ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

ভাষার টান ও স্বাধীনতার চেতনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৪ মার্চ ২০১৬

ভাষার টান ও স্বাধীনতার  চেতনা

স্বাধীনতার মাস আমাদের গৌরবের মাস, আনন্দের মাস। এজন্য এ মাসকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। আর সবখানেই দেখা যায় লাল-সবুজের ছোঁয়া। ফ্যাশনসচেতনরা শুধু নয়, সবাই কমবেশি চেষ্টা করেন লাল-সবুজের পোশাক পরতে। তাই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো দিবসটি উপলক্ষে তৈরি করে লাল-সবুজে নানা নান্দনিক পোশাক এবং উপহার সামগ্রী। যদিও পোশাক সর্বজনীন মানে সব সময় এ বাংলার এই চিরায়ত লাল-সবুজের আবহ থাকে আমাদের সব ধরনের পোশাকে আর মননে। ফ্যাশনে ও স্টাইলে স্বাধীনতাকে ধারণ করে পোশাক বৈচিত্র্যে আসে নানা পরিবর্তন। এসব চাহিদাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশের ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে লাল-সবুজ পতাকার রঙে। এছাড়া বর্ণিল সব রঙের পোশাকে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের আবহ। সাধারণত লাল-সবুজ থিমকে মাথায় রেখে পোশাকের নকশা করা হয়। তবে রং একই হলেও পোশাকের উপাদানে থাকে ভিন্নতা। এ সময় ঋতুচক্রের পালাবদলে গ্রীষ্ম দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তাই ফ্যাশান হাউসগুলো বেছে নিয়েছে সুতি ও হাফ-সিল্ক কাপড়। স্বাধীনতার এ মাসে মহান স্বাধীনতার মহিমাকে পোশাকের মাধ্যমে সমুন্নত করতে সচেষ্ট হয়ে তারা নিজেদের আউটলেটগুলোতে। স্বাধীনতার পোশাকের বিশেষ কালেকশন রাখেন। স্বাধীনতার রং বলতে লাল-সবুজকেই বোঝায়। আর তাই এ দিবসের ফ্যাশনে প্রাধান্য পায় লাল ও সবুজ এই দুটি রং। পোশাক অন্য রঙের হলেও লাল-সবুজের ছোঁয়া থাকতেই হবে। পোশাকে না হোক, ওড়না, ব্যাগ অথবা অলঙ্কারে থাকা চাই লাল-সবুজের ছোঁয়া। তাই স্বাধীনতা দিবস এলেই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো নিজেদের সাজিয়ে নেয় লাল-সবুজ নানা রঙের ও ঢঙের পোশাকে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট, কুর্তা, ফতুয়া, স্কার্ট কিংবা শিশুদের জামার ডিজাইনে আনা হয় স্বাধীনতার আমেজ। এখন মানুষের শৌখিনতা ও পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো বেশ রুচিশীল ও উৎসবনির্ভর পোশাক তৈরি করছে। আবার অনেকেই নিজের সৃজনশীলতায় রাঙিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন নিজের একদম আলাদা একটি স্বাধীনতা দিবসের স্টাইল। বাঙালী নারীর চিরায়ত পোশাক শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ ও ফতুয়া এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। নারীরা লাল-সবুজ শাড়ি পরতে পারেন লম্বা হাতের ব্লাউজের সঙ্গে। লাল-সবুজ শাড়ি পরতে না চাইলেও এক রঙা শাড়ির সঙ্গে লাল-সবুজের সংমিশ্রণে ব্লাউজ পরুন। এক্ষেত্রে সাদা, ঘিয়া কিংবা কালো শাড়ির সঙ্গে মানানসই লাল কিংবা সবুজ ব্লাউজের হাতায় লেস বসানো হলে দেখতে আরও সুন্দর লাগবে আপনার স্বাধীনতা দিবসের পোশাক। যারা শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তারা সালোয়ার-কামিজ অথবা লম্বা কুর্তা পরে নিন। এক্ষেত্রেও উঁচু গলা ও লম্বা হাতা মানানসই হবে। পোশাকে লাল-সবুজ রাখতে না চাইলে রাখুন ওড়না, স্কার্ফ ও গহনায়। আর যদি আলাদাভাবে