের পেছনের গল্প। আমেরিকান ফ্লাগঃ ১৯৭০ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকার জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ হিসেব করে করা হয়েছিল পোস্টারটি। সিল্ক কাপড়ের ওপর নীল, লাল এবং সাদা রঙের খেলা। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে পতাকা কি বলছে! পতাকার পুরোটা অংশজুড়েই জীবনঘাতী বন্দুক আর উপরের বায়ে সারি সারি যুদ্ধবিমান ধেঁয়ে আসছে ভিয়েতনামবাসীর ওপর। আমেরিকা ডেরোভিং ইটস চিলড্রেন ঃ ১৯৭০ সালে আমেরিকার বাচ্চাদের গোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে এক ডাইনি। কে এই ডাইনি? গ্রিক পুরান মতে, গোইয়া শয়তান খেয়ে ফেলছে তার বাচ্চাকে। যেখানে আমেরিকার রাজত্ব সারা পৃথিবীব্যাপী। অন্তনিহিত অর্থ দাঁড়ায় খোদ আমেরিকা নিজেই। সিল্ক কাপড়ের ওপর লাল, সবুজ আর সাদা রঙের ডাইনি। ডোন্ট বি এ সাইলেন্ট পার্ট অফ দ্য ওয়ার মেশিন, স্পিক আউট এগেনিস্ট কম্বোডিয়া ঃ কম্বোডিয়ায় তখন যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের প্রতিবাদে সাঁটা হয় পোস্টারটি। সিল্ক কাপড়ের ওপর নীল রঙের লেখা। পিচ নাওঃ শান্তি চাই, আমরা যুদ্ধের শুধু বিপক্ষেই না বরং বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের অবস্থান নিয়ে নিয়েছি। সেদিনের এই পোস্টারটি এই খবরই বলে দিয়েছিল। সিল্ক কাপড়ের ওপর কমলা রঙের লিখা ‘পিচ নাও’ তার ঠিক মাঝ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে শান্তির পায়রা। পিচ ইজ প্যট্রিয়টিকঃ দেশ প্রেম কথাটির খুব সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে যায় বাক্যটি। সিল্ক কাপড়ের ওপর নীলের ফেড দিয়ে লেখা আর ভেতরে আমেরিকার পতাকার গঠন। পোস্টারটি ’৭০-এর দশকে যুদ্ধের বিপক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি নিজ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দেয়। এই উদ্দেশ্যেই পোস্টারটি সাঁটা হয়েছিল। বয়কট ওয়ার প্রোফিটারঃ প্রবাদে বলে, ‘ঘবৎড় ঋরফফষবফ ডযরষব জড়সব ইঁৎহবফ’ কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। যুদ্ধে এক শ্রেণীর মানুষ খুব লাভবান হয়। সিল্ক কাপড়ের ওপর সবুজ রঙের প্রতিবাদ বাক্য তার ভেতর এক ডলার তবে জর্জ ওয়াশিংটনের মুখ বাঁধা। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এটি সাঁটা হয়েছিল। ডাজ হি ডেসট্রয় ইয়র ওয়ে অফ লাইফঃ পোস্টারটি মোটেও সাধারণ কোন পোস্টার নয়। কথা আর ছবি দিয়ে যাচ্ছে জীবনের ডাক। কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। জীবনের পথে না ধ্বংসের পথে। ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া যুদ্ধের সময় হলুদ রঙের সিল্ক কাপড়ের ওপর করা হয় পোস্টারটি। যেখানে একটি ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের পেছনে ছুটে চলেছে কৃষক। টুটুল মাহফুজ
×