ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলতি অর্থবছরে ৭% প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৩ মার্চ ২০১৬

চলতি অর্থবছরে ৭% প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা

এম শাহজাহান ॥ আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে মনে করছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে নতুন বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে। সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। এজন্য বাজেটে অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্চাকাক্সক্ষা পোষণ করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত সিটি গ্রুপের বিবেচনায় ২০১০ হতে ২০৫০ এই কালপর্বে বিশ্বের যে ১১টি দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে জেপি মরগানের ফ্রন্টিয়ার ফাইভ তালিকাতেও স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া প্রাইচওয়াটারহাউস কোপারস তাদের এক প্রতিবেদন মতে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যদিও বর্তমানে এ অবস্থান ৩৮তম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক সদর দফতর থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হবে। সংস্থাটির মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারতের পরের অবস্থানই হবে বাংলাদেশের। তবে প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাসে দ্বিমত রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, মোট দেশজ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। প্রতিশ্রুত বিদেশী বিনিয়োগ আনার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশী বিনিয়োগও যাতে বাড়ে সে বিষয়টির ওপরও খেয়াল রাখা হচ্ছে। বিদ্যুত ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটেও এর প্রতিফলন থাকবে। সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে আগামী বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরবরাহের দিক থেকে শিল্প ও সেবাখাত এবং চাহিদার দিক থেকে ব্যক্তিখাতের ভোগ ব্যয় এবং ব্যক্তি ও সরকারী খাতের বিনিয়োগ ব্যয় হবে এই প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। এছাড়া রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সুসমন্বয় এ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। এদিকে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে সরকারের আরও বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ দ্রুত শেষ করা জরুরী। এছাড়া বিদ্যুত খাতের টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। কারণ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় এখনও ত্রুটি-বিচ্যুত রয়েছে। জানা গেছে, আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) জিডিপি গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ লক্ষ্য নির্ধারণ করছে সরকার। কাক্সিক্ষত হারে দারিদ্র্য হ্রাস ও মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে দেশের আর্থ-সামাজিক যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে সেই অর্জন ধরে রাখা সম্ভব হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।
×