ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;মিরন শেখের জবানবন্দী

সাখাওয়াতের নির্দেশে রাজাকাররা আমার পা ভেঙ্গে দেয়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩ মার্চ ২০১৬

সাখাওয়াতের নির্দেশে রাজাকাররা আমার পা ভেঙ্গে দেয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির নেতা ও যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৬ষ্ঠ সাক্ষী মিরন শেখ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ‘সাখাওয়াতের নির্দেশে রাজাকাররা আমার পা মোচড় দিয়ে ভেঙ্গে দেন’। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল (৬৩) এবং আব্দুল মন্নানকে (৬৪) কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীর জবানবন্দী পেশ ও জেরার সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আর আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান ও আব্দুস শুকুর। মামলায় সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান, মোঃ আব্দুল আজিজ সরদার, মোঃ আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মোঃ লুৎফর মোড়ল এবং মোঃ আব্দুল খালেক মোড়ল। আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন ও মোঃ লুৎফর মোড়ল। সাক্ষী মিরন শেখ তার জবানবন্দীতে বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করি। যুদ্ধ চলাকালে আমি আমার স্ত্রী ও ভাই-বোনদের দেখতে গ্রামের বাড়িতে আসি। গ্রামে আসার খবর পেয়ে পার্শবর্তী চিংড়া রাজাকার ক্যাম্পের ৩০/৪০ জন রাজাকার আমাদের গ্রাম ঘেরাও করে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে’। তিনি আরও বলেন, ‘এরপর ১০/১২ জন রাজাকার আমাদের বাড়ি ঘেরাও করলে আমি দৌড়াতে থাকি এবং এক পর্যায়ে মাঠের মাঝখানে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে যাই। এই মামলার আসামি আব্দুল খালেক হত্যা করার জন্য আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে আমার বাম হাতে গুলি লাগে এবং আমার বাম হাতের দুটি আঙ্গুল ঝুলে পড়ে। এরপর আমাকে রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আসামি সাখাওয়াতের নির্দেশে আমাকে পিটাতে থাকলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।’ তিনি বলেন, রাতে জ্ঞান ফিরলে রাজাকার সাখাওয়াত আমার কাছে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প সম্পর্কে তথ্য চায়। আমি তথ্য দিতে না চাওয়ায় রাজাকার সাখাওয়াত মোচড় দিয়ে আমার বাম পা ভেঙে দেয় এবং তখন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। পরের দিন জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই আমি কপোতাক্ষ নদের দক্ষিণ পাড়ে পড়ে আছি। আমার কান্নাকাটির শব্দ শুনে গ্রামের লোকজন গরুর গাড়িতে করে আমাকে ভারতের টাকি হাসপাতালে ভর্তি করায়। তখন ডাক্তার আমার অপারেশন করে আমার দুটি আঙুল কেটে ফেলে দেন। পরে আমি দেশে ফিরে এসে দেখতে পাই, রাজাকাররা আমার বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। মোট ১২ আসামির মধ্যে বাকি তিনজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৬ জুন সাখাওয়াতসহ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে আদালত ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। কারাগারে প্রেরণ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং আব্দুল মন্নানকে কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২ মে দিন ঠিক করেছেন আদালত। ওই দিন মামলার তদন্তে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোঃ মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতারের পর বুধবার সকালে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ১ মার্চ মৌলবীবাজারের বড়লেখা থানা পুলিশ পৌর শহরের পাখিয়ালা গ্রামের মৃত মির্জান আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের তারাদরম গ্রামের মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে আব্দুল মন্নানকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মানবতাবরোধী অপরাধের মামলায় বড়লেখার ৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলার আসামি তিনজন হলেন, আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই মিয়া, আব্দুল আজিজ ওরফে আবুল ও আব্দুল মতিন । আসামিদের মধ্যে আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মতিন সম্পর্কে সহোদর। তারা একাত্তরে ছাত্রলীগ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ দুই সহোদর মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের বারপুঞ্জিতে যান। কিন্তু প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তারা পালিয়ে এসে রাজাকারদের সঙ্গে যোগ দেন।
×