ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে সিনাই

পানি ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২ মার্চ ২০১৬

পানি ব্যবস্থাপনা

সিনাই উপদ্বীপ মিশরকে তথা আফ্রিকাকে এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে। যুগ যুগ ধরে এই ভ’খ-টি দুই বিশাল ভ’খন্ডের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে এসেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণেই মিশর সরকার সিনাইয়ের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো এর পানি সম্পদ ও পানি ব্যবস্থাপনা। সিনাই মরু অঞ্চল বিধায় ভ’গর্ভস্থ পানিই এর প্রদান উৎস। তবে নীল নদের পানি ও সিনাইয়ের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়। সেই ষাটের দশক থেকে পানির ট্যাংকে করে সুয়েজ খালের পানি সিনাই মরুর বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে চাষাবাদের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু ট্যাঙ্কার নয়, অনেক সময় খাল দিয়েও নেয়া হচ্ছে সুয়াজের পানি। নীল নদের পানি সিনাই অঞ্চলে নেয়ার পরিকল্পনা অনেক দীর্ঘদিনের। তাই বলে সিনাইয়ের ভ’গর্ভস্থ জলরাশিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ ব্যাহত হয়নি বা থেমে থাকেনি। ১৯৮০-এর দশকে সিনাইয়ের ভ’গর্ভের জলরাশিকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা পর্যালোচনায় পুরোদস্তুর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। একটি মার্কিন উদ্যোগ, অন্যটি ইউরোপীয় উদ্যোগ। এরপর ১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা দক্ষিণ সিনাইয়ে ভ’গর্ভস্থ পানি সম্পদের ওপর সমীক্ষা চালায়। নীল নদ ও সুয়েজের পানি ট্যাঙ্কারে কিংবা পাইপলাইনে বহন করে নেয়া, ভ’গর্ভস্ত পানির মওজুদ, আকস্মিক বন্যার কারণে ভ’পৃষ্ঠে সৃষ্ট পানির প্রবাহ কাজে লাগানো এবং লবণাক্ততা দূরীকরণ এসব দিক দিয়ে সিনাইয়ের অবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কারণ হলো একদিকে মিশরের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে তেমনি অন্যদিকে নীল অববাহিকায় ভ’-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়ছে। উপরে যেসব সমীক্ষার কথা বলা হলো সেগুলিতে পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভ’মধ্যসাগর উপক’লের সমভ’মি, উত্তর ও মধ্য সিনাইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রস্রবন অঞ্চল এবং দক্ষিণ সিনাইয়ে সুয়েজ উপসাগর বরাবর আল রাহা, আল মারখা ও আল কা সমভ’মির ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। সিনাইয়ে সেচ কাজের জন্য আগে ভ’গর্ভস্ত পানি ব্যবহারকে প্রথম বিকল্প হিসেবে ধরা হয়েছিল। কারণ ট্যাঙ্কে বা পাইপ লাইনে করে পানি নিয়ে আসা সময়ক্ষেপণকারী ও ব্যয়বহুল ব্যাপার ছিল। উত্তর সিনাইয়ের আল আরিশ রাফা এলাকার ভ’গর্ভস্থ রিজার্ভার উপক’ল বরাবর ৩০ কিলোমিটার লম্বা, ১৫-২০ কিলোমিটার চওড়া এবং ৮০-১০০ মিটার গভীর। ১৯৯২ সালে জাইকার এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছিল যে প্রতিদিন ৯০ হাজার ঘনমিটার হহারে পানি তোলা হলে রিচার্জ সেটের ওপর নির্ভর এর দ্বারা ২০ বছরের সেচ কাজের প্রয়োজন মেটানো যাবে। তবে অন্যান্য সমীক্ষায়ও যে জাইকার মতো একই অবিমত দেয়া হয়েছে তা নয়। সিনাইয়ের ভ’গর্ভস্ত রিজার্ভারগুলি উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ তল্লাট জুড়ে এস্কলটের সড়ক ও ধূলি ধূসর রাস্তাগুলির নেটওয়ার্কের নিচে অবস্থিত। এই নেটওয়ার্ক বিভিন্ন এলাকা ও ভ’গর্ভস্থ পানি উত্তোলন কেন্দ্র বা ক’পগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। মানুষের তৈরি এই ক’পগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে ভ’খন্ডের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। বীর আবু রুমিয়েল হলো সিনাই তথা গোটা মিশরের সর্বোচ্চ স্তরের পানির ক’প। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার ওপরে এবং ক্যাথরিন পর্বতশৃঙ্গের কাছাকাচি। ইদানিংকালেই কেবল ঐ স্থানটি পায়ে হেঁটে পৌঁছান যায়। সিনাইয়ের বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের পানি ব্যবস্থাপনার প্রধানতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো পাবলিক ওয়াটার কোম্পানির সাদা অথবা নীল রঙের ট্রাক যাকে করে পানি বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ট্রাকগুলি স্থায়ীভাবে বসবাসরত বেদুইন জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ করে থাকে। উপক’ল এলাকার কিছু কিছু বড় আকারের জনগোষ্ঠীর কাছে পাইপলাইনের সম্প্রসারিত নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে নীল নদের পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ২০০৮-২০১২ সালে ইউএসএইডের একটি প্রকল্পের অধীনে পূর্ব মধ্য সিনাইয়ে তিনটি লবণাক্ততা দূরীকরণ কেন্দ্র স্তাপনের মাধ্যমে জনগণকে সুপেয় পানি সরবরাহের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উপরন্তু ভ’পৃষ্ঠের পানি বা আকস্মিক বন্যার কারণে প্রাপ্ত জলরাশিকে স্থানীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো হচ্ছে। ১৯৬৬ সালে মিশরের ১৯৫২ বিপ্লবের চতুর্দশ বার্ষিকী উপলক্ষে সিনাইয়ের উন্নয়ন নামে একটি ডাকটিকিট বেরিয়েছিল। তাতে দেখানো হয়েছিল পানির লরীতে করে নীল নদের পানি সুয়েজ খালের ওপারে সিনাইয়ে নিয়ে উত্তর সিনাইকে আবাদী অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এলাকাটি ধীরে ধীরে সবুজ গাছপালায় ছেয়ে যাচ্ছে। সিনাইয়ে পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই রূপান্তরের প্রক্রিয়া আজও চলছে। সূত্র : আল আহরাম উইকলী
×