পোশাক কেনা না হয়ে থাকে, তাহলে একটি বড় পতাকা কিনে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন। অথবা কপালে লাল-সবুজ টিপ পরে দু’হাত সাজিয়ে তুলুন লাল-সবুজ চুড়িতে, খোঁপায় পরতে পারেন লাল ফুল। মেকআপটা করে নিতে পারেন লাল-সবুজের শেড ঘেঁষে, গালে এঁকে নিতে পারেন আলপনা। ছেলেদের জন্যও বিভিন্ন পোশাকের পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলো। ছেলেদের জন্য তারা প্রধানত লাল-সবুজের মিশ্রণে পাঞ্জাবি ও ফতুয়া এনেছে। টি-শার্টগুলোতে লাল-সবুজের পাশাপাশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আবয়ব, আছে এমন নকশা। স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কিত বিভিন্ন ডিজাইনের টি-শার্টগুলো পাওয়া যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। আবার লাল বা সবুজ একটি টি-শার্ট পরে সঙ্গে একটি পতাকা বেঁধে নিতে পারেন কপালে বা হাতে। লাল-সবুজ ব্রেসলেটও ব্যবহার করতে পারেন। বাংলাদেশের পতাকার একটি চমৎকার স্টিকার কিনে বসিয়ে নিতে পারেন পরনের সাদামাটা টি-শার্টেই। যারা পাঞ্জাবি পরতে চান, তারা একটি মোটা খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন। লাল-সবুজের সংমিশ্রণের পাঞ্জাবি কিনে নিতে পারবেন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস থেকে। লাল-সবুজ সংগ্রহে না থাকলে শুধু লাল কিংবা শুধু সবুজও পরে নিতে পারেন। আর যদি আলাদাভাবে স্বাধীনতা দিবসের জন্য পোশাক কিনতে না চান, তাহলে মাথায় একটি লাল-সবুজ গামছা কিংবা পতাকা পেঁচিয়ে নিতে পারেন। ইচ্ছে করলে একটি পতাকাও আঁকিয়ে নিতে পারেন নিজের ও নিজের সন্তানের গালে। পাঞ্জাবিতে থাকছে হাতের কাজ, ব্লক, এমব্রয়ডারি ও ব্লকপ্রিন্ট। শিশুদের উপস্থিতিতেই প্রাণবন্ত হয় উৎসব-আয়োজন। স্বাধীনতা দিবসে তাই শিশুদের জন্য বিভিন্ন বর্ণিল পোশাক এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। মেয়ে শিশুদের জন্য পাওয়া যাচ্ছে ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি এবং ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, ফতুয়া ও টি-শার্ট। ফ্যাশন হাউস ‘অতঃপর’-এর স্বত্বাধিকারী রানা আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস যেহেতু জাতীয় উৎসব, তাই সেই দিনে সবাই দেশীয় কাপড় আর গয়না পরবেন বলেই আশা করি। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় পতাকার রং দুটি- লাল ও সবুজ। এর সঙ্গে আসতে পারে সাদা-হলুদ, কালো-সাদা। কী ধরনের পোশাক পরবে সেটা আসলে বয়সের উপরেও নির্ভর করে। স্বাধীনতার চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে উপহার দিন প্রিয়জনকে। এই তালিকায় রাখতে পারেন মগ, টি-শার্ট, পোস্টার, ভিউকার্ড, সিডি, ডিভিডি, ফতুয়া, শাল, টপস, মাথার স্কার্ফ, ব্যান্ডানা, পাঞ্জাবি, মাফলার, মাটির তৈরি মেয়েদের কানের দুল, গলার হার, চুড়ি, ছোট আকারের জাতীয় পতাকাসহ নানা কিছু। স্বাধীনতা দিবসে লাল-সবুজের রঙে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করাটা জরুরী। তবে আপনার সাজের মধ্যে যেন উগ্রতা প্রকাশ না পায়। তাই স্নিগ্ধতাই হোক আপনার পরিচয়। ছবি : রাব্বি ও শুভ মডেল : শোভন, রাজন, তৃষি, স্বপ্ন, মিউম, যশ ও রাফিক পোশাক : নগরদোলা স্টাইলিং : সেজান সজল মেকআপ : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড
×