ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

বিশ্বকাপে ভারতই ফেবারিট

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২ মার্চ ২০১৬

বিশ্বকাপে ভারতই ফেবারিট

টি২০ বিশ্বকাপে এবার ভারত হট ফেবারিট। কেবল ঘরের মাটিতে আয়োজন বলে নয়, মহেন্দ্র সিং ধোনির দল ছোট্ট ফরমেটে দারুণ করছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে অস্ট্রেলিয়াকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার পর স্বভূমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতে টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসে ভারত। ব্যাটিং-বোলিংয়ে রয়েছে দারুণ ভারসাম্য। ব্যাট হাতে দৃশ্যপট বদলে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, ধোনি। আইপিএলে আলো ছড়িয়ে দীর্ঘদিন পর ফেরা আশিষ নেহরা দুরন্ত বল করছেন। পেস আক্রমণে তার সঙ্গে আলো ছড়াচ্ছেন দুই নবীন জাসপ্রিত বুমরা ও হারদিক পান্ডিয়া। রবিচন্দ্রন আশ্বিন ও রবীন্দ জাদেজাকে নিয়ে স্পিন আক্রমণও বিশ্বসেরা। জাদেজা, পান্ডিয়া, যুবরাজ, আশ্বিন অলরাউন্ডার সত্তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। সঙ্গে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনির নেতৃত্ব। বিশ্লেষকদের মতে, ঘরের মাটিতে এবার ‘হট ফেবারিট’ ভারত। বিষয়টা স্বীকার করছেন অধিনায়ক ধোনিও। ভারত সেনাপতি বলেন ‘টি২০ এমন ধরনের ক্রিকেট যেখানে প্রকৃত ফেবারিট বলে কিছু নেই। তবে সম্প্রতি আমরা ভাল খেলছি। অভিজ্ঞ ও তারুণ্য মিলিয়ে দলে চমৎকার ভারসাম্য ফিরে এসেছে। যা আমাকে আশাবাদী করছে। শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আমার এই দলের রয়েছে।’ দলটির ব্যাটিং যে বিশ্বসেরা এশিয়া কাপের আগে দুটি বড় সিরিজেই সেটি দেখা গেছে। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের কারণে দুই সিরিজে ছয় টি২০তে দলের সব ব্যাটসম্যান ও বোলাররা সেভাবে নিজেদের প্রমাণের সুযোগই পাননি। টপ-অর্ডার অসম্ভব ভাল করায় ধোনি নিজে ও দীর্ঘদিন পর ফেরা যুবরাজ সিং অস্ট্রেলিয়া সফর ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে খুব একটা সুযোগ পাননি। এ সম্পর্কে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বলেন, ‘এটা ঠিক দলের সবাই ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়নি। কিন্তু আমাদের দুর্ধর্ষ এই লাইনআপের বিপক্ষে আপনাকে (প্রতিপক্ষ বোলিং) সমস্যার মুখোমুখি হতেই হবে। ৬, ৭ ও ৮ নম্বরে ব্যাটিং করা খেলোয়াড়দের বড় শট খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ টি২০তে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় ব্যাটসম্যান কত রান করল সেটা কোন বিষয় নয়। তবে আপনি যদি ৩-৪টি বল খেলারও সুযোগ পান এবং ১০-১৫ রান করতে পারেন, সেটা সত্যিকার অর্থেই বড় ব্যাপার।’ বিশ্বকাপে নিজ মাঠের চেনাজানা কন্ডিশনও তাদের জন্য বড় ব্যাপার হবে বলে স্বীকার করে ধোনি আরও বলেন ‘সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে (ওয়ানডে ও টি২০ বোঝাতে) আমরা সব সময়ই ফেবারিট। বিশ্বকাপও হতে যাচ্ছে ভারতের মাটিতে। দলে টপ-ক্লাস স্পিনাররা খেলবে যা আমাদের জন্য সহায়ক হবে, এখানে আইপিএল খেলাটাও কাজে আসবে। আইপিএলের আট আসরের সাতটিই এখানে হয়েছে এবং তার সব কিছুই হিসেবে আসবে। ছেলেরা দীর্ঘ অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে পারবে।’ টি২০তে প্রতিপক্ষের বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের শুরুতেই ফিরিয়ে দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন ভারতীয় অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত ভার্সনে সব সময়ই দুটি দলের মধ্যে পার্থক্য খুব কম থাকে। আপনাকে প্রতিপক্ষের বিগ-হিটারদে ব্যাটসম্যানকে শুরুতেই ফিরিয়ে দিতে হবে। একইভাবে নকআউট পর্বে অবশ্যই আপনাকে আপনার সেরাটা খেলতে হবে। নকআউট- খারাপ দিন বলে কিছু থাকতে পারবে না!’ ডেথ-ওভারের বোলিংটাকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ধোনি। ডেথ-ওভারে ইয়র্কার দিতে পারা জাসপ্রিত বুমরাহর মতো পেসার দারুণ ভূমিকা পালন করবে আশা করছেন ধোনি। পাশাপাশি অশ্বিনের মতো বোলারকেও শুরুতেই আক্রমণে আনার কথা বলেন তিনি। তবে ৫০ ওভারের চেয়ে ২০ ওভারে ডেথ-ওভারের বোলিং বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেন স্বাগতিক অধিনায়ক। টি২০ বিশ্বকাপের আগে দলের সেরা বোলারদের প্রায় সবাই বোলিংয়ের সুযোগ পাওয়ায় খুশি ভারতীয় অধিনায়ক, ‘ সব মিলিয়ে আমাদের সব বোলারই বোলিং করতে পেরেছে, যা খুবই ভাল। স্পিনার অথবা ফার্স্ট বোলার, উভয় বোলারই রান কম দিয়েছে। অর্থাৎ চাপের মধ্যেও তারা ভাল করেছে, এটা খুবই ভাল দিক। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ভাল অবস্থায় আছি।’ কিছুদিন আগেও যে ধোনির পারফর্মেন্স ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এই দুটি সিরিজে সেই তিনিও ছিলেন উজ্জ্বল। ব্যাটিং খুব একটা করতে হয়নি। উইকেটের পেছনে চমৎকার করেছেন ভারতের দু’দুটি বিশ্বজয়ের (২০০৭ টি২০ ও ২০১১ ওয়ানডে) কা-ারি। ৮ মার্চ শুরু হওয়া ষষ্ঠ টি২০ বিশ্বকাপে স্বাগতিক ভারতের প্রথম ম্যাচ ১৫ মার্চ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ২৭ দিনব্যাপী এ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ভারতের ৮ ভেন্যুতে, শেষ হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ৩ এপ্রিল ফাইনালের মধ্য দিয়ে। এবার প্রাইজমানি ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতবারের মতোই এবার পুরুষদের টি২০ বিশ্বকাপে দুই স্তর থাকছে- প্রথম রাউন্ড ও সুপার টেন রাউন্ড। প্রথম রাউন্ডে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আট দল মোকাবেলা করবে এবং উভয় গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল সুপার টেনের দুই গ্রুপে জায়গা করে নেবে। বাংলাদেশ ‘এ’ গ্রুপে হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নবাগত ওমানের বিপক্ষে খেলবে। ৯ মার্চ বাংলাদেশ দল নিজেদের প্রথম ম্যাচে হল্যান্ডের মুখোমুখি হবে। ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচগুলো ধর্মশালায় এবং ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচগুলো নাগপুরে অনুষ্ঠিত হবে। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়েকে প্রাথমিক রাউন্ড খেলতে হবে। ‘এ’ গ্রুপে শীর্ষস্থান দখল করতে পারলে সুপার টেন নিশ্চিত হবে। তখন সুপার টেনের গ্রুপ-২ এ বাংলাদেশের স্থান হবে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। প্রাথমিক রাউন্ডে বাংলাদেশ খেলবে ৯ মার্চ হল্যান্ড, ১১ মার্চ আয়ারল্যান্ড ও ১৩ মার্চ ওমানের বিপক্ষে। গতবারের আয়োজক বাংলাদেশ প্রাথমিক রাউন্ডে হংকংয়ের কাছে হেরে গেলেও শেষ পর্যন্ত সুপার টেনে উঠতে পেরেছিল। তবে সুপার টেনে উঠে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি স্বাগতিকরা। ৮ মার্চ উদ্বোধনী ম্যাচে নাগপুরে মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের দু’দল জিম্বাবুইয়ে-হংকং এবং একই দিন সন্ধ্যায় স্কটল্যান্ড-আফগানিস্ত খেলবে। ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষ দল সুপার টেনের গ্রুপ-১ এ যোগ দেবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে। আইসিসির টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থাকা দলগুলো সরাসরি সুপার টেন পর্বে খেলবে। সেখানে আছে পাকিস্তান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। টি২০ বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো হচ্ছেÑ কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, ধর্মশালা, নাগপুর, মোহালি, মুম্বাই ও নয়াদিল্লী। সবমিলিয়ে পুরুষদের প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত হবে ৩৫ ম্যাচ। সুপার টেনেরপ প্রথম ম্যাচে ১৫ মার্চ ভারত-নিউজিল্যান্ড নয়াদিল্লীতে মুখোমুখি হবে। ৩ এপ্রিল ফাইনালের জন্য থাকছে একটি রিজার্ভ ডে।
×