ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লিয়াকত আলীর জবানবন্দী

সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচার বাম পা ভেঙ্গে দেয় ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ মার্চ ২০১৬

সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচার বাম পা ভেঙ্গে দেয় ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির নেতা ও যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ লিয়াকত আলী শেখ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন সাখাওয়াত নিজ হাতে আমার চাচা মিরন শেখের বাম পা মুচড়িয়ে ভেঙ্গে দেয়। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ৭ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের রাজাকার আকমল আলী তালুকদারসহ ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীর জবানবন্দী পেশ ও জেরার সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর শেখ মুশফিক কবির ও রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আর আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান ও আব্দুস শুকুর। সাখাওয়াতের মামলার প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ লিয়াকত আলী শেখ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৯ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম মহাদেবপুর, থানা কেশবপুর, জেলা যশোর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমি, আমাদের গ্রামের নুরুল ইসলাম খোকন, ফজর আলী, আব্দুল মোতালেব, মোঃ তহিদুজ্জামানসহ আরও ১০/১২ জন মিলে ২৩ এপ্রিল মুক্তিদ্ধের ট্রেনিং নিতে ভারতের বসিরহাটে যাই। সেখানে ট্রেনিং শেষে আমি ১০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে হাকিমপুর বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশের কলারোয়া থানাধীন খোরদো গ্রামে অবস্থান নেই। এখান থেকে আমরা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেই। সাক্ষী তার জবানবন্দী সোর্স মারফত আমি জানতে পারি যে, আমার চাচা মিরন আলী শেখকে রাজাকাররা গুলি করে আহত করে ও অমানুসিক নির্যাতন করেছে। আরও জানতে পারি যে, সে ভারতের টাকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি ও সহযোগী ২/৩ মুক্তিযোদ্ধাসহ টাকি হাসপাতালে চাচাকে দেখার জন্য যাই। হাসপাতালে দেখি মিরন শেখের বাম হাতে ও বাম পায়ে ব্যান্ডেজ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। মিরন শেখ আমাকে জানায়, চিংড়া বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে রাজাকার ইব্রাহিম, লুৎফরসহ অন্য রাজাকাররা মিরন শেখকে অমানুসিক নির্যাতন করে। এর ফলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফিরলে রাজাকার সাখাওয়াত হোসেন মিরন শেখের কাছে আমিসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য জানতে চায়। তথ্য না দিলে আসামি সাখাওয়াত হোসেন মিরন শেখের বাম পা মুুচড়িয়ে ভেঙ্গে দেয়। অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মৌলভীবাজারের আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন প্রসিকিউশন পক্ষ। তাদের সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ৫ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এই চার রাজাকারের মধ্যে একমাত্র আকমল আলী তালুকদার কারাগারে আটক রয়েছেন। অন্য তিন জন পলাতক রয়েছেন। এরা হলোÑ আব্দুল নুর তালুকদার, আনিস মিয়া ও আব্দুল মুসাব্বির মিয়া। আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার আসামি আকমল আলী তালুকদারের জামিনের আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
×