ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

ট্রাম্পের ব্যবসায় জীবন প্রহেলিকাময়

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২ মার্চ ২০১৬

ট্রাম্পের ব্যবসায় জীবন প্রহেলিকাময়

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যিনি প্রথম থেকেই প্রবল প্রতাপে আবির্ভূত এবং নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিতর্কিত, আলোচিত ও সমালোচিত তিনি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন তিনি এমন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন যে দেশটা মূলত দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। এমন এক দেশ চালানোর জন্য দরকার তার মতো সফল ব্যবসায়ী। বলাবাহুল্য এই ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে ব্যবসায় জগতের একজন অধীশ্বর হিসেবে পরিচিত। তবে নিজেকে সফল বলে দাবি করলেও তার সেই ব্যবসায় জগতটা প্রহেলিকাময়। তাঁর মালিকানাধীন বহুজাতিক ব্যবসাগোষ্ঠীর নাম দি ট্রাম্প অর্গানাইজেশন এলএলসি। এটি ম্যানহাটানে ট্রাম্প টাওয়ারে অবস্থিত। তার ব্যবসা মূলত সম্পত্তিনির্ভর। যদিও দাবি করা হয় যে বিভিন্ন দেশে তাঁর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে আবাসিক ভবন, হোটেল, রিসোর্ট, টাওয়ার, গলফ কোর্স ইত্যাদি তথাপি দেখা গেছে, তার ৯৩ শতাংশ সম্পদই আমেরিকার মাটিতে এবং তারও আবার ৮০ শতাংশ রিয়েল এস্টেটে নিয়োজিত। ট্রাম্পের ৪০ বছরের ব্যবসায়ী জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন ট্রাম্প টাওয়ারের মালিকানা। বাকি যে অর্জনগুলোর কথা দাবি করা হয় সেগুলোর বেশিরভাগই বিতর্কিত ও অস্বচ্ছ। ট্রাম্প নিজেও দাবি করে থাকেন তার ক্যারিয়ারে যত সাফল্য আছে তেমন সাফল্য আর কোন প্রেসিডেন্টের ক্যারিয়ারে নেই এবং সে কারণেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো যোগ্যতা তার আছে। তবে নিন্দুকরা বলে যে ট্রাম্প্র নিজেকে যতই ব্যবসাসফল বলে দাবি করুন না কেন তার বিত্ত ও ঐশ্বর্য উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এবং সেই ঐশ্বর্যের ওপর ভিত্তি করে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি নিজের ব্যবসায় সাম্রাজ্য নির্মাণ করেছেন। এটা ঠিক যে তার সম্পদের পরিমাণ কয়েক শ’ কোটি ডলার। তবে তার ব্যবসায়িক পারদর্শিতা মাঝারিমানের এবং বৃহত্তর সংগঠন চালানোর মতো সামর্থ্য বা ক্ষমতা তার নেই। সমালোচকরা বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ঐশ্বর্য করায়ত্ত করেছেন অনেক ক্ষেত্রে করদাতা কিংবা তাকে ঋণদানকারী ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের তার জন্য মাসুল দিতে হয়েছে। ফরবিস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী ট্রাম্পের নিট সম্পদ ১৯৮৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১শ’ কোটি থেকে বেড়ে ৪শ’ কোটি ডলার হয়েছে। চিত্তাকর্ষক সন্দেহ নেই। তবে ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটসের তুলনায় এটা কিছুই নয়। অনেকে এমনও বলেন যে, ট্রাম্পের সম্পদ ৩শ’ কোটি ডলারের বেশি হবে না। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের ব্যবসার যে সম্প্রসারণ ঘটেছিল তাতে ইন্ধন হিসেবে কাজ করেছিল ঋণ। ১৯৯০ এর দশকটা তার জন্য ছিল অবমাননাকর দশক। এ সময় তার ক্যাসিনো ব্যবসা হোঁচট খেয়ে চলে এবং দু’দুটো জমা প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়ে যায়। