ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজাদ রহমান

বাংলা ভাষা বাংলা খেয়াল

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৪ মার্চ ২০১৬

বাংলা ভাষা বাংলা খেয়াল

পূর্ব প্রকাশের পর এসব আলোচনা এইজন্য করছি এদেশের এই মাটির অনেক কৃতী সন্তান যারা সকলেই এই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁদের পরবর্তী কর্মধর আমরা এবং আমাদের মতো যারা রাগ সঙ্গীতবিদ্যা অর্জনের পর সেই গুণাগুণের মূল্যায়ন হীনতায় বিপর্যস্ত কিংবা নবীনপ্রজন্ম যারা তাঁদের-আমাদের পথ অনুসরণ করতে চায় তারা যাতে আর স্বীকৃতিহীন অবস্থায় হতাশায় নিমজ্জিত না হয় তার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। শৈশবকাল থেকেই সঙ্গীত শিক্ষার ক্ষেত্রে সঙ্গীতের অনেক বিষয়ে নিয়ম মতো শেখার সুযোগ আমি পেয়েছি। ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, ঠুমরী, কাজরী, গজল, দাদরা প্রভৃতি উচ্চাঙ্গ এবং লঘু উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ছাড়াও রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, কীর্তন সবধরনের লোকসঙ্গীত আমার শিক্ষার বিষয় ছিল। এছাড়া আমি কলকাতায় পিয়ানো শিখতাম। তাতে সঙ্গীতের একমুখী এবং বিপরীতমুখী নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার বিরল সুযোগ আমি পেয়েছি। কলকাতায় আমার প্রথম চলচ্চিত্র সঙ্গীত পরিচালনা করার সময়ে নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেই সময়ে ভারত বর্ষের শ্রেষ্ঠ গায়ক, বাদক জ্ঞানী-গুণীদের সঙ্গীত শোনার সৌভাগ্য যেমন আমার হয়েছিল ঠিক তেমনি জ্ঞানী-গুণী ওস্তাদদের কাছে সঙ্গীতের তালিম নিয়ে রাগ-রাগিণী বিষয়ে আরও গভীরভাবে অনুভব করার সুযোগ হয়েছিল। ওই সময়ে আমি বর্ধমান কলকাতা, বার্নপুর, আসানসোল, মেদনিপুর, ত্রিবেনি প্রভৃতি স্থানে বিভিন্ন আসরে ধ্রুপদ, খেয়াল এবং অন্যান্য গান পরিবেশন করেছি। পরবর্তী সময়ে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা, করাচি, লাহোর, রাওলাপি-ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওস্তাদ উম্মিদ্ আলী খান, বেগম রওশন আরা, ওস্তাদ সালামাত আলী, নাজাকাত আলি, ওস্তাদ ফতেহ্ আলী, আমানত আলী তাঁরা যখন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন তখন তাঁদের সঙ্গে আমার কর্ম সম্পর্ক ও হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। প্রথম থেকেই আমি শাস্ত্রের বিধিবিধান বিচার বিশ্লেষণে মনোযোগী ছিলাম এবং সেই পদ্ধতিতেই ধ্রুপদ, খেয়াল আয়ত্ব করেছিলাম। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখার সময় রাগ সঙ্গীতের তত্বীয় জ্ঞান আয়ত্ব করার প্রতি আমার বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হয়। রাগসঙ্গীতের সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ, বিধিবিধান এবং শুদ্ধতা বজায় রেখে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে রাগসঙ্গীত উপস্থাপনের বিষয় নিয়ে আমি অনেক ভাবতাম, অনুসন্ধান করতাম, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতাম নিষ্ঠা নিয়ে সাধনা করতাম। আর সব সময়েই বাংলায় রাগসঙ্গীত কি করে করা যায় তার জন্য মানসিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে বেশকিছু বন্দেজ রচনা করে নিজেও গাইতাম এবং প্রথমে ভারতে, পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে অন্যান্য শিল্পীদের শেখাতাম। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের শিল্পীরা সম্ভবত সংস্কার বশত সব সময় বলতেন এটা রাগ প্রধান গান হলেই ভাল। বাংলাতে খেয়াল হয় না। আমি প্রতিবাদ করলেও কোন ফল হয়নি। অবশ্য বেশ কয়েক বছর ছায়ানট এ শিক্ষকতার সময়ে পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠানে আমার বাংলা খেয়ালের বিলম্বিত বন্দেজ এবং মধ্যলয়ের বন্দেজ পরিবেশন করা হয়। সমবেত কণ্ঠে মিঞাকিটোড়ী, ললিত, কোমল আশাবরী, রাগে বাংলা বন্দেজ, আঁধার ভেদ করে প্রথম সূর্যের আলো-আঁধারি সকালের পরিবেশে অসাধারণ অনুভূতি সৃষ্টি করত। শ্রোতা দর্শকরাও আবেগ আপ্লুত