ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাচসেরা সৌম্য সরকার

পাকিদের গুঁড়িয়ে ॥ ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৩ মার্চ ২০১৬

পাকিদের গুঁড়িয়ে ॥ ফাইনালে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানী সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার এ ঘোষণা দিয়ে যান। অগ্নিঝরা মার্চে বুধবার যখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেটযুদ্ধ চলছে, মাঠে এসে মাশরাফিদের এমন সময়ে কী শেখ হাসিনাও বলতে চেয়েছেন, ‘চূড়ান্ত বিজয় না আসার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাও।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা তা সরাসরি বলতে না পারলেও মাশরাফিরা তা মন থেকে অনুভব করতে পেরেছেন। আর তাইত মাশরাফি, তাসকিন, আল আমিন, আরাফাতরা পাকিস্তানীদের একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলা দেখা শেখ হাসিনার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। শেখ হাসিনার সেই হাসি আর থামেইনি। ব্যাট হাতে সৌম্য সরকারের ৪৮, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ২২ ও মাশরাফির অপরাজিত ১২ রানের জৌলুস ভরা ইনিংস ৫ উইকেটে ম্যাচই জিতিয়ে দেয়। এ জয়ে পাকিস্তানকে আবার টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। ৬ মার্চ ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ। শুরুতে পাকিস্তান ২৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। মনে হচ্ছিল, ১০০ রানও স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারবে না। কিন্তু সরফরাজ আহমেদের অপরাজিত ৫৮ ও শোয়েব মালিকের ৪১ রানে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান করে ফেলে পাকিস্তান। আল আমিন হোসেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। জবাবে ৫ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান করে জিতে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন বদলে যাওয়ার মুডে থাকে তখন কোন প্রতিপক্ষই বাংলাদেশের সামনে টিকতে পারে না। সেই প্রমাণ ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে মিলেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজেও হারানো গেছে। এবার টি২০তেও যেন উড়ছে বাংলাদেশ। তাতে পাকিস্তানের ভরাডুবি হওয়া তো সময়ের ব্যাপারই! প্রথম সন্তানের মুখ দেখেই ব্যাংকক থেকে এসে এবারের এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচ খেলা ওপেনার তামিম ইকবাল (৭) দলীয় ১৩ রানেই যখন ইরফানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তখন খানিক ভয়ও ধরে। তবে সেই ভয়ভীতি মুহূর্তেই দূর করে দেন সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান। যেখানে ১০ ওভারে পাকিস্তান ৩৪ রান করে, সেখানে ৬ ওভারেই এ রান তোলা হয়ে যায় বাংলাদেশের। সৌম্য ও সাব্বির মিলে খুব সাবধানে এগিয়ে যেতে থাকেন। সুযোগ পেলে বাউন্ডারি হাঁকান। নয়ত এক রান করেই নেন। এ করতে করতে ৪৬ রানও হয়ে যায়। এমন সময়ে আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে যান সাব্বির (১৪)। আফ্রিদি যে কী খুশি হন! যেন ম্যাচই জিতে গেছেন! যেভাবে বাংলাদেশ খেলতে থাকে, তাতে সাব্বির আউট হলেও মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মিঠুন যে ব্যাটিংয়ে থাকেন তাতে ম্যাচ জেতার আশা অনায়াসেই থাকে। সেই আশা আরও মজবুত করেন সৌম্য। মুশফিককে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। গত তিনটি ম্যাচ ব্যর্থ হলেও সঠিক সময়ে এসে জ্বলে ওঠে সৌম্যর ব্যাট। