গিলোটিন
সৈয়দ রফিকুল আলম
কথার ফুলের মালা গেঁথে সৌরভ চুম্বকে যাদু
স্পর্শে ফেঁদেছে বড়শি ফাৎনায়, গিলে বিষ চারা
অতঃপর টুকরো হয়ে ভোজনের বিলাসী সুস্বাদু
তৃপ্তিলোলুপে সাজানো চর্বিত চর্বনে দিশাহারা
হাস্য রলবোলে ধূর্ত আর কুদর্শীয় মেধাকর্ষে
সেবাদাস বাহিনীর হা হা হি হি ছাদ ফাটানোর
বেতাল ছিরিতে ডংকা বাজে কূটকাটেব্যের হর্ষে
যেন বা বীরের যুদ্ধ জয় কৌটিল্য কূটের সুর
ঘাট অঘাটের মিলা মিলে সমাজ মিলেছে ধসে
হঠাৎ ওঠা ভূঁইফোড় ব্যবস্থাপনার কর্ণধার
বিবেক তারল্যে ভুগে আর্থ গরিমায় তুলে ঋষে
অশুচি দাপটে নামে ভারবাহী কলঙ্কে আঁধার।
মূল্যবোধ গণিতিকে শূন্যঘর নিরবধি হাসে
ঐতিহ্যের শুদ্ধরক্ত অঘাটের নষ্ট জলে ভাসে।
বিলুপ্ত ভাষাপ্রথা
ফকির ইলিয়াস
তাকালেই অনেক কিছু দেখা যায় না। শোনা যায় না
অনেক কিছুই; কান পেতে রইলেও। যে মন বপন করে
ভোরের আখ্যান, কিংবা যে মনিপুরী মেয়ে কোলে শিশু
নিয়ে হেঁটে যায় ঘাসের সমান্তরালে, চাইলেই বুঝা যায় না
তার চোখের ভাষা। অথবা যে মা, অঝোরে কাঁদছেন-
অনুধাবন করা যায় না তার অশ্রু অনুবাদ।
অনেক পাখিই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে
আমাদের চক্ষু-প্রদেশ থেকে,
অনেক আলোই আমাদের জ্যোতি ফিরিয়ে
দেবে বলেও রাখছে না- তাদের অঙ্গীকার।
আমরা কাঁদতে ভুলে যাচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি হাসতেও-
অথবা ভালোবাসা পেতে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল
যে সবুজ নক্ষত্র, হারিয়ে ফেলছি সাহস-
তার মুখোমুখি দাঁড়াবার।
অথচ একদিন অগোছালো সবটুকু লাল রঙ-
আমাদের সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছিল।
দূরত্ব যতোই থাক
আলী নিয়ামত
দূরত্ব যতোই থাক
ভালোবাসা থেকেই যায়
যে ভালোবাসে
তার মন কেবলই কাঁদে
ভালোবাসার মানুষকে কী ভোলা যায়?
তোমার চলে যাওয়া
খুব করে বলে দেয়
না থেকেও আছো তুমি
আমার সারাটা সময়
চুপি চুপি শুধু শুধু
সে আজ কেড়ে নেয়।
হ্যালো বাংলাদেশ
রেজা ফারুক
টাঙ্গুয়ার বিলে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে আকাশ
রাঙা ঠোঁট, রেশমি রাজহাঁস-জলাধার স্ট্রিটে
যায় ভেসে ধ্রুবতারা সেলফোন
বিকেল সন্ধ্যানাগাদ এসে ভালোবেসে থামে
বাদলাঝরা খামে থাকে আঁকা পাখিদের আবছায়া মুখ
মেঘ করে আসা দূর হাওয়ার চিবুক কাঁপে ফুরফুর
ধূসর ঝাপসা হিম্ ডাউন টাউন!
হ্যালো আন্নোন্ ঝাউমেঘ, ঝোড়ো হাওয়া
আমার কথাটি শোনো
হ্যালো ... হ্যালো ... ধুলোডোবা মন
রূপোঝুরি নদী ও নৌকো, কুজ্ঝটিকা, সবুজ মাঠের তৃণ-
অরণ্য-বন- হ্যালো ডট্কম ভোরের ভিলেজ
কুয়াশার স্টপেজ ছুঁয়ে ওড়ে ছায়াহারা বাড়িটার ছায়া
হট্টিটি পাখি ডাকে রোদের চূড়ায়
যায় উড়ে লিলুয়া ধুলোর মখমল, হাওড়-ধু ধু চরাঞ্চল
একাকী কোকিল : হ্যালো নীল-চন্দ্রিল ক্যান্ভাসে
কে রেখেছে এঁকে- ষড়ঋতু : মায়াময় শ্যামল স্বদেশ
এসেছো বিকেল- বসো খুলে গোধূলির হু হু বক্লেস
রিফ্রেশমেন্টের পরে জমিয়ে গল্প হবে
লাল, নীল, পরির গল্প : রকে বসে বৃষ্টির অবসরে!
হ্যালো পেভ্মেন্ট, গুড্সট্রেন রাঙতাজ্বলা ভোর
হ্যালো ফরেস্টহিল্, ঝাউপাতা
হ্যালো ... হ্যালো ... ঘুমিয়েছো বাদলাঝরা নিঝুম দুপুর!
তৃষ্ণা
আইউব সৈয়দ
অধিকারে মাধুরী ঝরে
ফাল্গুনে এসে সাক্ষ্য দেয় বর্ণমালা
অরালতার ভিড়ে হাসিতেছে উপমা,
বিচরণরত দৃষ্টি, সুবাসিত বাক্য-
উদ্দাম অনুভবের জ্যোৎস্নাও-
আলাদা নেই কোনটা।
প্রিয় ভাষার বিশ্বাসে আছে
আকণ্ঠ তৃষ্ণার ক্ষণ।
একুশের প্রার্থনাসঙ্গীত
হাসান হাবিব
এ শহর আঁকতে এসেছিলো কিছু
পুষ্পঘোরে নর্তকী দেহ;
তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো
সমস্ত গ্রাম্যযুবক।
জারিজুরি পলাশ ফুলে আঁকা যে নদী
তার সাথে সখ্যতা তুলির...
নিষিদ্ধ হও নদী
নিষিদ্ধ হও যুবক
তবু আমরা নর্তকী দেখে
মায়ের কাছে যাবো।
জীবন বিষয়ে কয়েক ছত্র
সুজাউদ্দৌলা
দরগার বাতাসার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা
জীবন একটা নাতিদীর্ঘ তামাসা
বাঁশের মতো দীর্ঘ হতে থাকে বাসনা
অথচ ফুল অত তাড়াতাড়ি ফোটে না
পথে হাঁটতে হাঁটতে মানুষ কখনো
নিজের বুড়ো আঙুলের নখ নয়
বরং পার্শ্বচিত্র দেখতে থাকে
দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায় পথ
তুমি যদি বলো
মুন্নি আক্তার
তুমি যদি বল
জনতা ব্যাংকে ভালোবাসা দেব জমা।
তুমি যদি বল প্রজাপতি হব
শুধু ফুলে ফুলে যাবো উড়ে
তুমি যদি বল নদী হয়ে যাবো
কল কল ছলছল, চঞ্চল উচ্ছলে
শীর্ষ সংবাদ: