ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কামরুল আলম খান খসরু

২ মার্চ ৭১-এ উড়ল ঢা.বি. কলাভবনে স্বপ্নের সেই পতাকা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৪ মার্চ ২০১৬

২ মার্চ ৭১-এ উড়ল ঢা.বি. কলাভবনে স্বপ্নের সেই পতাকা

(শেষাংশ) ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং আমাদের সশস্ত্র প্রস্তুতির কারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। বাঙালী তখন তার গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এককাট্টা। ইতোপূর্বে বাঙালীর মধ্যে এত আত্মবিশ্বাস আর একতা লক্ষ্য করা যায়নি। এতদিন বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির মুক্তির লক্ষ্যে তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এবার জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা নেতৃত্বকে শুনতে হচ্ছে। জনগণ তাদের অবস্থান থেকে পিছপা হতে নারাজ। এ রকম এক বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে নিতে জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয় তথা একটি পতাকার প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে অনুভূত হতে থাকে। প্রশ্ন ওঠে কী রঙ্গের হবে কেমন হবে স্বপ্নের সেই পতাকা। সেই ভাবনা পেয়ে বসে নিউক্লিয়াসের সদস্যদের। সমস্যা সমাধানে আবারও এগিয়ে আসেন সিরাজুল আলম খান। এখানে এ সুযোগে বলে রাখি রাজনীতির বিস্ময়পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ইঙ্গিতেই আমাদের সমস্ত কর্মকা- পরিচালিত হতো। তিনি নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছা সম্পন্ন করতেন। তিনি আমাদের সব খবরাখবর রাখতেন। তার প্রমাণ বহুবার পেয়েছি। যদি সুযোগ পাই এ বিষয়েও বিস্তারিত লিখব। এ সময় সিরাজুল আলম খানকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ঘনঘন যেতে দেখি। তিনি আমাকে ইকবাল হলে সার্বিক নিরাপত্তা দেখার ভার দিয়ে যেতেন। এর মধ্যে আলোচনায় চলে আসে বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ কর্তৃক অভিবাদন প্রদানের বিষয়টি। কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন প্রদান কোথায় কবে করা হবে তা গোপন রাখা হয়। তবে ওই অভিবাদন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর হাতে একটি পতাকা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। খুবই দ্রুততার সঙ্গে পতাকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। বলা যায় এক কর্ম দিবসের যৌথ প্রয়াসের ফল হচ্ছে এই পতাকা যা পরবর্তীকালে সামান্য পরিবর্তন করে জাতীয় পতাকায় পরিণত করা হয়। সেদিন ’৭০-এর ৬ জুন। সন্ধ্যা হওয়ার পরপরই ইকবাল হলের ১১৬ নং কক্ষে বিশিষ্ট ছাত্রলীগ নেতাদের ভিড় লেগে যায়। সে সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদ, আ.স.ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, মার্শাল মনি প্রমুখ। রুমের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন চিশতি হেলালুর রহমান, ইকরামুল হক, নজরুল, শিব নারায়ণ দাস, রেজা শাহজাহান প্রমুখ ছাত্রনেতা। প্রথমে একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। উপস্থিত সভার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, পতাকার জমিন হবে বাংলার চিরচেনা সবুজ রঙ্গের। তার মাঝখানে থাকবে বৃত্তাকার লাল রঙ্গের সূর্যের প্রতীক। এই প্রতীকের মাঝখানে থাকবে সোনালি রঙ্গের বাংলাদেশের ভূখ-ের ছবি। বিষয়টির ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই এর ট্রেসিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ছাত্রলীগকর্মী শিব নারায়ণ দাসকে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ট্রেসিংয়ের ওপর ড্রয়িং করে তা আরও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিব নারায়ণ দাসকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমানে বুয়েটে) শেরে বাংলা হলের ৪১০ নম্বর কক্ষে পাঠানো হয়। সেখানে থাকতেন ছাত্রলীগ নেতা হাসানুল হক ইনু (তথ্যমন্ত্রী) এবং সালাউদ্দিন আহম্মেদ। ইনু ভাই এবং শাজাহান ভাই ট্রেসিংটি দেখে একটি সাদা কাগজের ওপর চমৎকারভাবে পতাকাটির ড্রয়িং করে দেন। শিব নারায়ণ দাস অতি বিশ্বস্তার সঙ্গে ড্রইংটি মধ্যরাতে এনে সিরাজ ভাইয়ের হাতে সোপর্দ করেন। এখন প্রয়োজন দেখা দেয় দর্জি এবং কাপড়ের। পতাকাটি তৈরি করে এনে দেয়ার জন্য দরকার পড়ে অত্যন্ত সাহসী, দক্ষ এবং বিচক্ষণ এক কর্মীর। ছাত্রলীগের মধ্যে এমন কোন কর্মী আছে যে, এই গুরুদায়িত্ব সূচারুরূপে বিশ্বস্ততা ও সাহসের সঙ্গে পালন করতে পারবে। সেদিন মধ্যরাতে আমাকে ডেকে আনা হয় ইকবাল হলের ১১৬ নং কক্ষে। আমি ও মোস্তফা মোহসীন মন্টু (গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক) তখন অপেক্ষা করছিলাম ১৫১ নং কক্ষে। তখন রাত আনুমানিক ২টা। সিরাজ ভাই আমাকে কাপড় সংগ্রহ করে দর্জি দিয়ে সেলাই করে ড্রইংয়ের মতো পতাকা তৈরি করার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। আমি তখন মার্শাল কোর্ট কর্তৃক ১৪ বছরের দ-াদেশ মাথায় নিয়ে খুবই সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করছি। বঙ্গবন্ধু বহু চেষ্টা করেও আমাদের (আমি, মন্টু ও সেলিম) দ-াদেশ বাতিল করতে পারছিলেন না। এখানে বলে রাখি ১৯৬৯ সালে নেতৃত্বের ইঙ্গিতে আমি, মন্টু ও সেলিম নিউমার্কেটের ভেতর ৪ পাকিস্তানী সৈন্যকে ঘায়েল করি। আমাদের অনুপস্থিতিতে মার্শাল কোর্ট ১৪ বছর কারাদ- দেয়। এই ১৪ বছরের দ-াদেশ মাথায় নিয়ে স্বাধীনতা পর্যন্ত সংগ্রাম করে যাই। স্বাধীনতার পর এই দ-াদেশ মওকুফ হয়। যাক সে কথা। সিরাজ ভাই আমাকে বলেন, ‘যেখান থেকে পারিস এই ড্রইং অনুযায়ী একটি পতাকা তৈরি করে নিয়ে আয় রাত ফুরাবার আগেই। আমার বিশ্বাস আছে এই কাজটি একমাত্র তুই পারবি।’ সিরাজ ভাই থেকে আমি পতাকা তৈরির দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই মনে মনে ছক কষি। কাকে দিয়ে কোথায় গিয়ে এই পতাকা তৈরি করতে হবে তা নিশ্চিত করি। তারপর ড্রইং হাতে নিয়ে আমার স্কেপ রুট দিয়ে দ্রুত অগ্রসর হই। প্রথমে নীলক্ষেত বস্তি সংলগ্ন রেললাইন পার হয়ে হোম ইকোনমিক্স কলেজ, আজিমপুর কলোনি এবং আজিমপুর কবরস্থানের প্রাচীর টপকে নিউমার্কেটের উত্তর পাশ দিয়ে কাঁচাবাজারে চলে আসি। তখন নিউমার্কেটের ভেতরে ছিল একটি মসজিদ এবং কাঁচাবাজারের পাশেও ছিল একটি টিনের তৈরি মসজিদ। এখন সেখানে নিউ সুপার মার্কেট। এই মসজিদের পাশে ছিল কয়েকটি দোকানঘর যার একটির মালিক ছিল এক অবাঙালী ব্যক্তি। সে দর্জির কাজ করত এবং রাতে দোকানেই ঘুমাত। আমি সেখানে গিয়ে তার ঘরের দরজা নক করি। সে চিৎকার করে বলেÑ এত রাত্রে কে, আমি তখন নিজ পরিচয় দিয়ে বলি, ‘মুঝে এক ঝা-া (পতাকা) বানানা হায়, দরওজা খোলো (আমার একটি পতাকা তৈরি করতে হবে, দরজা খোলো)’। দর্জি ভেতর থেকে বলে, ‘ঝা-া তো গুলিস্তান মে মিলতা হ্যায়, উধার যাইয়ে (পতাকা তো গুলিস্তানে পাওয়া যায় সেখানে যান)’। আমি বলি, ‘মুঝে আলাগ এক ঝা-া চাইয়ে, দরওজা খোল’ (আমার একটি ভিন্ন পতাকা দরকার) দরজা খোলো। এই পর্যায়ে আমি দ্রুত দরজা খুলতে বলি। না খুললে তার পরিণতির কথা বলি। সে দরজা খুলে আমাকে দেখে বলে, ‘খসরু ভাই আপ বহুত তাকলিফ মে হ্যায়’ (আপনি বড় বিচলিত আছেন)। আমি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বলি, ‘জ্যায়সা জ্যায়সা ম্যায় চাহুঙ্গা ওয়াসা ওয়াসা ক্যারো।’ আমি তখন উত্তেজিত ও ঘর্মাক্ত। সামান্য সময় নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। আমি তাকে ড্রইংটি বের করে খুলে দেখিয়ে বলি, ‘মুঝে এ্যায়সা ঝা-া বানানা হায়, আভি চাইয়ে’ (আমার এমন একটি পতাকা তৈরি করে দিতে হবে, তাড়াতাড়ি চাই)। আমি তার দোকানে রাখা লাল সবুজ রঙ্গের কাপড়ের বান্ডিল খুঁজতে থাকি। কিন্তু লাল সবুজ রঙ্গের কাপড় খুঁজে পেলাম না। অবাঙালী দর্জি বলে, এই রঙ্গের কাপড় পাওয়া যেতে পারে খালেক দর্জির দোকানে। খালেক দর্জির দোকানটি আবার বলাকা ভবনের তিন তলায় ছাত্রলীগের অফিসের পাশে অবস্থিত। সে দোকানের নাম ‘পাক ফ্যাশন টেইলার্স’। খালেকও দোকানেই রাত যাপন করত। আমি অবাঙালী দর্জিকে খালেকের দোকানে গিয়ে আমার কথা বলে ড্রইং মতো পতাকা তৈরি করে আনতে বলি। দর্জি সাটার টেনে সেখানে রওনা হয়। আমি তার দোকানের সামনে একটি টুলে বসে অপেক্ষা করার ভান করি। অবাঙালী দর্জি রওনা হওয়ার সামান্য পরই আমি চোখের নিমিষে নিউমার্কেটের ছাদে উঠে মাথা নিচু করে দৌড়ে এসে অদূরে বলাকা ভবনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। আমি ভাবছিলাম ড্রইং হাতে নিয়ে দর্জি গিয়ে পাকিস্তানী আর্মিদের আবার ডেকে না আনে। কারণ, তখনকার পরিস্থিতি এমন ছিল যে, কাউকে বিশ্বাস করা যেত না। সর্বত্রই পাকিস্তানীদের চর অবস্থান করছিল। একটু পরই তার প্রমাণ পাই। আমি নিউ মার্কেটের ছাদে উঠে উপুড় হয়ে বসে দেখি পাক ফ্যাশন টেইলার্সের দোকানের লাইট জ্বলেছে। এর কয়েক মিনিট পর মেশিনে কাপড় সেলাই করার আওয়াজ ভেসে আসে। এরপর মেশিনের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়, লাইট নিভে যায়। আমি দ্রুত আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে এসে পতাকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। দর্জি এসে বলে, ‘লিজিয়ে খসরু ভাই, খালেক কা পাছ কাপড়া মিলা, ওহী বানাকে দিয়া’ (নেন খসরু ভাই খালেকের কাছে কাপড় ছিল ও বানিয়েও দিল)। আমি পতাকাটি খুলে এক ঝলক দেখে তা ভাঁজ করে গেঞ্জির মধ্যে ঢুকিয়ে গন্তব্যে রওনা হই। আমি নিউমার্কেটের পশ্চিম পাশ দিয়ে এসে আজিমপুর কবরস্থানের প্রাচীরের কাছাকাছি চলে আসি। দেখি নীলক্ষেত-নিউমার্কেটের মোড় থেকে কয়েকটি গাড়ি হেড লাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে ইপিআর গেটের দিকে আসছে। প্রথমে গাড়িগুলোকে ইপিআরের ভেবেছিলাম। আমি টুক করে কবরস্থানের প্রাচীর টপকে ওপারে গিয়ে মাথা উঁচু করে দেখি, গাড়ি থেকে নেমে পাকিস্তানী সৈন্যরা দ্রুত এলাকাটি ঘিরে ফেলছে। আমি বুঝতে পারি তারা কোথাও থেকে ইনফরমেশন পেয়েছে। এভাবে দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে অসংখ্যবার প্রায় ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছি। ১১ বার নিশ্চিত মৃত্যুর থেকে রক্ষা পেয়েছি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এ বিষয় নিয়ে লিখব। আমি শৈশবে বড় হয়েছি আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন এলাকায়। সমস্ত এলাকাটি আমার নখদর্পণে। তখন আজিমপুর কবরস্থান ছিল জঙ্গলে ভর্তি। সন্ধ্যা