ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী

আগামী বাজেট হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৪ মার্চ ২০১৬

আগামী বাজেট হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার। সেই সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প হিসেবে নেয়া হবে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের জন্য আলাদা ক্যাপিটাল বাজেট করা হবে। মেগা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনে কিছুটা কঠিন শর্তের ঋণও নেয়া হবে, যেমনটি নেয়া হয়েছে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বাজেট আলোচনায় তিনি এসব তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) ব্যয় কম হচ্ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন। আশা করছি এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যখন নিম্নমুখী এবং বিভিন্ন দেশের প্রবৃদ্ধি কমতির দিকে সেসময় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫-৬ বছর ধরে ভাল অবস্থানে রয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি করেছি। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল। তিনি জানান, মহেশখালীতে পাওয়ার সেন্টার তৈরি করা হবে। এ রকম মেগা প্রকল্পে আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ আলোচনায় চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। বাজেট আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কেএস মুর্শিদ, পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কাজী সাহাবুদ্দিন, অর্থনৈতিক সমিতির সম্পাদক জামাল উদ্দিন, আইএমইডির সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী এবং ইকনোমিক রিসার্চ গ্রুপের গবেষণা পরিচালক সাজ্জাদ জহির প্রমুখ। এমএ মান্নান বলেন, শিক্ষা, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে যে অগ্রগতি হচ্ছে তা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে হবে। সামাজিক সুরক্ষার পরিধি আরও বাড়াতে হ[েজঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশব, যাতে করে সমাজে ধনী-দারিদ্র্যের বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, চলতি অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন সঠিক পথেই রয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জিত হবে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এনবিআর রাজস্ব ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এনবিআর বহির্ভূত করও বেড়েছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহ ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে, যা মুদ্রানীতির লক্ষ্যের মধ্যেই আছে। ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী আছে। জানুয়ারি পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয়, রফতানি আয় সবই ঠিক আছে। এক কথায় বলা যায় সামষ্টিক অর্থনীতি পরিস্থিতি ব্যালেন্স রয়েছে। প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাজেট বড় আকারের করা উচিত। কেননা এখন অর্থনীতি যে পর্যায়ে রয়েছে সেক্ষেত্রে বড় বাজেট প্রয়োজন। তবে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুবই দুর্বল। তাছাড়া সরকারী বিনিয়োগ ৭৫ শতাংশ হচ্ছে নির্মাণ খাতে। কিন্তু কি ধরনের নির্মাণ কাজ হচ্ছে তা ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে। মেগা প্রকল্প নিচ্ছি এটা ইতিবাচক, কিন্তু বাস্তবায়ন ক্যাপাসিটি বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও মজুরির ভিত্তিতে এবং দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ চাঙ্গা করে ডলারের দাম সমন্বয় করা উচিত। নজিবুর রহমান বলেন, আমরা স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলকভাবে কাজ করছি। কিছু কিছু ঝামেলা আছে তা দূর করার চেষ্টা করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। কে এস মুর্শিদ বলেন, দেশের বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, কিন্তু কৃষি খাতে কোন মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে না। জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কৃষি ও ননফার্মেও মেগা প্রজেক্ট নেয়া দরকার। আগামী বাজেটে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত বিক্রয় প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যেতে পারে। এখানে মেগা প্রকল্প নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সাজ্জাদ জহির বলেন, শুধু বিদেশে সস্তা শ্রম বিক্রি করে রেমিটেন্স বাড়ালেই হবে না। দেশের অভ্যন্তরে এই সস্তা শ্রমকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় তা ভেবে দেখতে হবে। তাছাড়া মালয়েশিয়ায় যারা সেকেন্ড হোমের নামে দেশের টাকা পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে এনবিআর ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকারী বিনিয়োগ কার্যকর ও বাস্তবতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে মত দেন এ অর্থনীতিবিদ।
×