ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে ডাঃ জাফরুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৪ মার্চ ২০১৬

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে  ডাঃ জাফরুল্লাহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে তাঁর সম্পদের বিবরণী জমা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, সম্পদের বিবরণী জমা দিয়ে অন্য বিচারপতিদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। এতে আপনার মর্যাদা বাড়বে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় ডাঃ জাফরুল্লাহ এ কথা বলেন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ স্মরণে ঐতিহাসিক ৩ মার্চ উদ্যাপন কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিচার বিভাগ সম্পর্কে কিছু বলা বা লেখার আগে সাবধান হতে। আমি বলি, এসব কথা বলার আগে আপনি নিজেও একটু সাবধান হোন। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন মেগা প্রজেক্টের যুগ। আর মেগা প্রজেক্ট মানেই মেগা দুর্নীতি। এসব নিয়ে কথা বললেই আবার আইসিটি এ্যাক্ট। সংসদে আইন পাস হয়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হলে ৫ বছরের জেল। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র হলে কার জেল হবে। সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবও বক্তৃতা করেন। আয়োজক কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে একাত্তরের ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাজাহান সিরাজ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেত্রী রাবেয়া সিরাজ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শাজাহান সিরাজের কন্যা ব্যারিস্টার শুক্লা সারওয়ার সিরাজ। ঢাকা-দিল্লী বজায় রাখতে তৎপর হচ্ছে সরকার। বিশেষ করে ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শাসন থাকায় কয়েকটি হিন্দু উগ্রপন্থী দলের দৌরাত্ম্যের কথা বিবেচনায় রাখছে সরকার। সম্প্রতি এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার সঙ্গে কলকাতায় বিজেপি ও হিন্দু উগ্রবাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) গোপন বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সংখ্যালঘুদের ওপর কয়েকটি হামলার ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আরও জোর দেয়া হয়। ভারতের ইংরেজী দৈনিক দি টেলিগ্রাফে এ বৈঠক নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। গত সপ্তাহে কলকাতার কাছাকাছি একটি রিসোর্টে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্ত এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাতের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে বিজেপির যুগ্ম জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম লাল এ গোপন বৈঠকের আয়োজন করেন। তবে দিল্লীর একটি সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ ও বিজেপির সঙ্গে আলোচনার জন্য বৈঠকের মূল উদ্যোক্তা হলেন হিন্দু উগ্রবাদী দল আরএসএসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দত্তত্রীয় হাসবোলে। নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী দলের সংযোগ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, কট্টরপন্থী আরএসএস ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি পশ্চিমবঙ্গে একটি ছক তৈরি করছে। ভারতের মুসলিম ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা তাদের অন্যতম লক্ষ্য। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি মনে করে, অনেক হিন্দু কেবল বাধ্য হয়ে মুসলমান কিংবা খ্রীস্টান হয়েছে। ফলে একটি প্রকৃত হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু-মুসলমানদের আবার ‘ঘরে ফিরিয়ে’ আনতে হবে। আরএসএসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দত্তত্রীয় হাসবোলে মনে করেন, সংস্কারের অংশ হিসেবে তারা প্রাথমিকভাবে সফল। এর আগে নির্বাচনী প্রচারে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ভারত ছাড়া করার হুঁশিয়ারি দেয়ার পর তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। আরএসএসও বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিল। বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছিল। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই কট্টর হিন্দু দলগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠায় বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়বে এবং ফায়দা নেবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তেমনটাই ধারণা করা হচ্ছিল। তবে পরবর্তীতে সব হিসেব-নিকেশই পাল্টে গেছে। বিশেষ করে এ ধরনের গোপন বৈঠক তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়। এ বিষয়ে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মতাদর্শে মিল থাকায় ভারতে বিজেপির উত্থানে আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর সুবিধা হওয়ার কথা। কিন্তু কয়েক বছরে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় তাতে ধস নেমেছে। শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ভারতের কংগ্রেসের সুসম্পর্ক থাকায় নরেদ্র মোদি সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তা ছিল। তবে প্রাথমিক সে আশঙ্কা সত্যি হয়নি। দুই দেশের কূটনীতিকরাই মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে ভাল। সুসম্পর্কের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন বৃহস্পতিবার দিল্লীতে এক সময়ের আরএসএসের প্রচার যিনি বর্তমানে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক মাধব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সম্মানে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। এমন কী আগামী সপ্তাহে মাধবের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যাচ্ছে। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ১ মার্চ দুদিনের ভারত সফরে যান। ২ মার্চ তিনি ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের একটি আলোচনা সভায় অংশ নেন। সফরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদিনের সভায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার ১০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সভায় বিভিন্ন সেশনের সভাপতিত্ব করেন রাম লালসহ ভারতের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে কর্মকর্তাদের উপস্থিতির নেপথ্যে নিরাপত্তা ইস্যু নাকি প্রতিবেশী দেশটির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা তা নিশ্চিত করা যায়নি। আলোচনায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ বক্তা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করলেও সভার বিভিন্ন সেশনে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ত থাকার কথাও তুলে ধরা হয়। দিল্লীর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-দিল্লী ফ্রন্টে আরও অনেক কিছু ঘটবে। তাই কলকাতার গোপন বৈঠকটি ভিন্ন ইস্যুতে হলেও তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ না করে এক আওয়ামী লীগ নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে কলকাতায় অনুষ্ঠিত গোপন বৈঠক নিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের পক্ষে থেকে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে বৈঠকে। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির মধ্যে সম্পর্ক কিভাবে আরও জোরদার করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ওই নেতা আরও জানান, আওয়ামী লীগের শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই তিনি ভারতে এসেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নেতার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, বিজেপি ও আরএসএসের সঙ্গে সম্পৃক্তার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কোন সমস্যা নেই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ২ কোটি হিন্দু রয়েছে। তবে এ ধরনের বৈঠকে স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ হয় কী না সে প্রশ্নও উঠে এসেছে ভারতের কূটনীতি মহলে। বিশেষ করে যেখানে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছিল আরএসএস।
×