ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কুচিত গ্রন্থ ভুবন

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৪ মার্চ ২০১৬

সঙ্কুচিত গ্রন্থ ভুবন

বই কারা কিনে, কেন কেনে কিংবা কারা পড়ে, কি পড়ে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। একুশের বিশেষত একুশের গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে। বিষয়গুলো নিয়ে জরিপ হতে পারত। হলে জানা যেত এই সময়ের পাঠক কী চায় কিংবা কী ধরনের গ্রন্থের প্রতি আগ্রহÑ ইত্যাকার নানা বিষয় সম্পর্কে হালনাগাদ হওয়া যেত। এই জরিপে নেতিবাচক না হলেও তা থেকে ইতি-নেতির বিষয়টি উঠে আসত। বই কেন পড়ে- তা একেকজনের কাছে একেক রকম হতে পারে। বই পাঠে এক ধরনের ক্ষুণিœবৃত্তি নিবৃত্ত হয় বৈকি! তবে সব পাঠকের পাঠরুচি তো আর এক নয়। সাহিত্যের নানা শাখা, তাতে বিচরণ করার ক্ষেত্রে কারও কারও পাল্লাটা একদিকে ভারি থাকে। জ্ঞানের রাজ্যে পাঠককে নিয়ে যাবার অর্থই হচ্ছেÑ তার মানসিক উচ্চতার আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো। চিন্তা-চেতনার অলিগলিগুলো হয়ে যেতে পারে সড়ক থেকে মহাসড়কে বিস্তৃত। বইয়ের কালো অক্ষরগুলো কারও কারও জীবনে প্রণোদনা হয়ে দাঁড়ায়। এই যে গত ফেব্রুয়ারি মাসভর ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্রন্থমেলা হলো, তাতে বই বিক্রি-বাটা কম হয়নি। বাংলা একাডেমি আয়োজিত মেলাটি এবার বিস্তৃত পরিসরে এবং নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের তথ্যমতে মেলায় মোট ৪২ কোটি টাকার গ্রন্থ বিক্রি হয়েছে। যা পূর্ববর্র্তী ২০১৫ সালে ২২ কোটি এবং ২০১৪ সালে ছিল ১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বই বিক্রি যেমন বাড়ছে তেমনি পাঠকও বাড়ছে। সংবাদপত্র পুরো মাস গ্রন্থমেলার ওপর প্রতিবেদন ছেপেছে। পাঠক তার প্রিয় গ্রন্থ বাছাই করার ক্ষেত্রে বিষয়কে যেমন প্রাধান্য দেয়; তেমনি গ্রন্থমূল্য। মেলায় মানুষের যত ভিড় জমে, বই বিক্রি তত নয়। কেন নয়Ñ সে প্রশ্নও আসে। শিক্ষিত জন মেলায় আসবেন। অথচ বই না কিনে চলে যাবেন, এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নিশ্চয় রয়েছে। অনেকে হয়ত তেমন উল্লেখযোগ্য বা পছন্দ বিষয়ের গ্রন্থ না পেয়ে ফিরে যান। পাঠককে আকৃষ্ট করে এমন গ্রন্থ যে মেলার নেই, তা নয়। কিন্তু সে গ্রন্থটির সংবাদ পাঠকের কাছে সেভাবে পৌঁছে না। মেলার সময় গ্রন্থ নিয়ে কোন আলোচনা হয় না। প্রকাশকরা তাদের প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে বাছাই করা গ্রন্থ নিয়ে আলোচনার আয়োজন যেমন করতে পারে, তেমনি বিজ্ঞাপনও দিতে পারে। শুধু গ্রন্থমেলা নয় পাঠক যাতে সারাবছর বই কিনে এবং বই সম্পর্কে পূর্ব ধারণা পায়, সে রকম পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকেও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে অনেক গ্রন্থে তাড়াহুড়োর ছাপ দেখা যায়। মুদ্রণ প্রমাদ, দুর্বল বাঁধাই, খারাপ ছাপার অবয়বে গল্প গ্রন্থগুলো করুণ দশায়। কোন সম্পাদনা ছাড়াই যে বই প্রকাশ হচ্ছে এবং মেলায় বিক্রি হচ্ছে এবারই প্রথম বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। অসম্পাদিত গ্রন্থগুলো পাঠককে বিমুখ করতেই পারে। বাংলা একাডেমির মেলায় এ বছর নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৪৪৪টি। যা গতবারের ৩ হাজার ৭০০টির তুলনায় ২৫৬টি কম। কেন কমছে, তার ব্যাখ্যা নিশ্চয় প্রকাশকরা জানেন। ভাল পা-ুলিপির অভাব হতেও পারে। কারণ গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ অনেক ক্ষেপে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রকাশক হত্যা, প্রকাশককে গ্রেফতার, স্টল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। লেখকরা মনে হচ্ছে স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। চিন্তাচেতনা ও মেধা মননের সমন্বয়ে যে লেখা তাদের লেখা অবশ্য কর্তব্য তা লিখতে না পারার বেদনা তো রয়েছে। হয়ত এবার তাই গ্রন্থ প্রকাশ কমেছে। স্বাধীন চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটাতে হলে এবং মানুষকে মুক্তমনায় পরিণত করতে স্বাধীনভাবে লেখালেখির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নতুবা মানবমুক্তির পথ রুদ্ধ থেকেই যাবে।
×