ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিবাচক সাড়া সরকারের

মেঘনাঘাটে ৭৫০ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে রিলায়েন্স

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩ মার্চ ২০১৬

মেঘনাঘাটে ৭৫০ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে রিলায়েন্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স গ্রুপের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রস্তাবে সাড়া দিতে যাচ্ছে সরকার। বুধবার বিকেলে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। প্রাথমিকভাবে মেঘনাঘাটে ৭৫০ মেগাওয়াট গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হবে রিলায়েন্সকে। যদিও রিলায়েন্স পর্যায়ক্রমে দেশে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, পিডিবি চেয়ারম্যান শামসুল হাসান মিয়া, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ ছাড়াও পাওয়ারগ্রিড কোম্পানি এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুত, জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে এই কাজ দেয়া হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিকে। মূলত রিলায়েন্সের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, রিলায়েন্সের প্রস্তাবের মধ্যে প্রাথমিকভাবে মেঘনাঘাটে ৭৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেবে সরকার। কেন্দ্র স্থাপনে জমি দেবে সরকারের পক্ষে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের অধীনে মহেশখালীতে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করার জন্য একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে রিলায়েন্স। স্থাপিত ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য তাদের দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি প্রয়োজন হবে। বাকি গ্যাস সরকার আন্তর্জাতিক বাজারদরে তাদের কাছ থেকে কিনে নেবে। বৈঠকে বলা হয়, মহেশখালি থেকে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণ করবে বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি। তবে এর ব্যয় রিলায়েন্সকে বহন করতে হবে। ওই পাইপলাইন দিয়েই এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করা হবে। গত বছর থেকেই রিলায়েন্স দেশে বিদ্যুত কেন্দ্র করার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় দেশটির শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী আদানী এবং রিলায়েন্স বাংলাদেশে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে আসে। আদানী গ্রুপের সঙ্গে ওই সময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও রিলায়েন্সের সঙ্গে তা হয়নি। কারণ হিসেবে মেঘনাঘাটে এত বড় গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের বিপক্ষে ছিল সরকারের কারিগরি কমিটি। রিলায়েন্স শুরু থেকেই বলে আসছে তারা মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে, এর বিপরীতে তাদের জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের সরবরাহ দিতে হবে। কারিগরি কমিটির সদস্যরা ওই সময় জানান, এত বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জাতীয় গ্রিডের গ্যাস সরবরাহ সম্ভব নয়। কোন কারণে রিলায়েন্স এলএনজির যোগানে সমস্যা করলে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের সব শিল্প-বাণিজ্যের উৎপাদন বন্ধ করে রিলায়েন্সকে গ্যাস দিতে হবে, যা যৌক্তিক নয়। ওই সময় তাদের সব কেন্দ্র মহেশখালী অথবা চট্টগ্রামে স্থাপনের পরামর্শ দেয় কারিগরি কমিটি। যদিও এক বছর পর এসে সরকার সেই মতামত অগ্রাহ্য করে রিলায়েন্সের ওই প্রস্তাবেই সাড়া দিতে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম কেন্দ্রটির জন্য রিলায়েন্স সরকারের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা চাচ্ছে। পাশাপাশি মহেশখালীতে একটি স্বতন্ত্র ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানি করে তা সরবরাহ করার কথা বলছে তারা। দামের বিষয়ে রিলায়েন্স দুটি পৃথক মূল্য কাঠামোর প্রস্তাব করেছে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের মূল্য সাত টাকা ৯৯ পয়সা থেকে আট টাকা ২২ পয়সা পড়বে বলে জানানো হয়। প্রথম ধাপের ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের মূল্য ধরা হয়েছে সাত দশমিক ৯৯৪৬ টাকা। এর মধ্যে তিন দশমিক ২০০৫ টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট এবং ৪ দশমিক ৭৯৪১ টাকা জ্বালানি মূল্য ধরা হয়েছে। একই কেন্দ্রের অন্য মূল্য কাঠামোতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পড়বে ৮ দশমিক ২১৯৮ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৩ দশমিক ৪৪৪৫ টাকা এবং জ্বালানি মূল্য ৪ দশমিক ৭৭৫৩ টাকা। প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রথম কেন্দ্রটি নির্মাণ হবে মেঘনা ঘাটে। এজন্য রিলায়েন্স সরকারের কাছে এই এলাকায় ৪০ একর জায়গা চেয়েছে। তবে কোন কারণে জমি না পাওয়া গেলে তারা নিজেরাই জমি ক্রয় করবে। প্রথম কেন্দ্রটি নির্মাণের পর দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামে ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এজন্য পিডিবির কাছে ১০০ একর জায়গা চাওয়া হয়েছে। তৃতীয়ভাগে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার শেষ কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে চায় রিলায়েন্স। এজন্য ৬০ একর জায়গা চেয়েছে তারা।
×