ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত ফি আদায়

পদক্ষেপ ভেস্তে গেল ॥ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৪ মার্চ ২০১৬

পদক্ষেপ ভেস্তে গেল ॥ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, পুনঃভর্তি ও বেতন আদায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ ভেস্তে গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারণে। এমন দাবি করা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ফাইল চাপা পড়েছে শিক্ষা বোর্ডের পদক্ষেপ। এ কারণে বেকায়দায় পড়েছেন ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকরা। জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপের ভিত্তিতে অভিভাবকরা অসাধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দাখিল করলেও শেষ পর্যন্ত তা ফাঁস হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের চিঠি ইস্যু করার পর চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা ও ঢাকার ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা কার্যকরে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানুয়ারি মাসে মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে এমপিও বাতিলের প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিশেহারা হয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরবর্তীতে চিঠি চালাচালি শুরু করে শিক্ষা বোর্ডের কাছে। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এ ধরনের চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়ার পরও কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উল্টো অভিভাবকদের নানাভাবে হয়রানি করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আরও অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভর্তি ফি বাবদ ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার পরও মাসিক বেতনের সঙ্গে পুনরায় বিভিন্ন ধরনের ফি আদায়ের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বিষয়গুলো নিয়ে জেলা প্রশাসনে ধর্ণা দিলেও কোন ধরনের অগ্রগতি নেই। শুধু তাই নয়, বরং জেলা প্রশাসনের বৈঠকের পর চট্টগ্রামের স্বনামধন্য বেসরকারী ১৭টি স্কুল ও কলেজ এবং মাদ্রাসা এমনকি সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ৪৬টি স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ উল্টো নানা কায়দায় ভর্তি ফি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফি আদায় অব্যাহত রেখেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেÑ পতেঙ্গার বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বেপজা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, হালিশহরস্থ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি স্কুল, চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সেন্টস্কলাস্টিকা স্কুল এ্যান্ড কলেজ, জামালখানস্থ আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কেওয়াইডব্লিউসিএ প্রাইমারী স্কুল, গানাস ইংলিশ স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, এএল খান উচ্চ বিদ্যালয়, মাদার বাড়িস্থ আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, পাহাড়তলীস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাইট মুন উচ্চ বিদ্যালয়, ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ও সিটি কর্পোরেশনের ৪৬ স্কুল এ্যান্ড কলেজ। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের শিক্ষা বিভাগের এডিসি দেবুময় দেওয়ান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের বৈঠকের পর তালিকাভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার অনিয়ম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে জেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী ফুয়াদ আহমদের পক্ষ থেকে একটি চিঠি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হয়। ওই চিঠিতে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি সরকারি নির্দেশনা ব্যতীত অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে এমন বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠানের গবর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রবিধানমালা অনুযায়ী সরকারের নির্দেশনা সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়যোগ্য বেতন ও ফি নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে অতিরিক্ত ফি আদায় ও ভর্তির বিষয়ে অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিস আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপ-পরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধানদের প্রতি এ অফিস আদেশ প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু এ অফিস আদেশ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে ধামাচাপা পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
×