ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবন্ত ড্রাগন ইব্রাহিম নোমান

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ মার্চ ২০১৬

জীবন্ত ড্রাগন ইব্রাহিম নোমান

বিশাল আকার, সমতল মাথা, নোয়ানো পা এবং লম্বা ও মোটা লেজের অধিকারী কমোডো ড্রাগন প্রাণিকুলের বিস্ময়। এদের দেহের রংও বৈচিত্র্যময়। কোনটা নীল, কোনটা কমলা আবার কোনটার গায়ের রং সবুজ অথবা ধূসর। তবে গায়ের চামড়া খসখসে। আর গড়ে ১৪০ পাউন্ডের এই বিশালাকৃতির ড্রাগনগুলো বড় বড় ছাগল, হরিণছানা এমনকি আস্ত গরু-মহিষকেও গিলে ফেলতে পারে। কমোডো জাতীয় উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় এখনও অন্তত চার হাজার কমোডো ড্রাগন বেঁচে আছে বলে ধারণা গবেষকদের। আগে ধারণা করা হতো, কমোডো ড্রাগন স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, এমনকি কুমিরের চেয়েও। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষক্রিয়া এবং সূচালো দাঁতের কারণে এদের কামড় ভয়ঙ্কর হলেও চোয়ালের শক্তি কুমিরের চেয়ে বেশি নয়। কমোডো ড্রাগনের ৬০টির মতো ধারালো দাঁত আছে। আর কামড়ের সময় এরা বেশ শক্তিশালী বিষক্রিয়া করে। ইন্দোনেশিয়ার কমোডো দ্বীপে স্থানীয় লোকজন এগুলোকে ‘ওরা’ বলে ডাকে। কেউ কেউ আবার ডাকে ডাঙ্গার কুমির বলে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এই প্রাণীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য বিস্ময়কর। গবেষকরা বৈচিত্র্যময় দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করছেন। একটা পুরুষ কমোডো ড্রাগন সাধারণত আট থেকে নয় ফুট লম্বা হয়ে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে এগুলো দশ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। একেকটির ওজন কমসে কম দুই শ’ পাউন্ড। অন্যদিকে স্ত্রী ড্রাগন ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। লম্বা এই সরীসৃপগুলোর দেহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের দেহের রঙের বৈচিত্র্য। এগুলো বাহারি রঙের হয়। কোনটা নীল, কোনটা কমলা রঙের। আবার কোনটার গায়ের রং সবুজ অথবা ধূসর। এই বাহারি রঙের প্রাণীগুলোর গায়ের চামড়া কিন্তু খসখসে। এরা একসঙ্গে যখন ছুটে চলে তখন মনে হয় রংধনু ছুটে যাচ্ছে। কমোডো ড্রাগনের দৃষ্টিশক্তি বেশ প্রখর। দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা এতই বেশি যে, এরা নয় শ’ পঁচাশি ফুট দূরের কোন জিনিসও স্পষ্ট দেখতে পায় বলে জানিয়েছে স্মিথসোনিয়ান জু কর্তৃপক্ষ। শিকার ধরার ক্ষেত্রে এই দৃষ্টিশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাণীটির গতিশক্তিও বেশ। প্রতি ঘণ্টায় উনত্রিশ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। গতিশক্তি এত বেশি থাকলেও এটি কিন্তু শিকার ধরার ক্ষেত্রে চোরের মতোই কাজকর্ম করে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিকারের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আর শিকার কাছে আসলেই হামলে পড়ে। এরা অনেকটা সাপের মতো জিহ্বার মাধ্যমে ঘ্রাণ নেয়। এদের ঘ্রাণশক্তি এতই প্রকট যে, দূর থেকে আগত শিকারের দেহের ঘ্রাণ বাতাস থেকে গ্রহণ করেই এরা শিকার করার জন্য তৎপর হয়ে যায়। দৃষ্টিশক্তি আর ঘ্রাণ শক্তির সমন্বয়ে এরা শিকারের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই জায়গামতো শিকারের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। কমোডো ড্রাগন পৃথিবীতে খুব অল্পই আছে। লেজার সান্ডা, রিনকা, গিলি মনটাঙ্ক, গিলি দাশামি এবং ফ্লোরেস এই পাঁচটি দ্বীপেই এই প্রাণীটি খুঁজে পাওয়া যায়। ফ্লোরেস দ্বীপে এই প্রাণীগুলো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। আর অন্য বাকি চার দ্বীপে এরা কমোডো জাতীয় পার্কের তত্ত্বাবধানে আছে। এরা ট্রপিক্যাল শুকনো বন থেকে শুরু করে সাভানার বনে থাকতে সক্ষম। অত্যধিক গরমের মধ্যে এরা দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে। সাধারণত ইন্দোনেশিয়ায় গড় তাপমাত্রা পঁয়ত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় এরা অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বাস করে। কমোডো ড্রাগন বাসা বানায় দুটি কারণে। রাতের বেলায় নিজেদের গরম রাখা আর দিনের বেলায় নিজেদের ঠাণ্ঠা রাখার জন্য বাসা বানায়। কমোডো ড্রাগন মাংসাশী। এদের হিংস্র শিকারিও বলা যেতে পারে। বড় বড় মহিষ, হরিণ, শূকর এমনকি মানুষ ধরে ধরে এরা খায়। এরা ছোট ড্রাগনকেও অনেক সময় খেয়ে ফেলে। এক বসায় এরা তাদের দেহের ওজনের আশি শতাংশ পরিমাণ খাবার খেতে পারে। এই দিক থেকে একে রাক্ষুসে বলা যায়। শিকারকে মারার জন্য কমোডো অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করে। প্রথমে এটি বড় বড় পা দিয়ে শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে। তারপর এরা এদের ধারালো এবং শক্ত দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে কামড়িয়ে শিকারকে মেরে ফেলে। শিকার যদি কোনভাবে এদের থাবা থেকে ফসকে ছুটেও যায়, তবে আয়ু একদিনের বেশি হয় না। এর কারণ দাঁতের কামড়ে রক্ত দূষিত হয়ে যায়। কেননা কমোডো ড্রাগনের কামড়ের ফলে মুখের যে লালা শিকারের রক্তে প্রবেশ করে সেই লালায় পঞ্চাশের অধিক ব্যাকটেরিয়া জীবাণু থাকে। মুখের এই বিষাক্ত লালার জন্য কমোডা ড্রাগনকে সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রগুলোতে বিষধর হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। তীক্ষè ঘ্রাণ শক্তির মাধ্যেমে এই প্রাণীটি শিকারের আগমন টের পেয়ে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেয়। যেই শিকার কাছে চলে আসে অমনি হামলে পড়ে শিকারকে কুপোকাত করে ফেলে। কমোডো ড্রাগন প্রজননের ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষ ড্রাগনটি স্ত্রী ড্রাগনের নিরাপত্তার জন্য আশপাশে ঘোরাঘুরি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই স্ত্রী ড্রাগনের সঙ্গে মেলামেশা করে। সাধারণত প্রজননের জন্য এরা বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বেছে নেয়। প্রতি সেপ্টেম্বরে স্ত্রী ড্রাগন কমপক্ষে ত্রিশটি ডিম পাড়ে। ডিমের নিরাপত্তার জন্য মা ড্রাগন বাসা তৈরি করে থাকে। এরপর ডিমে প্রায় তিন মাস ধরে তা দিয়ে থাকে। সূত্র : বিবিসি [email protected]
×