ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চক্রটি কমপক্ষে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ থেকে ;###;আটক বিদেশী পোল্যান্ডের নয়, জার্মানির

জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংখ্যা শতাধিক ॥ এটিএম কার্ড জালিয়াতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২ মার্চ ২০১৬

জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংখ্যা শতাধিক ॥ এটিএম কার্ড জালিয়াতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বিদেশী পোল্যান্ডের নয়, জার্মানির নাগরিক। তিনি প্রায় এক বছর ধরে পোল্যান্ডের নাগরিক পরিচয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বসবাস করে আসছিলেন। জালিয়াতির সঙ্গে অন্তত ৫০ ব্যক্তি ও সমপরিমাণ প্রতিষ্ঠান জড়িত। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা মোতাবেক অভিযান চলছে। ইতোমধ্যেই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাদের আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। প্রয়োজনীয় আলামত পাওয়ার পরেই তাদের গ্রেফতার করা হবে। মঙ্গলবার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার পরিমাণ অন্তত শতকোটি টাকা। চক্রটি বেশ কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নিয়েছে। তবে কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেনি। চক্রের সঙ্গে কতিপয় হুন্ডি ও হোটেল ব্যবসায়ী, পস মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িত। প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০-৫০ জন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃতরা দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। রিমান্ডে গ্রেফতারকৃতরা এমন দীর্ঘ তালিকা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক বনানী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, অন্তত ২১ জন গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট থেকে এটিএম কার্ড ক্লোন করে অন্তত ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। মামলা দায়েরের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এলে হৈচৈ শুরু হয়। ইস্টার্ন ব্যাংক মামলা দায়ের করার পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) একই থানায় একই ধরনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ব্যাংকটির এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করা হয়েছে। এরপর সেই তথ্য দিয়ে এটিএম কার্ড বানিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই মামলাটির সঙ্গে এটিএম বুথে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত পরে গ্রেফতারকৃত বিদেশী নাগরিকের ছবি দেয়া হয়। এছাড়া পল্লবী থানায় সিটি ব্যাংকের তরফ থেকে এমন অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ইউসিবিএল ছাড়াও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও সিটি ব্যাংকের ছয়টি বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে তথ্য চুরি করে একইভাবে কার্ড বানিয়ে প্রায় ২১ লাখ টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্কিমিং ডিভাইজটি অন্তত ১২শ’ এটিএম কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ৪০টি কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নিয়েছে চক্রটি। বাকি ১১শ’৬০টি কার্ড বানিয়ে টাকা তুলে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। মামলাগুলোর তদন্ত করার দায়িত্ব পেয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট গত ২১ ফেব্রুয়ারি জার্মানির নাগরিক পিওটর স্কেজেফান মাজুরেক (৫০), সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আলী মাকসুদ (৪৫), রেজাউল করিম শাহীন (৪০) ও রেফাত আহমেদ রনিকে (৪২) গ্রেফতার করে। তাদের ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় সোমবার তাদের আবার ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, শুধু এটিএম কার্ড নয়, প্রতারণার কবলে পড়েছে অনেক চেন সপও। চক্রটি গত এক বছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৬শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকেই অন্তত শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। পুরো জালিয়াতি চক্রটির সঙ্গে লন্ডন প্রবাসী পলাতক দুই বাংলাদেশী ছাড়াও অন্তত চারজন বিদেশী জড়িত। পলাতকদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। পলাতক বিদেশীরা রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিক। গ্রেফতারকৃত বিদেশী বিশ্বের ৪টি দেশে মোস্টওয়ান্টেড।
×