ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম দফায় ইউপি ভোটে প্রার্থীরা মাঠে নামছেন আজ

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৩ মার্চ ২০১৬

প্রথম দফায় ইউপি ভোটে প্রার্থীরা মাঠে নামছেন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে আজ থেকে মাঠে নামছেন প্রার্থীরা। প্রথম দফায় ৭৩৪ ইউপির ভোট হবে ২২ মার্চ। এ লক্ষ্যে বুধবার প্রত্যাহার শেষেই আজ জনসংযোগে নেমে পড়ছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেয়া চূড়ান্ত প্রার্থীরা। কমিশন জানিয়েছে আজ চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক নির্ধারিত থাকায় তাদের জন্য আলাদা প্রতীক বরাদ্দের দরকার নেই। তবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্য পদের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের আগে দলীয় প্রার্থীরাও প্রচারের নামতে পারবে না। ইসির হিসাব অনুযায়ী প্রথম দফায় ১৬ রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও মূলত এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে। দুটি দলের প্রার্থীরা লড়বে নৌকা আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে এবারই প্রথম রাজনৈতিক দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণের আগ্রহও অনেক বেশি। তারা মূলত এ নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। জয়-পরাজয়কে দলীয় জয়-পরাজয় হিসেবেই ভোটের অংশ কষছেন। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের পরিস্থিতিও অনেকটা সরগরম। চায়ের চুমুক থেকে শুরু করে হাটবাজার সবখানেই শুরু হয়েছে ভোটের আলোচনা। জাতীয় নির্বাচনের পরেই সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। জয়-পরাজয়ে হিসাব এখন থেকে শুরু করেছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। প্রার্থীরা আজ থেকে ভোট দোয়া চাইতে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তবে ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আচারণবিধি মেনেই প্রচার চালানোর জন্য প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যে যারা চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের প্রত্যেককেই আচরণবিধির কপি দেয়া হয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় দফায়ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে। বুধবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। তবে দ্বিতীয় দফা থেকে মনোনয়নপত্র জমা বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের বাধার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রও বাছাই করা হবে আগামী ৫ ও ৬ মার্চ শনি ও রবিবার। এছাড়া প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না চাইলে ১৩ মার্চের মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য সারাদেশে ৬৮৪ ইউপি পরিষদের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা, আদালতে মামলা চলমান থাকাসহ বিভিন্ন কারণে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩ ইউপির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার মনোনয়নপত্র জমা শেষ দিনে অনিয়ম ও সংঘর্ষের কারণে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার? সকল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেছে। এসব ইউপির মধ্যে রয়েছে জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট, দরবারপুর, ফুলগাজী, জিএম হাট, মুন্সিরহাট ও আনন্দপুর। ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এজন্যই ফুলগাজীর সব ইউপির নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। এ ছাড়াও? ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার চিখিলা, বক্সমাহমুদ ও? মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় একদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বুধবার কমিশনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে আজ ৩ মার্চ পর্যন্ত এ তিন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। সিইসির সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক ॥ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বুধবার সাড়ে তিনটার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসি সদিচ্ছা থাকলে সরকার তা পূরণ করতে দিচ্ছে না। ইসির ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দিচ্ছে না। ইসির সদিচ্ছা তখনই প্রমাণ হবে, যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। গত পৌরসভা নির্বাচনে প্রায় ২শ’ পৌরসভা সরকারী দল নিয়ে গেছে। এতে ইসির সদিচ্ছা প্রমাণ হয়নি। তাই ইসি অর্থবহ না হওয়া পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করেন। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে বিজয় ছিনিয়ে নেবে সরকারী দল। তারা ২০-৩০টি ইউপিতে বিএনপিকে ছাড় দেবে। বাকি সব ইউপিতে তাদের প্রার্থীদের জোর করে জিতিয়ে নেবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনী ব্যবস্থায় যে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টি হবে, তার কবলে সরকারী দলও পড়বে। সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়, ২শ’ পৌরসভায় সরকারী দল জেতে তবে এত বড় বড় ভবনে বড় নির্বাচন কমিশনার আর নির্বাচন কমিশন থাকার দরকার? মঈন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরকারের বলয় থেকে এখনও বের হতে পারেনি। সরকারের থাবার মধ্যে রয়েছে তারা। এ থেকে কখনও বের হতে পারবেও না। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই সরকার নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের দায়িত্ব ইসির হলেও বাস্তব অধিকার সরকারের। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এসএম আব্দুল হালিম, ক্যাপ্টেন সুজা উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ ॥ এদিকে প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি জানতে আজ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রধানদের বৈঠকের বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইসি জানিয়েছে ইতোমধ্যে প্রথম দফাসহ অন্যান্য দফায় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ইতোমধ্যে নিরাপত্তা পরিকল্পন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয়ে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ও স্টাইকিং ফোর্স নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া ভোটের অনিয়ম রোধে ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
×