ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই সহোদরের ঘাতক ঢাকা থেকে গ্রেফতার ॥ হত্যার দায় স্বীকার

কুমিল্লায় আরও এক শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২ মার্চ ২০১৬

কুমিল্লায় আরও এক শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লায় মোঃ রিয়াদ হোসেন নামে আরও এক শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জেলার মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে। রিয়াদ মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরের দিশাবন্দ গ্রামের খোকন মিয়ার পুত্র। সে স্থানীয় দিশাবন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র। নিহত রিয়াদের কপালে, হাঁটুতে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই গ্রামের ফারুক (১২) ও নুরুল আলম (১১) নামে ২ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। তার মৃত্যুর কারণ জানা জায়নি। এদিকে কুমিল্লা জেলা ডিবি পুলিশ মহানগরীর ঢুলিপাড়া এলাকায় গত শনিবার সংঘটিত সহোদর ২ শিশু হত্যার আসামি নিহতদের সৎ ভাই ঢাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোঃ শফিউল ইসলাম ছোটনকে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সহোদর ২ শিশুর ঘাতক সৎ ভাই ছোটন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার মনোহরগঞ্জ বাজারে সোমবার সন্ধ্যায় মনোহরগঞ্জ বাজারে ৪টি লাউ বিক্রি করে রিয়াদ সে আর বাড়ি ফেরেনি। মঙ্গলবার সকালে মনোহরগঞ্জ বাজারের পেছনে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর বস্তাবন্দী অবস্থায় রিয়াদের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এদিকে শিশু রিয়াদের মৃত্যুর খবরে তার বাড়ি ও ঘটনাস্থলে শত শত লোক জড়ো হয়। নিহতের পিতা-মাতা, স্বজন ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানান। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজারের পূর্বপাশে রাজের গড় স্থানে ওই শিশুর লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ র‌্যাব-পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পিতার হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়। ঘটনাস্থল ঘুরে এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নিহতের পিতা খোকন মিয়া জানান, মনোহরগঞ্জ বাজারের পাশে তার বাড়ি। সোমবার বাজারে এসে সে রাতে বাড়ি না ফেরায় আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। পরদিন বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, কে বা কারা কি কারণে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী করে রেখেছে তা জানি না। ২ সহোদর শিশু হত্যার আসামি সৎভাই ছোটন গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর জবানবন্দী ॥ এদিকে শনিবার কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রসুলপুর (ঢুলিপাড়া) এলাকায় মেহেদী হাসান জয় ও মেজবাউল হক মনি নামে দুই শিশুর খুনের মামলার একমাত্র আসামি নিহতদের সৎভাই ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মোঃ আল সফিউল ইসলাম ছোটনকে জেলা ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশরাফ ভূঁইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই সহিদুল ইসলামসহ পুলিশের টিম মোবাইল ট্র্যাকিং করে সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ টুইন টাওয়ারের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার ভোরে কুমিল্লায় নিয়ে আসে। তাকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক ছোটন তার দুই সৎ ভাইকে বালিশচাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। ছোটন পুলিশকে আরও জানায়, তার পিতা আবুল কালাম প্রায় ১০ বছর পূর্বে তার মা রোকেয়া বেগমকে রেখে রেখা বেগম নামের আরো একজনকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে পিতার পরের এ সংসারে নিহত জয় ও মনির জন্মের পর থেকে পিতা আবুল কালাম এবং সৎ মা রেখা বেগম তাদের (ছোটন, তার মা ও বোনদের) প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে ও লেখাপড়ার খরচ কমিয়ে দেয়। ছোট বোনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। সর্বশেষ পৈত্রিক সম্পত্তি হতে তাদের বঞ্চিত করবে মর্মে জানতে পারে। পুঞ্জীভূত এসব ক্ষোভ থেকেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোটন তার দুই সৎ ভাই জয় ও মনিকে হত্যা করে আত্মগোপন করে। বিকেলে সে কুমিল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে বলে পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে। শিশু হোসেন গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে বলে দাবি ॥ এ ছাড়া জেলার লাকসাম উপজেলার ছোট চাঁনপুর (চুনাতি) গ্রামের একটি ডোবা থেকে রবিবার রাতে পুলিশ দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসেনের লাশ উদ্ধার করে সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় তার পিতা মোঃ মোস্তফা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লাকসাম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ মামলায় ওই গ্রামের এনায়েত উল্লাহর ছেলে রমজান আলী রাজুকে (১২) আটক করে। মঙ্গলবার প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আটক রাজু পুলিশকে জানিয়েছে, রাজু ও নিহত হোসেন ডাব চুরি করার জন্য নারিকেল গাছে উঠলে একপর্যায়ে হোসেন গাছ থেকে পড়ে মারা যায়। পরে তার লাশ সে ডোবায় ফেলে মোবাইলটি নিয়ে চলে যায়। পুলিশ নিহত হোসেনের মোবাইলটি উদ্ধার করেছে।
×