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৬৫ রান যোগ করে ফেলে বাংলাদেশ। ১৩ ওভারে গিয়ে স্কোরবোর্ডে ৮২ রানও যোগ হয়। জিততে তখন ৪২ বলে ৪৮ রান লাগে। ১৪তম ওভারে আবারও বল করতে আসেন মোহাম্মদ আমির। শুরুতে সুবিধা করতে না পারলেও এবার এমন এক উইকেট শিকার করেন, যেটিতে বাংলাদেশ শিবিরে জয় নিয়ে সংশয় খানিক হলেও ঢুকে যায়। ৪৮ রান করা সৌম্যকে বোল্ড করে দেন আমির। পাকিস্তান যেন প্রাণ ফিরে পায়। ৮৩ রানে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারায়। উইকেট কমই হারায়। কিন্তু সেট ব্যাটসম্যান সৌম্যকে হারিয়ে খানিক বিপদও যুক্ত হয়। ৫ রান যোগ হতেই যখন মালিকের বলে আম্পায়ার অনিল চৌধুরীর ভুল শিকারে পরিণত হয়ে মুশফিক (১২) এলবিডব্লিউ হয়ে যান তখন সবাই হতাশই হয়ে পড়েন! ম্যাচ জিততে তখনও যে ৩৫ বলে ৪২ রানের প্রয়োজন থাকে। এমন সময়ে সবার মনে তবুও বিশ্বাস থাকে, যে করেই হোক ম্যাচটি জিতবে বাংলাদেশই। উইকেটে থাকা সাকিবের সঙ্গে যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যুক্ত হন। যে কোন দলকে দুইজনই যে হারানোর ক্ষমতা রাখেন। সেই ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। ২৪ বলে জিততে যখন ৩৫ রানের দরকার থাকে, এমন সময়ে সাকিব ১ রান নেন। মাহমুদুল্লাহ ছক্কা হাঁকিয়ে দেন। এ ছক্কায় দল অনেকটা নির্ভারও হয়ে ওঠে। ১৮ বলে জিততে তখন ২৬ রানের প্রয়োজন পড়ে। এমন সময়ে আমির তার শেষ ওভারটি করতে আসেন। দ্বিতীয় বলেই সাকিবের (৮) বোকামিতে আমির উইকেট পেয়ে যান। তখন সব যেন নিস্তব্ধ হয়ে যায়! মাশরাফি নেমেই টানা দুই বলে দুই বাউন্ডারি মারলে আবার স্টেডিয়াম গর্জে ওঠে। ১২ বলে জিততে তখন ১৮ রানের প্রয়োজন পড়ে। তখন সবার দৃষ্টিতে ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে স্মৃতিও ধরা পড়ে। যেখানে মাহমুদুল্লাহ শেষে ব্যাটিংয়ে ছিলেন। পাকিস্তান ২ রানে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল। চরম উত্তেজনা কাজ করে। ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দুলতে শুরু করে দেয়। ¯œায়ুচাপ দুই দলের ক্রিকেটারদেরই যেন ঘিরে রাখে। প্রতি বলেই ১টি করে রান হতে থাকে। কিন্তু আরেকটু স্বস্তি যুক্ত হয় যখন ১৯তম ওভারে সামির করা তৃতীয় বলটি নো হয় এবং মাশরাফি আউট থেকেও বাঁচেন, ২ রানও নেন। এ এক বলে যে ৩ রান হয়, সেটিই বাংলাদেশকে জয়ের কাছে এগিয়ে দেয়। নো বল থেকে ফ্রি হিট পেয়েও ২ রান নেয়া হয়। ওভারের শেষ বলে আবার নো বল হয়। বলটিতে আবার পয়েন্ট ও শর্ট থার্ডম্যানের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারিও হাঁকান মাহমুদুল্লাহ। শেষ বলে ১ রান নেন। এ ওভারে ১৫ রান হয়ে যায়। তখন জিততে ৬ বলে ৩ রানের প্রয়োজন থাকে। জেতা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ (২২*)। এবার মাহমুদুল্লাহই শেষে ম্যাচ জেতান। বাউন্ডারি হতেই মাশরাফিকে (১২*) নিয়ে দৌড় শুরু করেন। মাটিতে লুটোপুটি খান। সে কী আনন্দ! ন্যাড়া উইকেট। ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। দুই দলেরই তাই টস জিতলে ব্যাটিং নেয়ার আশা ছিল। সেই আশা পূরণ হলো পাকিস্তানের। শুরুতেই জয় মিলল। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে পাকিস্তান আগে ব্যাট করার সুবিধাই পেল। কিন্তু তা আর কাজে লাগাতে পারল না। সেই সুবিধা শুরুতে ভোগ করতেই পারলেন না দুই ওপেনার খুররম মনজুর ও শারজিল খান। তাসকিন আহমেদ ও আল আমিনের বলগুলো যেন তাদের সামনে গুলির মতো আসতে থাকল। আল আমিন তো প্রথম বলেই বাউন্স দিয়ে খুররমকে (১) বোকা বানালেন। খুররমের ব্যাটে ‘চুমু’ খেয়ে বল গেল মুশফিকুর রহীমের হাতে। খুররম হাঁটা ধরলেন সাজঘরের পথে। স্টেডিয়ামে সে কী আওয়াজ, ‘আল আমিন, আল আমিন’, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। সাজঘরে ফেরার সময় নো হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য যখন খুররম একটু থমকে দাঁড়ালেন, তার উদ্দেশে ‘ভুয়া, ভুয়া’ চিৎকারে ফেটে পড়ে পুরো স্টেডিয়াম। যেন এ এক উইকেট নিতেই জিতে গেছে বাংলাদেশ! খেলা সাড়ে সাতটায়। অথচ বিকেল ৪ টা থেকেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বাইরে জনস্রোত দেখা যায়। যে স্র্রোত ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে পড়ে। সবার মনে একটিই আশা, সর্বশেষ টি২০ ম্যাচে যেমন পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, এবারও হারাক। পাকিস্তানকে হারানোর জন্য একাদশেও পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমান ইনজুরিতে এশিয়া কাপ থেকেই বাদ পড়ে গেছে। তার স্থানে ওপেনার তামিম ইকবালকে নেয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই তামিম খেলবেন। খেললেনও। আর নুরুল হাসান সোহানকে বসিয়ে রেখে স্পিনার আরাফাত সানিকে একাদশে নেয়া হয়েছে। সেই আরাফাতই কাজের কাজটি করে দিয়েছেন। স্পিন ভেল্কি দেখিয়েছেন নিজের প্রথম ওভারেই। শুরু থেকেই বিপাকে পড়ে থাকে পাকিস্তান। ৩ ওভারে মাত্র ৮ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে। এরমধ্যে দলের চতুর্থ ওভারেই আরাফাতের ভেল্কি দেখা যায়। শারজিলকে (১০) বোল্ড করে দেন আরাফাত। পঞ্চম ওভারে অধিনায়ক মাশরাফি বল করতে এসে মোহাম্মদ হাফিজকে (২) আউট করে দেন। যদিও এলবিডাবলিউটি হয়নি। তা আম্পায়ারের ভুল। তাতে লাভ হয় বাংলাদেশেরই। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তান। ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। ১৮ রানেই ৩ উইকেটের পতনে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। তখন পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির চেহারা যতবার টিভিতে দেখিয়েছে, ততবারই ‘বুমবুমে’র চেহারা ফ্যাকাশেই লেগেছে। বোঝাই গেছে, হারের আশঙ্কায় বুক ‘ধড়ফড়’ করছে আফ্রিদির। তাসকিন আহমেদের কপাল প্রতিটি ম্যাচে পুড়ে! উইকেট পেতে পেতে আর পাওয়া হয় না। কারণ, একটাই; প্রথমে যখন তাসকিনের বলে কোন ব্যাটসম্যানের ক্যাচ ওঠে, তা মিস হয়ে যায়। এদিন তাসকিনের বলে ওঠা ক্যাচ আর মিস হয়নি। সাকিব আল হাসান ধরে ফেলেন। কার ক্যাচ? পাকিস্তানের বিপদের সময় যার ব্যাট হাতে কিছু করে দেখানোর প্রয়োজন ছিল, সেই উমর আকমলের (৪) ক্যাচ। ডিপ পয়েন্ট থেকে সাকিব যখন ক্যাচটি ধরে ফেললেন, সঙ্গে সঙ্গে উড়তে চাইলেন তাসকিন। আনন্দ যে দ্বিগুণ পেয়েছেন! তাসকিনের এ আনন্দে আফ্রিদির মুখখানা আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। দাত দিয়ে শুধু নখ কামড়াচ্ছিলেন আফ্রিদি। দেখে খুবই করুণ দৃশ্য মনে হয়েছে। পাকিস্তানের কোচ হিসেবে