হতেন। পরবর্তীতে ছায়ানট এর পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক কেউ কেউ বাংলা খেয়াল পরিবেশন করেছেন। টেলিভিশন, বেতারে কেউ কেউ গেয়েছেন। আমার সেই সময়ের ছাত্রছাত্রী, শিল্পী মাহমুদুর রহমান বেনু, রফিকুল ইসলাম, সেলিনা কাইয়ুম, ইরফাত আরা দেওয়ান, শাহিন সামাদ, ডালিয়া নওশিন, সাদিয়া আফরিন, সিফাত মঞ্জুরের পরিবেশনার কথা এখনও অনেকেই উল্লেখ করেন। তারও আগে রেডিও পাকিস্তান ঢাকায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী আভা আলম, শিল্পী ফেরদৌসী রহমান আমার বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত কণ্ঠে তুলে রেকর্ড করেছেন। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানের বয়োজ্যেষ্ঠ গুণী উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ উম্মিদ আলী খান আমার একটি বাংলা ঠুমরী বন্দেজ আগ্রহ সহকারে গাইতেন। তিনি বারবার আমার সঙ্গে বসে গানটি আয়ত্ত করেছিলেন। তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিটিভিতে প্রথম থেকেই উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠানের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আমি নিজেও বাংলা খেয়াল পরিবেশন করেছি। মনে পড়ে ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের প্রথম অবস্থায় যখন আমি অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করতাম প্রথম গানটি ছিল বাংলা খেয়াল। আমার রচিত ভৈরব রাগের লক্ষণগীত ‘উদিল কনক ভানু পূবের গগণে।’ এই গানটি দিয়ে ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের শুরু। আমার বাবার অসুস্থতার চিকিৎসার কারণে আমাকে মাঝে মাঝে কলকাতায় যেতে হতো সেই ব্যস্ততার কারণে পরবর্তীতে ‘এসো গান শিখি’ এই অনুষ্ঠানটি আমি করতে পারিনি কিন্ত দেশের খ্যাতিমান শিল্পী ফেরদোসী রহমান যখন ‘এসো গান শিখি’ উপস্থাপনা করতেন তখন প্রথম দিকে সব গানই আমি লিখে কিংবা সুর করে গানগুলো তাঁর কণ্ঠে তুলে দিতাম। এই অনুষ্ঠানের সূচনা সঙ্গীত ‘সাত স্বরের রাজা রেলগাড়িতে চড়ে, গানের দেশে যাবে মাকে সঙ্গে করে’ আমার রচিত এবং সুর করা এই গানটির কথা এখনও বহু অনুরাগী উল্লেখ করেন। ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের জন্য বেগম জেবুন্নেছা জামাল রচিত অনেক গান আমি সুর করেছি। বিটিভির ‘সুরলহরি’ ‘ধ্রুপদি’ উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এই দুটি অনুষ্ঠান শুরু“করেছিলাম আমি বাংলা খেয়াল ও বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠানরূপে। এই দুটি অনুষ্ঠানের নামও আমার দেয়া। সুরলহরি থেকে দূরে এসে বাংলা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত অনুষ্ঠান ‘ধ্রুপদি’ শুরু করেছিলাম। বিটিভিতে মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায় কারণ আমার অজানা। তবে এজন্য অনেক উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী বঞ্চিত হন। সঙ্গীতের শিক্ষকতা করেন এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতচর্চা করেন এমন অনেক শিল্পী অনুষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে চালু না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এই টানাপেড়নেও আমি বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত প্রচার এর সুযোগ পেলেই শত-কর্ম-ব্যস্ততা ছেড়ে সেখানে উপস্থিত হই। মঞ্চেও বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠান করে থাকি। আমাদের বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রচেষ্টায় দুইবার ‘আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সম্মেলন’ হয়েছে। ‘জাতীয় সঙ্গীত সম্মেলন’ হয়েছে। সব অনুষ্ঠানে দেশের প্রবীণ-নবীন সকল শিল্পীরা বাংলায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। ‘সংস্কৃতি কেন্দ্র’ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সম্মেলন’ এ অংশগ্রহণকারী ভারত, জাপান, চীন, জার্মানি, ইরাক থেকে আগত শিল্পীবৃন্দ তাদের নিজস্ব ভাষায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। ইউনেস্কো