ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁটতে হবে আরও অনেক পথ...

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৪ মার্চ ২০১৬

হাঁটতে হবে আরও অনেক পথ...

নারীদের সাফল্যের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে বহির্বিশ্বে’ তামান্না সারোয়ার ম্যানেজার, কম্প্লায়েন্স বিভাগ গ্যাপ ইনকর্পোরেশন, বাংলাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্যের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারীদের পদচারণা দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। কর্পোরেট সেক্টরে, রাজনীতিতে, সমাজসেবায়, গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পে, প্রতিরক্ষা কাজে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে, খেলাধুলায়, পর্বতশৃঙ্গ জয়সহ দুঃসাহসী অভিযানে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের নারীরা তাদের সাহসী অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী পাইলট হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের নারী অগ্রযাত্রার অন্যতম দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রাপ্তি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারীর দুঃসাহসিক অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ। বীরাঙ্গনাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি প্রদান আমাদের দায়বদ্ধতারই অর্জন। সবশেষে বলব, কেবলমাত্র সংসারেই নয়, সুযোগ পেলে বাংলাদেশের নারীরা অনুগত, দায়িত্বশীল, ধৈর্যশীল, সাহসী, প্রতিভাবান, দক্ষ এবং মেধাবীর স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম সর্বত্র এবং প্রতিনিয়ত। কারণ, সম্ভাবনা সকলের মাঝেই থাকে, কম এবং বেশি। সেই সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করতে হলে সহযোগিতা দরকার পরিবার, রাষ্ট্র এবং সমাজের কাছ থেকে। ‘নারী জীবনে কতখানি সফল সেটা নিরূপণের মাপকাঠি সময়ই বলে দেবে ডাঃ বন্দনা চক্রবর্তী সিনিয়র ফিজিশিয়ান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল হাসপাতাল, বাংলাদেশ আমরা বাংলাদেশে শুধু নারী দিবসই নয়, বেগম রোকেয়া দিবস, শিশু কন্যাসন্তান দিবস ইত্যাদি অনেক দিবসই পালন করি। কিন্তু এসব দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা কেন এসেছে সেটা একটু ভাবলেই আমরা পেয়ে যাই। নারী জীবনে কতখানি সফল সেটা নিরূপণের মাপকাঠি সময়ই বলে দেবে, বলে দেবে তার কর্ম। যে নারী আজ সংগ্রামী, পরিবারের অন্য উপার্জনক্ষম সদস্য থাকতেও যাকে তার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে পরিবারের দায়িত্ব, তাকেই জীবিকার প্রয়োজনে অনেকের সঙ্গে চলতে হয়, অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামলাতে হয় বা নিজের কাজের জায়গাটিকে নিজের সুবিধা মতোই চলতে দিতে হয়। এ চিত্র আধুনিক শিক্ষিত সমাজে যেমন আছে, তেমনি আছে খেটে খাওয়া তৃণমূল নারীর সমাজেও। বাংলার নারীরা আজ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। ‘নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে’ কুমকুম সাজিয়া কুতুবউদ্দিন রিজিওনাল লিডার (সাউথ এশিয়া) পিভিএইচ, ফারইস্ট লি. (বাংলাদেশ) এদেশের মেয়েদের অনেক বেশি ংঃৎঁমমষব করতে হয় কোন কিছু অর্জন করতে। তবে এই বৈষম্যের চিত্র ৫-১০ বছর আগে যা ছিল; এখন অনেক কমেছে। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ কুসংস্কার, পশ্চাত্পদ দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতা। এসব মোকাবেলা করেই নারীদের অগ্রসর হতে হচ্ছে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে হচ্ছে। পদে পদে বাধা, তার পরও বাংলাদেশের মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। যারা এগিয়ে আছে এবং যারা পিছিয়ে আছে, এই দুইয়ের অন্যতম কারণ যথার্থ শিক্ষা এবং সুযোগ। যা নারীকে দেয় তাঁর পরিবার, রাষ্ট্র এবং সমাজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দারিদ্র্য কিংবা পারিবারিক এবং সামাজিক কুসংস্কার এবং নারীর প্রতি বিদ্বেষ নারীর অগ্রযাত্রার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে আমাদের নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের নারীর সর্বক্ষেত্রে সাফল্য অবধারিত। ‘নারীদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে’ নাভা মেহজাবিন রহমান চেয়ারপার্সন, ইংরেজী বিভাগ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ। আসলে একজন নারীকে সবার আগে নিজের অধিকার বোধ বুঝে নিতে হলেও শিক্ষিত হতে হবে। আমাদের নারীদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। হয়ত বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়ে কর্মক্ষেত্রে জড়াতে পারে না বা সুযোগ হয়ে ওঠে না। দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক কাঠামো ইত্যাদি নানা কারণই এর পেছনে কাজ করতে পারে। নারীরা ন্যায্য অধিকারের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। শুরুর দিকে নারী দিবস স্বল্প পরিসরে পালিত হতো। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দিবসকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ‘চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে’ মাসুদা বেগম ম্যানেজার, ইথিক্যাল ট্রেড টেসকো, বাংলাদেশ। শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন। ব্যাংক সেক্টর, এনজিও সেক্টর কিংবা বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে নারী। কারণ, যে কোন কাজে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি দায়িত্বশীল। গ্রাম বা মফস্বলের মেয়েরাও আজ শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক শিক্ষিত হচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। তবে এদেশের নারীদের সবক্ষেত্রে পড়হভরফবহঃ ও বীঢ়বৎরবহপব কে কাজে লাগাতে হবে। চ্যলেঞ্জ গ্রহণ করার মন-মানসিকতা থাকতে হবে। সর্বোপরি তাদের মধ্যে, ঈধহ ফড় ধঃঃরঃঁফব থাকতে হবে। ‘হেঁটেছি অনেক; আরও হাঁটতে হবে অনেক পথ’ ওয়ার্দা রিহ্যাব মনিপুরী নৃত্যশিল্পী ও প্রশিক্ষক ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার,বাংলাদেশ ইতিবাচক নেতিবাচক সম্ভাবনা সঙ্কট অর্জন সীমাবদ্ধতার মাঝেই বাংলাদেশের নারীরা অগ্রসর হচ্ছে। পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন আছে, বৈষম্য আছে, নিরাপত্তাহীনতা আছে, তথাপি এদেশের সাধারণ মেয়েরা বিপুল সংখ্যায় সামাজিক কাজে, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে শিক্ষা ও চ্যালেঞ্জিং পেশার কাজে এগিয়ে আসছে, বাধা মোকাবেলা করেই অগ্রসর হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এটাই বাংলাদেশের সমাজ-প্রগতির ক্ষেত্রে নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে আশার আলোরেখা। আমরা অর্থাৎ নারীরা হেঁটেছি অনেক; আরও হাঁটতে হবে অনেক পথ।
×