ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চালকের আসনে মমি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩ মার্চ ২০১৬

চালকের আসনে মমি

চালকের আসনে শরীরটা বসা। হাতটা রেডিও টেলিফোনের কাছে। যেন এখনই একটা ফোন করতে চায়। পরিত্যক্ত একটি নৌকা থেকে মমি হয়ে যাওয়া এক নাবিকের দেহ উদ্ধার হয়েছে ফিলিপিন্সে। নৌকা থেকে পাওয়া ছবি, চিঠি ও অন্যান্য নথি দেখে মনে করা হচ্ছে, দেহটি নিখোঁজ জার্মান নাবিক মানফ্রেড ফ্রিৎজ বাজোরাটের। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ফিলিপিন্সের উপকূল থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ ধরছিলেন ক্রিস্টোফার রিভাস নামে এক যুবক এবং তাঁর বন্ধুরা। হঠাৎই চোখে পড়ে কিছু দূরে ভেসে থাকা একটি ভুতুড়ে নৌকা। পালটা ভাঙা। ৪০ ফুট লম্বা সাদা রঙের ইয়ট জাতীয় নৌকাটির গায়ে নাম লেখা ছিল ‘সায়ো’। রিভাস এবং তাঁর সঙ্গীরা নৌকাটির মধ্যে ঢুকে চমকে যান। রেডিও রুমে চেয়ারে বসে রয়েছে আস্ত একটি মমি! নৌকাটিকে সঙ্গে নিয়ে পরের দিন ভূখণ্ডে ফিরে আসেন রিভাসরা। ফিলিপিন্সের বারোবো থানার পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশই তার পর ফেসবুকে ঘটনাটি লিখে ওই ইয়ট থেকে পাওয়া ছবিগুলো পোস্ট করে। নথি থেকে জার্মান নাবিক মানফ্রেডের নাম খুঁজে পাওয়ার কথাও তারাই জানায়। ৫৯ বছরের মানফ্রেড ঠিক কত দিন আগে, কীভাবে মারা গেছেন, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। নৌকার মধ্যে টিনের খাবার যথেষ্ট ছিল। ফলে খাবারের অভাব তাঁর হয়নি। নৌকায় দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিও ছিল না। ময়নাতদন্তে মানফ্রেডের দেহে কোন আক্রমণের চিহ্নও মেলেনি। চিকিৎসকদের একাংশ মমির বসার ভঙ্গি দেখে মনে করছেন, ওই ব্যক্তি সম্ভবত ফোন করতেই যাচ্ছিলেন। সেই মুহূর্তে আকস্মিক তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের ধারণা, আচমকা হৃদরোগে হয়ত তার মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে মানফ্রেডকে চিনতেন, জানতেন এমন নাবিকরা বলছেন, মানফ্রেড দক্ষ নাবিক। সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর পরেই নৌকার পাল ভেঙেছে। মৃত্যুর আগে নয়। এক বছর আগেও জন্মদিনে ফেসবুক মারফত যোগাযোগ হয়েছিল মানফ্রেডের সঙ্গে। তারপর আর কোন খবর নেই। সেই হিসেবে গত এক বছরের মধ্যেই মানফ্রেড মারা গিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। নোনা বাতাস, শুকনো আবহাওয়া আর উষ্ণ তাপমাত্রায় দেহটি পচেনি। একেবারে মমি হয়ে গেছে। জার্মানির রুড় অঞ্চলের বাসিন্দা মানফ্রেড সারাজীবনই সমুদ্রে কাটিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী ক্লাউডিয়াও নাবিক ছিলেন। মেয়ে নিনাও এখন নাবিকের কাজ করেন। ২০০৮ সালে মানফ্রেড এবং তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। এর দু’বছর পর ক্যানসারে মারা যান ক্লাউডিয়া। নৌকায় পাওয়া গেছে প্রয়াত স্ত্রীকে লেখা মানফ্রেডের চিঠি। তাতে লেখা, ‘তিরিশ বছরেরও বেশি আমরা একই পথের পথিক ছিলাম। তারপর বাঁচার আকাক্সক্ষা শয়তানের শক্তির কাছে হেরে গেল। তুমি চলে গেলে। তোমার আত্মা শান্তি পাক।’ এবার ইতি, মানফ্রেড।-আনন্দবাজার
×