এই অনুষ্ঠানগুলোতে সহযোগিতা করেছিল। এরও বহুদিন পূর্বে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় আমার ‘প্রথম বাংলা খেয়াল’ এল পি রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে থাকার জন্য ইউনেস্কোকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। আমি বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছিÑ কেননা আমার সর্বোসত্তা সবকিছুর সঙ্গে বাংলা খেয়াল ও বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত মিশে আছে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতচর্চায় আমার সঙ্গে যেসব শিল্পীরা আছেন তাদেরও আমি বারবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দেশে-বিদেশে আমি বাংলা খেয়ালের অনেক অনুষ্ঠান করেছি। জার্মান, আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারতে শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত একাডেমিতেও বাংলা খেয়াল ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের কর্মশালা ও অনুষ্ঠান হয়েছে। কুয়েতে ‘আজাদ রহমান সঙ্গীত রজনী’ সঙ্গীত-অনুষ্ঠান হয়েছে। এন এইচ কে তে বাংলা খেয়াল গেয়েছি। ভয়েস অব আমেরিকা, ডয়েচভ্যালি, বিবিসিতে বাংলা খেয়াল নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়েছে। লন্ডনে স্প্রেকট্রার্ম রেডিওতে অনুষ্ঠান হয়েছে। ওইসব দেশে মঞ্চেও অনুষ্ঠান হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু জ্ঞানী-গুণী মানুষ আমার রচিত বাংলা খেয়াল তথা বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। এই অনুপ্রেরণাতেই আমি বাংলা খেয়াল ও বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ধরে আছি। ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি কর্ম সাধনা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি আমার বাংলা খেয়াল ও বাংলা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মাধ্যমে। এখন ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ‘বাংলা খেয়াল উৎসব-২০১৫’ ও ‘বাংলা খেয়াল উৎসব-২০১৬’ চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করায় দেশ ও জাতির একটি বড় প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করলেন এবং প্রতি বছরই ‘বাংলা খেয়াল উৎসব’ চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করার অঙ্গীকার ঘোষণা করায় আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্তে মাতৃভাষা বিশেষভাবে গৌরবান্বিত হলো। বাংলা রাগসঙ্গীত চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সব বাঙালীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় বাংলা ভাষা এবং মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের সঙ্গীতকর্মের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে আমরা যথার্থ সম্মান দেখাতে চাই। শিল্প যখন তৈরি হয় তখন তা শিল্পীর। শিল্প তৈরির পরে তা হয়ে যায় দেশের, জাতির, বিশ্বের। বাংলা খেয়াল আমি রচনা করি। শিল্পীরা কণ্ঠে ধারণ করে দর্শক শ্রোতাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন। তাই আজকের সকল প্রাপ্তির অংশীদার আমরা সকলে আর সংস্কৃতি কেন্দ্র আপনাদের সকলের কাছে বাংলায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত বিদ্যা পৌঁছে দিতে চায়। বাংলা ভাষায় রাগ সঙ্গীতচর্চার জন্য আমি এবং ‘সংস্কৃতি কেন্দ্র’ সার্বক্ষণিকভাবে নিবেদিত। বাংলা খেয়াল, বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত জাতীয় গর্বের অমূল্য ধন। কারণ এই উপ-মহাদেশের যে কোন সঙ্গীত ধারা প্রধানত উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রভাবে রচিত ও গীত। তা পঞ্চ কবির গানই হোক কিংবা উচ্ছল হিন্দী ছবির নৃত্যসঙ্গীতই হোক। তাই উচ্চাঙ্গসঙ্গীত না শিখলে এই উপমহাদেশের গান যথার্থভাবে আয়ত্ত এবং উপস্থাপন করা যায় না। বাংলা খেয়াল ও বাংলায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত বাংলাভাষী শিল্পীদের ও জনগণের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। আর