ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি ভোটের মাঠ গরম হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ মার্চ ২০১৬

ইউপি ভোটের মাঠ গরম হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে প্রথম দফায় প্রার্থীরা আগামীকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারে নামছেন। যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চান তাদের আজকের মধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রত্যাহার শেষে আগামীকাল ৩ মার্চ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেবে কমিশন। তারা জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত প্রতীক থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কমিশনের অনুমোদিত প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়া সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদেও কমিশন অনুমোদিত প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রচার যুদ্ধে নেমে পড়বেন। এদিকে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়সীমাও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার। কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭৩৮ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধম দফায় নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট ৩৯ হাজার ৪৩০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া। তবে বাছাইয়ে শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে প্রথম দফায় মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই শেষে যেসব ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রয়েছে আজ প্রত্যাহার শেষে তাদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রথমবারের মতো ইউপিতে দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে ইউপি নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হলেও ১১৪ ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। ফলে এসব ইউপির নির্বাচন অনেকটাই একমুখী হবে বলে জানা গেছে। এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার চালানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল প্রতীক বরাদ্দ সাপেক্ষে সব প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে প্রার্থীদের প্রতীক বা পোস্টার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কমিশনের বিধি নিষেধ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। পোস্টার অবশ্যই সাদাকালো হতে হবে। প্রতীকের আয়তন ৬০ সেন্টিমিটার বাই ৪৫ সেন্টিমিটারের বেশি হবে পারবে না। পোস্টারের ব্যবহৃত ছবি সাধারণ ছবি বা পোস্ট্রেইট হতে হবে। প্রতীকের আকার দৈর্ঘ প্রস্থ বা উচ্চতা তিন মিটারের বেশি হতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নিজ ছবি ও প্রতীক ব্যতীত কারও নাম, ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রাজনৈতিক দলের মনোনীত হলে দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টার বা লিফলেটে ব্যবহার করতে পারবেন। দেয়াল বা যানবাহনে কোন পোস্টার বা লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না। তবে নির্বাচনী এলাকার যে কোন জায়গায় তা ঝুলিয়ে রাখতে পারবে। ভোট কেন্দ্রে ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার সিøপ বিতরণ করা নিষিদ্ধ। নির্বাচনী প্রচারের প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী পূর্ব সময়ে কোন প্রার্থী সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো বা কোন রেস্ট হউজে অবস্থান করতে পারবে না। পথ সভা বা ঘরোয়া সভা ব্যতীত কোন প্রকার জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। তবে পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলে ২৪ ঘণ্টা আগে তার স্থান ও সময় সম্পর্কে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। তবে যেখানে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে সেসব স্থানে পথসভা বা ঘরোয়া কোন সভা করা যাবে না। সড়ক ও জনগণের চলাচলের স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন নিষিদ্ধ। চেয়ারম্যান পদের কোন প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে তিনটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবে না। এছাড়া সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রার্থীরা তার নির্বাচনী এলাকায় ১টির বেশি ক্যাম্প করতে পারবে না। নির্বাচনী ক্যাম্পে কোন টেলিভিশন, ভিসিআর, ভিসিডি, ডিভিডি, ব্যবহার করতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারকালে যান্ত্রিক শোভাযাত্রা ও মিছিল নিষিদ্ধ। মশাল মিছিলও বের করা যাবে না। দলীয় প্রধান তার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে যাতায়াতের জন্য আকাশ যান ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আকাশ যান থেকে কোন প্রচার সামগ্রী বিতরণ করতে পারবে না। নির্বাচনের প্রচারে ভোটারদের আকর্ষণ সৃষ্টিতে গেট বা তোরণ নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। ৩৬ মিটারের অধিক স্থান নিয়ে প্যান্ডেল বা ক্যাম্প করা যাবে না। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন আলোকসজ্জাও করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারের প্রতীকের চিহ্নসম্বলিত শার্ট, জ্যাকেট, ফতুয়া ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী ক্যাম্পে কোন খাদ্য পানীয়ের পরিবেশন করা যাবে না। ব্যক্তি চরিত্র হনন করে কোন বক্তব্য দেয়া যাবে না। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। একের অধিক শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময়ের আগের বা পরে কোন প্রকার মাইকিং করা যাকে না। কমিশন জানিয়েছে নির্বাচন প্রচার থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন অনুযায়ী আচরণবিধি কোন বিধান লঙ্ঘন করলে তাকে ছয়মাসের কারাদ- বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ে দ-িত করা হবে। সিইসির সঙ্গে ওয়াকার্স পার্টির নেতাদের সাক্ষাত ॥ ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তারা এ আহ্বান জানান। বিকেলে দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউপি নির্বাচনে অনেক অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে সিইসিকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনেও অনিয়ম হয়েছে। তার পুনরাবৃত্তি যেন ইউপি নির্বাচনে না হয় সেজন্য সতর্ক করতেই সিইসি’র সঙ্গে দেখা করেছি। নির্বাচন কমিশনের অনেক ক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে না। ইউপি নির্বাচনে যেন তাদের ক্ষমতাটা প্রয়োগ সে বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছি। তিনি বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সিইসির কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে একটা পরিবর্তন আসতে পারে। রাজনীতিতে সে পরিবর্তনটা আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন বলেই কামনা করি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে ॥ এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমার নেয়ার নির্দেশ জারি করেছেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র প্রহণের নির্দেশ দেয়া হলো। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তা যথাযথ নিরাপত্তাসহকারে ওই দিনই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দেবেন। কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব সামশুল আলম এই চিঠিতে সই করেছেন। একইভাবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ছাড়াও উপজেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে বলে কমিশন জানিয়েছেন।
×