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে তার ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পর্কিত আরও দুই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে ঋণখেলাপি। এতে ট্রাম্পের সামগ্রিক ব্যবসায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। আজকের মূল্যে তার সে সময়কার ঋণের পরিমাণ হয়ত দাড়িয়েছিল ৬শ’ কোটি ডলার। তথাপি তিনি সুকৌশলে ব্যক্তিগত দেউলিয়াত্ব এড়াতে পেরেছিলেন। পরে সম্পত্তির দাম বাড়লে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তবে তার সেলিব্রেটির চূড়ান্ত পর্যায় আসে দি এপ্রেনটিস নামে এক টিভি শোতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয়ের কারণে। অনুষ্ঠানটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল এবং তুঙ্গে থাকার সময় এর দর্শকসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ। এ অনুষ্ঠানের বদৌলতে খ্যাতির সঙ্গে জুটেছিল অর্থ এবং সেই অর্থ তিনি ব্যবসায় খাটিয়েছিলেন। ২০০৪ সালে তার ছিল ১৩৬টি কোম্পানি। আজ তিনি ৪৮৭টি কোম্পানির সঙ্গে জড়িত। তবে তার ব্যবসার ব্যাপারটা ধোঁয়াটে। প্রকাশ্য তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি তিনি চালান না এবং বাহ্যত তার কোন হোল্ডিং কোম্পানিও নেই, সেখানে তার সম্পদ নিয়োজিত। তিনি তার সম্পদের নিরীক্ষাবিহীন এক পৃষ্ঠার একটা হিসাব প্রকাশ করে থাকেন। নির্বাচন কমিশনে তিনি তার এ্যাসেটের যে হিসাব দিয়েছেন তাতে তার সম্পদ ৫ কোটি ডলারের বেশি নয়। তার মানে তাতে তার সকল সম্পদ দেখানো হয়নি। ওই হিসাব অনুযায়ী ২০১৪ সালে তার আয় হয়েছিল ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ট্রাম্প তার সম্পত্তির ব্যবসায়কে বৈশ্বিক ফ্রান্ডে পরিণত করতে পেরেছেন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তার সম্পদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ আমেরিকার বাইরে এবং ৬৬ শতাংশ নিউইয়র্কে অর্জিত। আর ২২ শতাংশ সম্পদ অর্জিত হয়েছে টিভি তারকা হিসেবে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা সম্পত্তি থেকে। তার জীবনে ব্যর্থতার পাল্লাও কম ভারি নয়। ১৯৮৮ সালে ট্রাম্প বেশ জোরেশোরে এয়ারলাইন ব্যবসায় নেমেছিলেন। তার বহরে ছিল ১৭টি বোয়িং ৭২৭। এতে উন্নত সার্ভিসের চেয়ে সাজসজ্জার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছিল। তার এয়ারলাইন ব্যবসা কখনও লাভের মুখ দেখেনি। ঋণের কারণে তার এই কোম্পানির মালিকানার হাতবদল হয়ে যায়। ট্রাম্প ২০১৬ সালে বেশ ধুমধামের সঙ্গে ট্রাম্প ভোদকা চালু করেন। সেটাও শেষ পর্যন্ত বাজার পায়নি। তার দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। এ পর্যন্ত ৪ বার বিয়ে করেছেন। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল ট্রাম্পের একটি মর্টগেজ কোম্পানিÑ ট্রাম্প মর্টগেজের দেড় বছর যেতে না যেতেই সেটির লালবাতি জ্বলে ওঠে। আর্থিক সম্পদের হয়ত অভাব নেই কিন্তু জীবনে প্রচুর ব্যর্থতার গ্লানি আছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, হেয়ালী ও অস্বচ্ছতাও আছে। এমন একজন মানুষকে কি আমেরিকানরা হোয়াইট হাউসে দেখতে চাইবেন। সূত্র : টাইম
×