হলে সেখানে শেয়াল ডাকত। মানুষ দিনের বেলা এই কবরস্থানের ভেতরে যেতে ভয় পেত। আমি দ্রুত গন্তব্যে রওনা হই। কবরস্থানের প্রাচীর টপকে চলে আসি আজিমপুর কলোনির ভেতর। এরপর ওই কলোনির প্রাচীর টপকে বানরের মতো দৌড়ে দৌড়ে চলে আসি হোম ইকোনমিক্স কলেজের প্রাচীরের কাছে। প্রাচীর টপকে চলে আসি কলেজের ভেতরে। তারপর আবার হোম ইকোনমিক্স কলেজের প্রাচীর টপকে চলে আসি নীলক্ষেত বস্তিতে। রেললাইন এবং হলের প্রাচীর টপকে পৌঁছাই ইকবাল হলের পশ্চিম দিকের গেটের কাছে (এখন সেখানে এক্সটেনশন বিল্ডিং)। ওই গেটের ডুপলিকেট চাবি থাকত আমার কাছে। আমি চাবি বের করে তালা খুলে হলে প্রবেশ করি। উল্লেখ্য, ইকবাল হল থেকে নিরাপদে বের হতে (এক্সিট) এবং নিরাপদে প্রবেশ করতে (ইন্টার) আমি বিশেষ সময় বিশেষ রুট ব্যবহার করতামÑ যা কেউ জানত না। রাত তখন শেষ প্রহর। আমি হলে প্রবেশ করে সিরাজ ভাইয়ের কাছে আসি। দেখি, সমস্ত ছাত্রলীগ নেতা জড়ো হয়ে বসে উর্ধশ্বাসে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। সিরাজ ভাইয়ের হাতে পতাকাটি তুলে দিলে তিনি আমায় জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমি জানি তুই পারবি। তখন সবাই বলল খসরুর নামও ইতিহাসে লেখা থাকবে। আমি এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। এরপর ছাত্রলীগ নেতারা পতাকাটি কবে কখন ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বসেন। তার কিছুদিন পর সিরাজ ভাই বলেন, পতাকাটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আয়। আমরা (আমি, হোসেন, মুরাদ, রুমি, নাজিম, ভলকু প্রমুখ) একটি জীপে চড়ে পতাকাটি সঙ্গোপনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে উপস্থিত হই। বঙ্গবন্ধুকে আমরা স্বপ্নের সেই পতাকাটি দেখাই। পতাকাটি দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। তাঁর চোখে মুখে যেন আনন্দ ধরে না। বঙ্গবন্ধুর পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন সিরাজ ভাই, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তাঁরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কবে কখন প্রকাশ্যে পতাকাটি উড়াবি আমি বলে দেব। এখন এটা গোপনে রেখে দে’। আমরা পতাকাটি নিয়ে আবার হলে ফিরে আসি। ’৭১-এর ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দিলে ঢাকায় সর্বস্তরের জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত মতে পরদিন ২ মার্চ সারাদেশে হরতাল আহ্বান করা হয়। ওই দিন বিকেলে স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের এক প্রতিবাদ সভা কলাভবনের সামনে বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজ ভাইয়ের নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতা শেখ মোঃ জাহিদ হোসেন ওই পতাকাটি একটি বাঁশের আগায় বেঁধে ইকবাল হল থেকে মিছিল নিয়ে এসে বটতলায় জড়ো হয়। জয় বাংলা বাহিনীর এই পতাকাটি হাতে নিয়ে রব ভাই তা কলাভবনের গাড়ি বারান্দার ছাদে উঠে উত্তোলন করেন এবং ডানে বাঁয়ে বারবার নেড়ে সেখানে বেঁধে দেন। উপস্থিত হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিপুল করতালি দিয়ে পতাকাটিকে শুভেচ্ছা জানায়। তৈরি হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে প্রথম মাইলফলক। এভাবে আমরা একটির পর একটি মাইলফলক নির্মাণ করে এগিয়ে গেছি চূড়ান্ত বিজয়ের পথে। লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা সিটি গেরিলা কমান্ডার বিএলএফের অন্যতম সদস্য
×