ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিজ-কালভার্ট-রাস্তাঘাট

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৪ মার্চ ২০১৬

ব্রিজ-কালভার্ট-রাস্তাঘাট

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে গ্রামীণ সড়কে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণসহ ১২টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। লেখা বাহুল্য, এর মধ্যে পাকা ও কাঁচা সড়কও রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৬৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে দেয়া হবে ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৫৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী এবং এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্টের মাধ্যমে নির্মিত মাটির রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে সেতু-কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ করে দূর করা হবে জলাবদ্ধতা। এর ফলে আগামীতে আর কোন বাঁশের সাঁকো থাকবে না বলে জানা গেছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য রাস্তাঘাট-সেতু-ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। এসব শুধু মানুষের যাতায়াতের পথকেই সুগম ও সহজসাধ্য করে তোলে না; বরং নানামুখী যানবাহনের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য পরিবহনের পথ ব্যয় সাশ্রয়ী করে গতি সঞ্চার করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সমর্থ হয়। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী গত কয়েক বছরে দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সারাদেশ মোটামুটি হাইওয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে মানুষ সহজেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে পারছে স্বল্প সময়ে। কৃষি ও শিল্পপণ্যও সহজে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। রেল যোগাযোগ যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত না হলেও এ খাতেও অগ্রগতি লক্ষণীয়। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে ডাবল লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এর পাশাপাশি চলছে চার লেন নির্মাণের কাজ। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণের ফলে দীর্ঘকাল অবহেলিত উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন অনেক সহজসাধ্য হওয়ায় মানুষ ও পণ্যের চলাচল স্বভাবতই বেড়েছে। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে। এর ফলে সঙ্গত কারণেই দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘকাল পুঞ্জীভূত দুঃখকষ্টের লাঘব হবে। তবে এতকিছুর পরও বলতেই হয় যে, বৃহত্তর অর্থে গ্রামবাংলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল এখনও রয়ে গেছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে। চরাঞ্চলে তো বটেই, উপকূলীয় অঞ্চলসহ অনেক গ্রামে এখনও পর্যন্ত নেই পাকা রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি। অনেক স্থানেই মাটির রাস্তা, ইট বিছানো রাস্তা, এমনকি রাস্তার অনুপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। আবার অপরিকল্পিত অথবা আংশিক নির্মিত রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্টের জন্য অনেক অঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতাও লক্ষণীয়। আবার অনেক স্থানে সেচের অভাবে চাষাবাদ করতে না পারার অভিযোগও আছে। কৃষিপণ্য ও কুটির শিল্প পরিবহনে সমস্যা থাকায় মানুষের বঞ্চনার অভিযোগও অস্বীকার করা যাবে না। সেসব ক্ষেত্রে যথাযথ স্থানে পরিকল্পনামাফিক রাস্তাঘাট-সেতু-কালভার্ট-বক্স কালভার্ট নির্মিত হলে এলাকবাসীর সমস্যার সমাধান হতে পারে সহজেই। একনেকের অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে তা গ্রামীণ জনপদের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে অবশ্যই। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানুষের সমস্যা যাতে আরও না বেড়ে যায়। কেননা, অনেক স্থানেই দেখা যায়, ব্রিজ বা কালভার্ট আছে, রাস্তা নেই; আবার রাস্তা কিছু থাকলেও সেতু নেই। সরকারী বরাদ্দের নয়-ছয় এবং প্রকল্পের কেঁচোগ-ুষ অবস্থার কথা প্রায় সবারই জানা।
×