ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৯০ শতাংশই দিচ্ছেন মেয়েরা

সখীপুরে বেড়েছে বিয়ে বিচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৪ মার্চ ২০১৬

সখীপুরে বেড়েছে বিয়ে বিচ্ছেদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৩ মার্চ ॥ সখীপুর উপজেলায় বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েছে। গত এক বছরে তালাকের মাধ্যমে ৫৮৩টি বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিয়ে, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন এসব কারণে বিয়েবিচ্ছেদ হচ্ছে বলে জানা গেছে। সখীপুরের আট ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভায় ১২টি কাজী অফিস রয়েছে। কাজী অফিসের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে ৫৫, যাদবপুরে ৩৯, বহুরিয়ায় ৩২, গজারিয়ায় ৩৭, দাড়িয়াপুরে ১৫, কালিয়ায় ১১০, বহেড়াতৈলে ৩০, কাকড়াজানে ৬৩ ও পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ২০২টি বিয়েবিচ্ছেদ (তালাক) নিবন্ধন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে সখীপুরে বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৪২৫টি। এদিকে ২০১৪ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা নিকাহ কার্যালয়ে ৩৪, যাদবপুরে ২৬, বহুরিয়ায় ২৭, গজারিয়ায় ২৯, দাড়িয়াপুরে ১৬, কালিয়ায় ৯৪, বহেড়াতৈলে ২৩, কাঁকড়াজানে ৫০ এবং পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ১২৬টি তালাকের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বেড়েছে ১৫৮টি। একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সামান্য কারণে একজন নারী কখনও বিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে তখন বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয়। কনে পক্ষের তালাককে ডি-তালাক, ছেলে পক্ষের তালাককে বি-তালাক ও ছেলে-মেয়ের সমঝোতার তালাককে সি-তালাক বলা হয় বলে জানালেন কালিয়া ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) মাহবুব সাদিক। সখীপুর উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার কাজী শফিউল ইসলাম বললেন, বাল্যবিয়ে, স্বামী বিদেশে থাকা ও পরকীয়া ঘটিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, সখীপুরের ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরা দিয়েছেন। এক নারী তার বিচ্ছেদের পেছনের কারণ হিসেবে জানান, স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল পড়াশোনা করতে দেয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে বলেন পড়াশোনা করা যাবে না। কেন? স্বামী তখন ফোনে জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী নাকি অন্য কারও সঙ্গে প্রেম করছে। পড়াশোনা করলে তাকে ফেলে চলে যাবেন। এসব মিথ্যা বলে স্ত্রীকে পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য চাপ দেন। তবু স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর থেকে স্বামী কোন খরচ দেন না তাকে। ফোন করেন না। তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন। দুই বছর স্বামী তার কোন খোঁজ না নেয়ায় স্ত্রীই স্বামীকে তালাক দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাফেজা আক্তার বলেন, আগে নারীর ক্ষমতায়ন এখনকার মতো ছিল না। পুরুষদের অত্যাচার সহ্য করে নীরবে সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ায় মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখন মেয়েরা আর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চায় না। সখীপুর আবাসিক মহিলা অনার্স কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, এখন আগের চেয়ে নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ায় তাদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আর মুখ বুজে থাকেন না। তাই বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েছে।
×