আপনারা যারা সুকণ্ঠের অধিকারী, অলসতা ত্যাগ করে একটু সাধনায় আগ্রহী, তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বাংলা খেয়াল প্রচার প্রসারে আপনারাও অংশ নিন সহযোগিতা দিন। নিজেদেরও সার্থক শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলুন। সংস্কৃতিকেন্দ্র সারা বছর বাংলা খেয়ালের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছে। তাই বহু নবীন-প্রবীণ শিল্পী বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত আয়ত্ত করার সার্বক্ষণিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। এবারও যথারীতি ৩১ জানুয়ারি-২০১৬ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ৯টা পর্যন্ত ‘বাংলা খেয়াল উৎসব-২০১৬’ উদযাপিত হয়। প্রায় ৬০০ প্রবীণ-নবীন শিশু-কিশোর শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় অনুষ্ঠানটি আবারও মাইলফলক হিসাবে আখ্যায়িত হয়। ‘সংস্কৃতি কেন্দ্র’ এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছে। চ্যানেল আই এ সম্মাননা দেয়ায় আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। আমার একার সামর্থ্যরে বাইরে গিয়েও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ‘বাংলা খেয়াল উৎসব ২০১৫’ ও ‘বাংলা খেয়াল উৎসব ২০১৬’ এই দুইটি অনুষ্ঠানে আমাদের দেশে প্রবীণ-নবীন অনেক শিল্পী উচ্চাঙ্গসঙ্গীত, লঘু উচ্চাঙ্গসঙ্গীত এবং রাগশ্রয়ী গান পরিবেশন করেছেন। আলোচনায়ও অংশগ্রহণ করেছেন। গানে গানে সকাল অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের সকলকে আমি অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। শ্রোতা দর্শক অনেকেই ফোন করে আমাকে উৎসাহিত করেছেন তাদের সকলের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা রইল। আমার সঙ্গে এই কর্মে যারা সহযোগিতা দিয়েছেন তাদেরও আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনাদের সকলের কাছে ঋণি। ‘বাংলা খেয়াল, বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত অনুষ্ঠান নিয়মিত সম্প্রচার করলে এদেশের সঙ্গীতশিল্পীদের গুণগত মান আরও উন্নত হবে। সঙ্গীতকে স্বাস্থ্যবান করতে হলে সুর-তালের উপর শিল্পীদের দখল আনতে হলে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতচর্চার কোন বিকল্প নাই। আর তা যদি বাংলা ভাষায় হয় তাহলে আমাদের শিল্পীদের জন্য রাগ সঙ্গীতচর্চা অনেক সহজ হয়ে যায়। বিশ্বের সব বাংলাভাষী শ্রোতা দর্শকদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। তাই ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত বাংলা খেয়াল, বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত প্রচারের জন্য চ্যানেল আইকে ধন্যবাদ প্রযোজক অনন্যা রুমাকে ধন্যবাদ। আর চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তা সম্পাদক শাইখ সিরাজকে সালাম, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যারা মিডিয়ার কর্তা ব্যক্তি তাদের মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ, আন্তরিকতা, দৃশ্যমান সহযোগিতা আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন। আমাদের দেশবাসী, শিল্পীবৃন্দ, জাতি, আপনাদের মুখের পানে চেয়ে আছে। আপনারা দয়া করে আমাদের সংস্কৃতির নবদিগন্ত বাংলা খেয়াল প্রচারে সাহায্য করুন, সহযোগিতা দিন। ‘বাঙালী সংস্কৃতির নবদিগন্ত বাংলা খেয়াল’ নামে আমার রচিত ‘বাংলা খেয়াল ও বাংলা রাগসঙ্গীত’-এর বন্দেজ প্রতি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা প্রচার করেছে। এ ধরনের গুরুত্ব পূর্ণ উদ্যোগের জন্য ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান এবং ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ কর্তৃপক্ষের কাছে আমি ঋণি। বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল বাংলাভাষীর কাছে বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের স্বরলিপি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালনে সকল গণমাধ্যমের কাছে আমার আবেদন রইল। আমার রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় বাংলা খেয়াল, বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে ‘রাগ-রং’ বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বাংলা খেয়াল প্রচারিত হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশ বেতার কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ জানচ্ছি। বাংলা খেয়াল এবং বাংলা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দেশের বরেণ্য প্রবীণ-নবীন শিল্পীবৃন্দ যারা অংশ নিয়েছেন তাদের সকলকে অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার রচনা, সঙ্গীত, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় অনুষ্ঠানগুলো প্রচারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ওস্তাদ ইয়াসিন খান, লিও জে বাড়ৈ, ড. হারুন-অর-রশিদ, ড. লীনা তাপসী খান, ড. নাশিদ কামাল, ড. মিন্টু কৃষ্ণ পাল, ইয়াকুব আলী খান, করিম শাহাবুদ্দিন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ড. অসিত রায়, অর্ধেন্দেু প্রসাদ বন্দোপাধ্যায়, রোকসানা হোসেন, চন্দনা দেবী হাজং, ড. পদ্মিনী দে (রূপালী), সুমন চৌধুরী, ডালিয়া নওশীন, নওশীন লায়লা, শাহীন সামাদ, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মোঃ আলমগীর পারভেজ, দীপু রায়, লিও জে বাড়ৈ, সলোক হোসেন, আল্পনা রায়, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, নাসিমা শাহীন, প্রিয়াংকা গোপ, রেজাউল ইসলাম, আলিফ লায়লা, বাদল প্রামাণিক, মাহমুদুল হাসান, সবুজ আহমেদ, তপন সরকার, রঞ্জন চন্দ্র সরকার, অসীত বিশ্বাস, বেনু চক্রবর্তী, আলমগীর পারভেজ, জামাল হাসান, ড. বাদল প্রামাণিক, স্বর্ণময় চক্রবর্তী, বাবর মৃধা, শামীমা পারভীন, আলিফ লায়লা, চন্দনা দেবী হাজং, বিন্দিয়া খান, মাইশা আহসান মম, সাদিয়া শরীফ বৈশাখী, নিপা, চন্দ্রা সাহা স্মৃতি, তাজিন জামান টিনা, শাহীন সামাদ, ডালিয়া নওশীন, নাসিমা শাহীন, রেজওয়ান আলী লাভলু, খায়রুল আনাম শাকিল, ফেরদৌস আরা, নুসরাত জাহান, রতন চন্দ্র মজুমদার, প্রিয়াংকা গোপ, শাহনাজ নাসরিন ইলা, হাসান ইকরাম উল্লাহ, অনিল কুমার সাহা, কুহেলি ইসলাম, বিশ্ব জিৎ নট্র, জোসেফ ম্যান্ডেজ, পুলিন চক্রবর্তী, প্রশান্ত কুমার দাশ, স্বপন মজুমদার, সুলতান আহমেদ, নকীবুল ইসলাম, সাফায়াত আলম ফুলু, ইফতেখার আলম ডলার, মতিয়ার রহমান, রতন চন্দ্র মজুমদার, সবুজ গোপ, শাহিনা আক্তার পাপিয়া, শামীম শবনম চৈতী, রুমানা আজাদ, রোজানা আজাদ, নাফিসা আজাদ, পারভিন সুলতানা লিপি। সংস্কৃতি কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, ছায়ানট, বাফা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নবরাগ সঙ্গীত একাডেমি, লিটল এঞ্জেলস স্কুল, সঙ্গীত আসর (ফরিদপুর), বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্র, নজরুল একাডেমি, মাধবী মিউজিক স্কুল। ড. শায়লা তাসমিন, লিও জে বাড়ৈ, রাজিয়া সুলতানা নিপা, আল্পনা রায়, বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্র, পুতুল দাশ, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মানস কুমার দাশ, ড. লীনা তাপসী খান, তাজিন জামান টিনা, ওস্তাদ করিম শাহাবুদ্দিন, শাদিয়া শরীফ বৈশাখী, সমবেত সঙ্গীত আসর (ফরিদপুর), ড. নাশিদ কামাল, ড. অসিত রায়, ড. পদ্মিনী দে, প্রিয়াংকা গোপ, জেরিন তাবাসসুম, রুখসানা করিম কানন, বিন্দিয়া ইয়াসিন, মোজাহিদুল ইসলাম অরন্য, খায়রুল আনাম শাকিল, অনিল কুমার সাহা, চন্দ্রা সাহা স্মৃতি, আবু সাঈদ বিশ্বাস, বিপুল কুমার, ইউসুফ আহমেদ খান, জাবির ইমাম খান, দিবাকর বিশ্বাস, ড. মিন্টু কৃষ্ণ পাল, চন্দনা দেবী হাজং, রেবেকা সুলতানা, ফিরোজ খান, ড. হারুন-অর-রশিদ, চৌধুরী মোস্তাক হোসেন, ইউসুফ খান, ইয়াকুব আলী খান, ড. বাদল প্রামাণিক, সালাহউদ্দিন আহমেদ, নিষাত আহমেদ, ড. প্রদীপ কুমার নন্দী, সাইফুল ইসলাম, জামাল হাসান, সমবেত সংস্কৃতি কেন্দ্র, স্বর্ণময় চক্রবর্তী, আলিফ লায়লা, ডালিয়া নওশিন, গাজী আবদুল হাকীম, মাইশা আহসান মম, বাংলা খেয়াল অনুষ্ঠানে আরও অনেক শিল্পী অংশ নিয়েছেন।
×