ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অতশী রহমান

নতুন যুগে ফিফা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২ মার্চ ২০১৬

নতুন যুগে ফিফা

কলঙ্ক মোচনের লক্ষ্যে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা)। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিফায় সেপ ব্লাটার যুগের অবসান হয়েছে। ওইদিন সুুইজারল্যান্ডের জুরিখে বিশেষ কংগ্রেসে ভোটাভুটি হয়। বিশেষ ভোটে ফিফার নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উয়েফার মহাসচিব সুইজারল্যান্ডের জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো। সর্বোচ্চ ১১৫ ভোট পেয়ে সভাপতি হয়েছেন ইনফ্যান্টিনো। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাহরাইন রাজপরিবারের সদস্য এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি শেক সালমান বিন ইব্রাহিম আল-খলিফা পেয়েছেন ৮৮ ভোট। পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও ভোটাভুটির আগ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী টোকিও সেক্সওয়েল। ফলে চারজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তবে আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল মূল লড়াই হবে মূলত শেখ সালমান ও ইনফ্যান্টিনোর মধ্যে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। প্রথম দফা ভোটাভুটিতে ইনফ্যান্টিনো ৮৮, শেখ সালমান ৮৫, জর্ডানের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স আলী বিন আল-হুসেইন ২৭ ও ফিফার সাবেক উপমহাসচিব, ফ্রান্সের কূটনীতিবিদ জেরোম শ্যাম্পেন পান ৭ ভোট। ফিফার ২০৯ সদস্যের মধ্যে ২০৭টি দেশের প্রতিনিধিরা গোপন ভোট প্রয়োগ করেন। সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোট দিতে পারেনি কুয়েত ও ইন্দোনেশিয়া। প্রথম রাউন্ডের ভোটে যদি কোন প্রার্থী দুই-তৃতীয়াংশ বা ১৩৮ ভোট পায়, তবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কালকের নির্বাচনে কোন প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটগ্রহণ হয়। এখানে এগিয়ে থেকে প্রথমবারের মতো ফিফার মসনদে বসেছেন ৪৫ বছর বয়সী ইনফ্যান্টিনো। বিশেষ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিফায় ১৮ বছরের রাজত্বের অবসান হয়েছে ব্লাটারের। সুইস এই ব্যক্তি এবং তাদের অনুসারীরাই বিশেষ এই নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করেছিলেন। অথচ এখানে ব্লাটার কিংবা মিশেল প্লাতিনি কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি নিষেধাজ্ঞার কারণে। ব্লাটারের গড়া রাজ্যসভার আসনগুলোতে এখন বসছেন সম্পূর্ণই ভিন্ন মানুষেরা। নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটে গেল ব্লাটার সাম্রাজ্যের পতন। ১৯৯৮ থেকে টানা ফিফা সভাপতি হিসেবে আসীন ছিলেন তিনি। সাম্রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি সভাপতি হিসেবে এতদিন যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিলেন সেটাও হারাতে চলেছেন ব্লাটার। সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্রই ফিফার এ্যাপার্টমেন্ট ছাড়তে হবে এই সুইসকে। আর নবনির্বাচিত সভাপতি ইনফ্যান্টিনো বলেছেন, তার প্রথম কাজই হবে ফিফার হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনা। সভাপতি হয়ে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই সংগঠনের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সুইস বংশোদ্ভূত জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো বলেন, ‘ফিফার একজন গর্বিত সভাপতি হতে চাই। ফুটবলের জন্য ফিফা যা করবে তাতে আপনিও গর্বিত অনুভব করবেন।’ ইনফ্যান্টিনোর বিশ্বাস, ফিফা আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফুটবল বিভক্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। একটা নির্বাচন হয়েছে কোন যুদ্ধ নয়।’ এ সময় তিনি ফিফার পরবর্তী মেয়াদের সভাপতি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন, ‘২০২০ হতে এখনও চার বছর বাকি। আমি জানি না তখনও ফিফার সভাপতি থাকতে পারবো কি না। তবে আমার দৃঢ়বিশ্বাস আছে।’ ১৮ বছর পর ফিফার সভাপতির পদ হারিয়েছেন ব্লাটার। তাও আবার কলঙ্কজনকভাবেই ফুটবলের সর্বোচ্চ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তবে তার উত্তরসূরি ইনফ্যান্টিনোকে অভিনন্দন জানাতে মোটেই ভুল করেননি ৭৯ বছর বয়সী এই তুখোড় সংগঠক। এ বিষয়ে ব্লাটার বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনোকে আমার হৃদয় থেকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। তার অভিজ্ঞতা, কূটনৈতিক জ্ঞান এবং কৌশলগত দক্ষতায় আমার কার্যক্রমকে চালিয়ে নেয়ার মতো সবধরনের যোগ্যতাই তার রয়েছে। তার নেতৃত্বে ফিফা অত্যন্ত স্থিতিশীলভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলেই আমি মনে করি।’ উত্তরসূরিকে অবশ্য সতর্কও করে দিয়েছেন ব্লাটারম, ‘আমি তোমাকে (ইনফ্যান্টিনো) অভিনন্দন জানাই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, এই পজিশনটা মোটেও সহজ নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অলৌকিক কিছু হতেই পারে। গত ১৮ বছরে আমার এমন প্রত্যাশা ছিল, যেখানে আমি ৪১ বছর ধরে দায়িত্বে ছিলাম। ঘটনাক্রমে মতামত বা উপদেশ নিতে হলে দ্বিধা করা যাবে না। তবে এখন শান্ত থাকতে হবে। যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে তা প্রয়োগের জন্য দু’মাস সময় আছে।’ ইনফ্যান্টিনোকে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন ব্লাটার, ‘নিজেকে ভালভাবে তৈরি কর। কিন্তু, সব সময়ই সজাগ থাকতে হবে। সবাই তোমাকে সমর্থন দেবে এবং ভাল ভাল কথা বলবে। কারণ তারা জানে তুমি সভাপতি।
×