ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধুত্ব প্রত্যাশা প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩ মার্চ ২০১৬

বন্ধুত্ব প্রত্যাশা প্রাপ্তি

ফেরদৌসের এ নিয়ে ক’বার হলো? প্রশ্নটি যখন করা হয়, তখন সময় এতটাই প্রাসঙ্গিক যে, ‘কি কয়বার?’ সেটা উহ্য রাখলেই কি, বা না রাখলেই কি- সমান কথা। ক’দিন আগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা-উত্তেজনা-উচ্ছ্বাস-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। যদিও সাম্প্রতিক অস্কারের আসর খানিকটা ভাটা এনে দিয়েছে এ ইস্যুতে, তবু আলোচনা এখনও হারিয়ে যায়নি। তাই ফেরদৌস অতশত জানতে না চেয়ে বলেই দেন- ‘চারবার’। ১৯৯৮-এ প্রথমবার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র জন্য। ‘গঙ্গাযাত্রা’র জন্য ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার। তৃতীয়বার পেয়েছেন ২০১১ সালে, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ ছবিতে অভিনয় করে। আর চতুর্থবার, মানে এবার যে ছবির জন্য পেলেন সেটি একটি দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফেরদৌসের কাছে। বিষয়টি এমন যে, তার কাছে, এ ছবির জন্য পুরস্কার পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরী ছিল। কারণ, প্রযোজনা। এ ছবির প্রযোজকই যে তিনি স্বয়ং! প্রথম প্রযোজনা। প্রথম দানেই বাজিমাৎ! হাউ এক্সাইটিং! কিন্তু শুধু ফেরদৌসকে নিয়েই কথা হচ্ছে কেন? পাশে তো আরও একজন আছেন! কে তিনি? কে আবার, মৌসুমী! তার সঙ্গেও তো বহু কথা বাকি আছে! না হলে? রাগ করবেন? উত্তরে যে হাসিটি ফেরত পাঠালেন, সেটি চিরচেনা, কিন্তু মূল্যবান। এ হাসির প্রেমে সেই যে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ঝুঁকে পড়ল দর্শক, ডুবে আছে এখনও। মৌসুমীর বয়স বেড়েছে, কিন্তু হাসিটা এখনও কিশোরী, অষ্টাদশী। তার কাছেও প্রসঙ্গ উহ্য রেখে একই প্রশ্ন, ‘কয়বার?’ বুঝে ফেলেন তিনিও। উত্তরে ফেরদৌসের চেয়ে সংখ্যায় একটা কম। কিন্তু সংখ্যায় কি যায় আসে! এ নিয়ে মৌসুমী সেরা অভিনেত্রী হলেন তৃতীয়বারের মতো। ২০০১-এ ‘মেঘলা আকাশ’-এর জন্য পেয়েছিলেন প্রথমবারের মতো। বহু বছর বাদে ২০১৩-তে এসে চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’-এর জন্য আবার হন সেরা অভিনেত্রী। আর এবারের উপলক্ষ্য ‘তারকাঁটা’। এতবার যে উচ্ছ্বাসগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন মৌসুমী-ফেরদৌস! হলভর্তি লোক, সরাসরি সম্প্রচার, নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, মুহুমর্ূুহু করতালি, প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন হাতে- এবার একই দৃশ্যের অবতারণা হবে। যেন ‘রিলে করে’ দেখানো! কিন্তু এবার তারা খুশি, বেশি, দ্বৈতভাবে, অন্যবারের চেয়ে। কারণ, ওই যে, শুরুতেই বলা হয়েছিল- বন্ধুত্ব। এত বছরের বন্ধুত্ব তাদের! কবে থেকে তারা বন্ধু? প্রশ্ন করতেই দুজনই ফিরিয়ে নিয়ে যান ‘মিস ডায়না’র দিনগুলোতে, সাল ১৯৯৯-এ। ওই বছরই প্রথমবার জুটি হয়ে অভিনয় করেছিলেন তারা। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মৌসুমীর ছবি সংখ্যা দেড়শ’ পেরিয়েছে, প্রায় সমান্তরাল ফেরদৌসেরও। একটা দুটো করে হিসাব করে দেখা গেল, জুটি হয়ে ত্রিশটিরও বেশি ছবি করা হয়ে গেছে তাদের। বন্ধুত্ব এখনও অটুট, এত বছর পর এসেও। ভুল বোঝাবুঝি, ব্যক্তি স্বার্থের টানাপড়েন- কোন ঝড়ই ছুঁতে পারেনি। ফেরদৌস যখন প্রথম প্রযোজনা করতে নামলেন ‘এক কাপ চা’ দিয়ে, প্রথম কাজটিই করলেন মৌসুমীকে। প্রযোজিত দ্বিতীয় ছবি ‘পোস্টমাস্টার ’৭১-এর ও একই গল্প। মৌসুমী আছেনই। শুধু কি এটা? বিভিন্ন অনুষ্ঠান সেটা হোক এ্যাওয়ার্ড, ঈদ কিংবা অন্যান্য ফেস্ট- বিশেষ আয়োজনে একসঙ্গে পারফর্ম করার ডাক পেলে ছাড়তে চান না কেউই। বহুবার তাদের দেখা গেছে উপস্থাপনায়, বহুবার নাচে, একসঙ্গে। এত বছর হয়েছে কি, হয়ত ফেরদৌস পেলেন জাতীয় পুরস্কার কোনবার, কোনবার মৌসুমী, ফোন করে সঙ্গে সঙ্গে অন্যজন শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু এবারই, এই প্রথম, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, দুটো ক্যাটাগরিই তাদের দখলে। দুজনই দুজনকে অভ্যর্থনা করার সময় এলো বহু বছর বাদে, প্রথমবার।
×