ওয়াকার ইউনুসের ক্যারিয়ার শেষ প্রান্তে। সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। তার স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোচ আকিব জাভেদ পাকিস্তানের কোচের দায়িত্ব পেতে পারেন। সেটি টি২০ বিশ্বকাপের আগেও হয়ে যেতে পারে। এশিয়া কাপের আগে টুর্নামেন্টে ভাল করতে না পারলে টি২০ বিশ্বকাপের দলে ‘ওলট-পালট’ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আফ্রিদি। এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপে আফ্রিদিই নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না! ভারতের বিপক্ষে হার হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে যখন ৩৪ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে পাকিস্তান তখনই যেন আফ্রিদিদের হারের ইঙ্গিত মিলে যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে হার মানেই ওয়াকার ও আফ্রিদির ক্ষমতাচ্যুত হওয়া! সেটি যেন শোয়েব মালিক ভালই আঁচ করতে পারেন। তাইত সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মালিক। ঠুকঠুক করেও খেলেন। আবার সুযোগ পেলেই ‘ছক্কা-চার’ও হাঁকিয়ে দেন। তাতে করে ১৫ ওভারে গিয়ে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে ৭৯ রান যোগ হয়ে যায়। যেখানে ১০ ওভারে ৩৪ করে পাকিস্তান, সেখানে পরের ৫ ওভারেই ৪৫ রান হয়ে যায়! মালিক তো বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। সাকিবের করা ১৬তম ওভারের শেষ দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান। দ্রুতই স্কোরবোর্ডে রান যোগ হতে থাকে। এমন সময়ে লাগাম টেনে ধরেন আরাফাত। আরাফাতের করা ১৭ ওভারের তৃতীয় বলে সুইপ করে কভার দিয়ে চার মারার পর পরের বলেই আবার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন মালিক। তবে আউট হওয়ার আগে ৪১ রানের প্রশংসনীয় ইনিংস খেলে যান। যা পাকিস্তানকে অনেকদূর নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে সরফরাজের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন মালিক। ৯৮ রানে মালিক যখন আউট হন, তখন আফ্রিদি ব্যাট হাতে নামেন। খানিক ভয়ও সবার মনে ঢুকে যায়। যদি মারমুখী হয়ে খেলায় সফল হয়ে যান আফ্রিদি। তাহলে রান আকাশচুম্বী হয়ে যাবে। কিন্তু ৪ রান যোগ হতেই ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের ৬ উইকেটের পতন ঘটে। তবে বাংলাদেশের জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠা সরফরাজ ঠিকই উইকেটে থাকেন। অর্ধশতকও করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিতও থাকেন। আফ্রিদি আউটের পর আনোয়ার আলী ব্যাটিংয়ে নেমে গুরুত্বপূর্ণ ‘ছোট্ট’ ইনিংসটি খেলে দেন। ইনিংসের শেষ বলে আল আমিনের বলে আউট হওয়ার আগে ১৩ রান করেন। যে তাসকিন ও আল আমিন মিলে শুরুতেই পাকিস্তান ইনিংসে আতঙ্ক ধরিয়ে দেন, তাদের বলেই শেষে ‘ছক্কা-চার’ হাঁকিয়ে দলকে ১২৯ রানে নিয়ে যান ৪২ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৫৮ রান করা সরফরাজ। ১০ ওভারে পাকিস্তান যেখানে ৩৪ রান যোগ করে, সেখানে শেষ ১০ ওভারে ৯৫ রান যোগ করে ফেলে! তাতেও কোন লাভ হয়নি। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২ রানের জন্য হেরে কেঁদেছিলেন সাকিব, মুশফিকরা। এবার আফ্রিদি, আমির, মালিকদের কাঁদিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয় বাংলাদেশ।
×