ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোনালি দিনের অপেক্ষা

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ ক্রিকেট বনাম ফুটবল

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৩ মার্চ ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ ক্রিকেট বনাম ফুটবল

শ্যামল চৌধুরী বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল এক জনপ্রিয় খেলা। শহর বন্দর ছাপিয়ে গ্রামবাংলা পর্যন্ত খেলার রাজা ফুটবল। ক্রীড়ামোদী মানুষের কাছে ফুটবল এক প্রিয় খেলার নাম। কালের বিবর্তনে বর্তমানে ক্রীড়া জগতে শীর্ষে রয়েছে ক্রিকেট। দিনকে দিন সব বয়সী মানুষের কাছে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে সকলেই এখন দেশ-বিদেশের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বা ম্যাচের খবর রাখে। টেলিভিশন সেটের সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টাজুড়ে উপভোগ করে ক্রিকেট খেলা। অথচ এমন এক সময় গেছে যখন ফুটবল ছিল মানুষের কাছে অতি উপভোগ্য একটি খেলা। ফুটবল খেলা উপভোগ করতে মানুষ ছুটত দলে দলে। গ্রামে-গঞ্জে ছিল বড় ফুটবল খেলার মাঠ। এসব মাঠে জমে উঠত জমকালো ফুটবলের আসর। গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠত ফুটবল দল বা ফুটবল একাদশ। বিকেল হতেই শৌখিন ফুটবলাররা রং-বেরঙের জার্সি ও বুট নিয়ে মাঠে যেতেন। গ্রামাঞ্চলেও ছিল অনেক কৃতী ফুটবলার। যারা ক্রীড়া নৈপুণ্যে খুবই পারদর্শী ছিলেন। ফুটবল মৌসুমে শুরু হতো প্রতিযোগিতামূলক খেলার আসর। এ জন্য আগেভাগেই ফিক্সচার ছাড়া হতো। ফিক্সচার অনুযায়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে যে দল বিজয়ী হতো তাদেরকে দেয়া হতো নানা আকারের শিল্ড। এমনকি গ্রামে বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের মধ্যে খাসি ও টেলিভিশন বাজি ধরে ফুটবল খেলা জমে উঠত। বৈশাখ পেরিয়ে জ্যৈষ্ঠ এলেই হাওরাঞ্চলে জমে উঠত ফুটবল আয়োজন। হাওরের উঁচু জায়গায় (কান্দায়) অস্থায়ী ফুটবল মাঠ তৈরি করা হতো। এ সময়ে ফুটবল ও খেলার অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার ধুম পড়ে যেত। মাঠের চারদিকে ঘিরে ফুটবলপ্রিয় মানুষের জমায়েত থেকে স্ব স্ব দলের পক্ষে উৎসাহ যোগাতেন। ফুটবলের এ চিরচেনা রূপ আর আগের মতো নেই। নেই ফুটবলের উপযোগী মাঠ। যেগুলো আছে, সেগুলোতে এখন আর আগের মতো ফুটবল গড়ায় না। ফুটবলের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে ক্রিকেট। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত যেখানেই একটু খালি জায়গা সেখানেই ক্রিকেটের আয়োজন। ফুটবলের জায়গায় শোভা পাচ্ছে ব্যাটবল। ক্রিকেটে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে গেছে। আমাদের ক্রিকেটাররা এ খেলায় অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। ক্রিকেটে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি বাঙালীর প্রিয় খেলা ফুটবলকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ফুটবলেও আমাদের অর্জন কম নয়। ময়মনসিংহের ধোবাউরা উপজেলার কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যারা ফুটবল খেলায় অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়ে সুনাম অর্জন করেছে। ফুটবলের সোনালি অতীতকে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। ফুটবলকে নিয়ে যেতে হবে নতুন উচ্চতায়। আশার কথা, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সুপার লীগের এক কোটি টাকার লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান হচ্ছে। এ ধরনের ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান এটাই প্রথম। বিসিএলের ম্যাচ সম্প্রসারিত হবে বিশ্বের ১০০টি দেশে। এতে প্রমাণ করে, ফুটবলের নতুন ধারা শুরু হচ্ছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ফুটবল দুনিয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হোক, ফুটবল ফিরে পাক তার সোনালি অতীত। এমনটিই হোক ফুটবলপ্রেমীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃঢ় অঙ্গীকার। মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা থেকে
×