ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় রোগীদের দুর্ভোগ

বেহাল স্বাস্থ্য সেবা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৩ মার্চ ২০১৬

বেহাল স্বাস্থ্য সেবা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২ মার্চ ॥ দুই মাস ১২ দিন বয়সী আবু বকরকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মা মিতু বেগম। চার দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। তিন দিন পরে মঙ্গলবার সকালে ৫ টাকা দামের একটি বনরুটি, একটি সাগর কলা এবং এক চিমটি চিনি দেয়া হয়েছে। আর কোন খাবার জোটেনি। এ ক’দিনে বিছানার চাদর বদলানো হয়নি। বালিশের কভার নেই। তেলচটা অবস্থায় রয়েছে। সর্বত্র ময়লা আবর্জনা। দুটি বাথরুমের একটি দরজা অর্ধেক ভাঙ্গা, একটির নেই। ভেসিন ভাঙ্গা। টয়লেটেরও একই দশা। ব্যবহারোপযোগিতা নেই। একই দশা মহিলা ওয়ার্ডের। দুর্গন্ধে একাকার। ময়না-আবুল দম্পতি ভর্তি হয়েছেন চারদিন আগে। একদিন আগে থেকে খাবার পাচ্ছেন। দুপুরে এক টুকরো ছোট্ট সাইজের রুই মাছ (নলা মাছের মতো) আর ডাল দিয়ে দুই বেলা খেতে দেয়া হয়েছে। বালিশের কভার নেই। বিছানার চাদরও পাল্টায়নি এই চারদিনে। এ বিভাগেরও দুটি বাথরুমের নিচের অর্ধেক দরজার তক্তা নেই। ভাঙ্গা। টয়লেটেরও অর্ধেক দরজা নেই। আম্বিয়া খাতুন ভর্তি আছেন ১০ দিন ধরে। তার কথ্য মতে ১০ দিন পরে মঙ্গলবার ফ্লোর মোছা হয়েছে। গোটা হাসপাতালের বেহাল দশার এটি খ-চিত্র। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, মহিলা ওয়ার্ডে ৩৫ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ৩৪ জন রোগী ভর্তি আছে। কাগজ-কলমের হিসাব এটি। বাস্তবে অনেক রোগী শয্যায় নেই। ভর্তি হয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। যেন কোন নিয়মশৃঙ্খলা নেই। আলাউদ্দিন বিশ^াস ও বিলকিছ দম্পতি জানালেন, হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন ভাল থাকলেও তাদের বাইরে থেকে ৩৫০ টাকায় এক্স-রে করাতে হয়েছে। ইসিজি করাতে হয়েছে ৩৫০ টাকায়। নিয়মিত চিকিৎসকের দেখা পায় না রোগীরা। সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ৭০ বছর বয়সী প্রফুল্ল চন্দ্র মিত্র জানালেন, ল্যাট্রিন ব্যবহার করা যায় না। নার্স-আয়া কিংবা ব্রাদার- এদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের এন্তার অভিযোগ। মোটকথা হাসপাতালটিতে নেই কোন প্রশাসন। ডাঃ লোকমান হাকিমকে কলাপাড়ায় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই হাসপাতালের প্রশাসন ব্যবস্থায় বেহালদশা। ভেঙ্গে পড়েছে চেন অব কমান্ড। ভারপ্রাপ্ত হয়েও তিনি তা নেমপ্লেটে লিখছেন না। ইউইচএর একটি কক্ষ এবং তার নিজস্ব চেম্বারের জন্য আরও একটি কক্ষ তিনি দখল করে রেখেছেন। নিজে এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক হয়েও ওই দায়িত্ব পালন না করায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ থাকা সত্ত্বেও মার্তৃস্বাস্থ্য সেবা (সিজারিয়ান) বন্ধ হয়ে আছে উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) কারনে। অজ্ঞানের বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ তার থাকলেও তিনি তা করছেন না। তাই বন্ধ হয়ে আছে ইওসি বিভাগ। বাধ্য হয়ে গরিব প্রসূতিরা ১০-২০ হাজার টাকা ব্যয় করে কাছের কোন ক্লিনিক কিংবা পটুয়াখালী-বরিশালে গিয়ে সিজার করে সন্তান প্রসব করছে। অথচ ইওসি বিভাগ চালু থাকাকালে ফি মাসে ৩০-৩৫ জন মা সিজারিয়ান সুবিধা নিত। পেত মাতৃ স্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের সহায়তা। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এইচ মাহবুব আলম জানান, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও রোগীর জন্য খাবার বরাদ্দ রয়েছে ৩১ জনের। গড়ে এখানে ইনডোরে রোগী ভর্তি থাকছে ৫০-৬০ জন। আর আউটডোরে ১১০ থেকে ১২০ জন। হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও এ চিকিৎসক জানালেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ লোকমান হাকিম জানান, আমি এনেসথেসিয়া কোথাও করি না। আর এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক ডাঃ ফরহাদ একটি কোর্স সম্পন্নের জন্য চলে গেছেন, তাই সিজারিয়ান বন্ধ রয়েছে।
×